সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংগঠনটি এই আইনের কঠোর বিধিমালা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ সেপ্টেম্বর) অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্বর্তী আঞ্চলিক পরিচালক নাদিয়া রহমান এ আহ্বান জানান।
অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টকে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করে ফেলা উচিত হবে না। কারণ এটি মোটাদাগে নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিলিপি এবং এটি একসময় বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গোপনীয়তা ও স্বাধীনতা খর্ব করতে ব্যবহার করা হয়েছে।
নাদিয়া রহমান বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের অনেক বিধিই আইনি বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা, সমানুপাতিকতা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এবং একই সঙ্গে এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে বেমানান।
তিনি বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি খসড়া সিএসএকে আরও এগিয়ে নেওয়ার আগে তা উল্লেখযোগ্যভাবে সংশোধন করতে এবং এটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে আহ্বান জানায়।
গত ২৮ আগস্ট কয়েকটি ধারায় বিশেষ পরিবর্তন এনে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ২১ ধারার সাজা আরও কমানোর পাশাপাশি কয়েকটি ধারায় বিশেষ পরিবর্তন এনে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা তাতে মদদ দেন, তাহলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা তিন কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
এর আগে গত ৭ আগস্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ পরিবর্তনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
এরপর আইনটি ‘ভেটিং’ তথা যাচাই ও মতামতের জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে যাচাই ও মতামতের পর এটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
এর আগে গত ৭ আগস্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইনে প্রতিস্থাপিত করায় প্রতিক্রিয়া জানায় অ্যামনেস্টি।
সংস্থাটি আইন বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিল, ক্ষমতাসীন দল ও এর সহযোগীরা কঠোর এই আইনকে ভিন্নমত দমন এবং অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছিল।
প্রতিক্রিয়ায় অ্যামনেস্টি বলেছিল, বাংলাদেশ সরকারকে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে যেন ওই আইনের দমনমূলক বৈশিষ্ট্যগুলো ফিরিয়ে আনা না হয়।
নতুন আইনটি পাস হওয়ার আগে সব অংশীদার যেন প্রস্তাবিত এই আইন খুঁটিয়ে দেখে এবং এটা নিয়ে মতামত প্রদানের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়। এর বিধানগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সে আহ্বান জানিয়েছিল সংস্থাটি।
কেবল মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারচর্চার কারণে যাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় আনা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে মুক্তি প্রদান এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
মন্তব্য করুন