পরমাণু শক্তি কমিশন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ, নিউক্লীয় স্থাপনা তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, তথ্যের গোপনীয়তা, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদ তৃতীয় গ্রেড থেকে চতুর্থ গ্রেড অবনমন বন্ধ, গবেষণার ব্যয় বৃদ্ধি করার দাবিতে আন্দোলন করছে পরমাণু শক্তি কমিশনের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ সব-সেক্টরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
কিন্তু এই আন্দোলনের ৬মাস পার হলেও নজর নেই সরকারের। দাবি পূরণে মন্ত্রণালয়ে দুইবার স্মারকলিপি দিলেও সুখবর মেলেনি। উল্টো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনভাতা বন্ধ করা হয়েছিল। ৫২ বছরের ইতিহাসে এমন অমর্যাদাকর পরিস্থিতিতে পরেনি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আন্দোলরতরা। তাই দাবি আদায়ে নতুন করে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচির কথা বলছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, কমিশনের শীর্ষ পদগুলো শূন্য রেখে কমিশনকে দুর্বল করে মন্ত্রণালয়ের আজ্ঞাবহ একটি নতজানু প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নিলেও সে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আমলাদের কর্তৃত্ববাদী আচরণ ও কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ দিন দিন বেড়েই চলেছে; যা কমিশনের স্বায়ত্তশাসনকে, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং কমিশনের কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা, মর্যাদা ও মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে কমিশনের গবেষণা কর্মকাণ্ড ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে কখনোই গবেষাণার ভালো ফলাফল হবে না।
জানা গেছে, পরমাণু শক্তি কমিশনের আওতায় ৪০টি প্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন গবেষণা ও সেবা প্রতিষ্ঠান আছে। এই কার্যক্রম পরিচালনায় যৌক্তিক বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবিতে জুলাই মাস থেকে নতুন করে আন্দোলনের বেগবান করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি বিজ্ঞানী সংঘ, পরমাণু শক্তি কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতারা।
১১ দফা দাবিগুলো- কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শূন্য পদে দ্রুত স্থায়ী নিয়োগ দিয়ে পূর্ণ কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশনের স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ববাদী আচরণ বন্ধ করতে হবে। দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের পূর্বানুমতি এবং মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার কমিশনে ফিরিয়ে দিতে হবে। কমিশনের নিউক্লীয় তথ্যের সুরক্ষা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে, কমিশনকে আইবিএএস সিস্টেমের বাইরে রেখে বাপশক আইন ২০১৭-এর ধারা ২০(১) ও ২০(২) অনুযায়ী কমিশনের তহবিল তফসিলি ব্যাংকে জমা ও বিধি অনুসারে ব্যয় নির্বাহের এখতিয়ার বলবৎ রাখতে হবে। উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং অন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে জিও প্রদানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। এ ছাড়া অপ্রাসঙ্গিক তথ্য চেয়ে হয়রানি এবং (আইডিএসডিপি)-তে অপ্রয়োজনে অন্তর্ভুক্তির বাধ্যবাধকতা বন্ধ করতে হবে। বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের অবনমনকৃত সব পদ নির্ধারিত গ্রেডে উন্নীত করে বৈষম্য নিরসন করতে হবে। বাপশক চাকুরীবিধিমালা ১৯৮৫ এর ১৮(২) অনুযায়ী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের ন্যায় কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা/সমপর্যায়ের বিজ্ঞানীদের গ্রেড-২, গ্রেড-১ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। মালিক সংস্থা হিসেবে কমিশনকে বাদ দিয়ে এনপিসিবিএল এবং পিডিবির মধ্যে পিপিএ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। সব অস্থায়ী পদ স্থায়ীকরণ, নতুন পদ সৃজন, গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত কার্যক্রমে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ বন্ধ করে গবেষণামুখী ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কমিশনের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য সরকারী চাকরিজীবীদের ন্যায় গৃহ নির্মাণ/ফ্ল্যাট ক্রয় ঋণ, রেশন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ঋণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন সুবিধাদি চালু করতে হবে। ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদমানক্রম উন্নীতকরণ এবং বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পদমানক্রম নির্ধারণ করতে হবে।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি বিজ্ঞানী সংঘের সভাপতি ড. এএসএম সাইফুল্লাহ কালবেলাকে বলেন, আন্দোলন করার কারণে গত রমজানে আইবিএএস সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় মন্ত্রণালয় কমিশনের অনুকূলে অর্থছাড় বন্ধ করে দেয়। ফলে কমিশনের ২৫০০ কর্মচারী ঈদের আগে বেতন ভাতা পায়নি। বর্তমানে সারাদেশে আমাদের প্রায় ৪০টি প্রতিষ্ঠান আছে সবাই একযোগে আন্দোলন করেছে। গবেষণার জন্য যে টাকা বরাদ্দ থাকে তা চাহিদার তুলনায় সামান্য। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করলে এতে সরকারের কোনো নজর নেই।
পরমাণু শক্তি কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল আরেফিন কালবেলাকে বলেন, আমরা পরমাণু শক্তি কমিশনকে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে চাই। যাতে বিজ্ঞানীদের গবেষণার কাজে যেন কোনো বাধা না আসে। কিন্তু অন্য প্রতিষ্ঠানের মতোই এই প্রতিষ্ঠাকে নিজেদের মতো নিয়ন্ত্রণ করতে চায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ১১ দফা দাবিসহ যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি এবং মন্ত্রণালয় স্মারকলিপি দিয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো আশানুরূপ বক্তব্য পাইনি। আন্দোলন বেগবান করতে নতুন করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এই বিষয়ে কথা বলতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনকে ফোন দিলেও ধরেননি।
মন্তব্য করুন