কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আত্মহত্যার ‘নিরপরাধীকরণ’ আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক

ছবি : সৌজন্য
ছবি : সৌজন্য

কোন ব্যক্তির আত্মহত্যার চেষ্টা এবং এর সাথে সম্পর্কিত যে কোন কাজ দেশের আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এই অপরাধের শাস্তি কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। পেনাল কোড ১৮৬০ এর ধারা ৩০৯ অনুযায়ী বাংলাদেশে আত্মহত্যাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আত্মহত্যার চেষ্টাকারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার অধিকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার রয়েছে।

এরকম আইনের ফলে মানুষজন আইনগত সমস্যা এড়াতে আত্মহত্যা প্রবণতায় চিকিৎসা ও পরামর্শ নেয়া থেকে বিরত থাকে, এমনকি আত্মহত্যা প্রচেষ্টায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে গেলেও প্রকৃত তথ্য গোপন করে।

আত্মহত্যার নিরপরাধীকরণ (decriminalization) এ সংক্রান্ত কুসংস্কার ও ভয় কমাতে, আত্মহত্যা প্রবণতায় সঠিক চিকিৎসা নেয়ার হার বাড়াতে এবং আইনি হয়রানি এড়াতে সাহায্য করতে পারে।

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে আত্মহত্যা ও আত্মহত্যা-প্রবণতার নানা দিক নিয়ে গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত ভিত্তিক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটি ইংরেজি ও বাংলা – দুই ভাষাতেই প্রকাশিত হয়েছে। Suicide in Bangladesh - Epidemiology, Risk Factors, and Prevention শীর্ষক মূল ইংরেজি বইটির প্রকাশক আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা Springer. ‘আত্মহত্যা বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক অনূদিত বইটি প্রকাশ করেছে ‘বাঙ্গালা গবেষণা’।

অনুষ্ঠানে বইটির অন্যতম সম্পাদক এনাম মেডিক্যাল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এস এম ইয়াসির আরাফাত বলেন, বাংলাদেশে আত্মহত্যা একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে, যতটুকু মনোযোগ পাওয়ার কথা ঠিক সেরকম গুরুত্ব পায় নি। দেশে জাতীয়ভাবে আত্মহত্যা জরীপের কোনও ব্যবস্থা নেই বলে আত্মহত্যার সঠিক হার এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং গবেষণায় আত্মহত্যার ভিন্ন ভিন্ন হার পাওয়া যায়। প্রাপ্ত গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, আত্মহত্যার অধিকাংশ ঘটনা ঘটে তরুণদের, বিশেষত ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে; আত্মহত্যায় পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি মারা যায় এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি ছাত্র এবং গৃহিণীদের মধ্যে বেশি। জীবনের বিশেষ কোন ঘটনা, মানসিক রোগ, বেকারত্ব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, যৌন নির্যাতন, দাম্পত্য কলহ এবং পারিবারিক বৈষম্য আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ায়। আত্মহত্যা প্রতিরোধে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ কারণ আত্মহত্যার পেছনে যেসব ঘটনা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়, তার অধিকাংশই পারিবারিক দ্বন্দ্বের সাথে সম্পর্কিত।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট-এর সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মুনতাসীর মারুফ। বক্তব্যে তিনি জানান, বাংলাদেশে ডা. এস এম ইয়াসির আরাফাত ও তার গবেষক দল কর্তৃক পরিচালিত কেইস-কন্ট্রোল পদ্ধতির মনস্তাত্ত্বিক ময়নাতদন্তভিত্তিক একমাত্র গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যে, দেশে আত্মহত্যায় মৃত্যুবরণকারীদের ৬১% ক্ষেত্রে অন্তত একটি মানসিক রোগ ছিল। তাদের মধ্যে, সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বিষণ্ণতা রোগ (৪৪%)। এছাড়া ছিল ব্যক্তিত্বের রোগ, অ্যামফিটামিন (ইয়াবা) ব্যবহার জনিত রোগ, তীব্র মানসিক চাপ জনিত রোগ, অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার এবং সিজোফ্রেনিয়া। মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে জীবনে এমন ঘটনা ছিল ৯১ ভাগ আত্মহত্যাকারীর। উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে ছিল - শিক্ষাগত ব্যর্থতা, পারিবারিক কলহ, স্বামী/স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য, বাগদান ভেঙে যাওয়া, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক, স্বামী/স্ত্রীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক, বড় ঋণের বোঝা, যৌন নির্যাতন, বড় শারীরিক অসুস্থতা, বিবাহ বিচ্ছেদ, ব্যবসায়িক ব্যর্থতা, বাল্য বিবাহ প্রভৃতি।

পৃষ্ঠা – ২: প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রখ্যাত মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট-এর প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, অনেক দেশে আত্মহত্যার নিরপরাধীকরণকে এর প্রতিরোধ কৌশলের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বর্তমানে, বাংলাদেশের গবেষকরাও আত্মহত্যার নিরপরাধীকরণের বিষয়টি নানাভাবে উত্থাপন করছেন। আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। নিরপরাধীকরণের মাধ্যমে আইনি বিধিনিষেধ ও সামাজিক নিন্দার ভয় কমিয়ে এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধি করে আত্মহত্যার ব্যাপারে জনসাধারণের মনোভাব পরিবর্তন করা যেতে পারে। পাশাপাশি বাংলাদেশে আত্মহত্যা প্রতিরোধ কার্যক্রমকে আরো জোরদার করার জন্য তথ্যবহুল গবেষণা, গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, ভুক্তভোগীর জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা, আত্মহত্যার কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার তৈরি, সচেতনতা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা, আত্মহত্যার জন্য ব্যবহৃত সামগ্রীগুলোর সহজলভ্যতা কমানো, জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ কৌশল প্রণয়ন, এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ব্যাপক ও সমন্বিত প্রচেষ্টা সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার, উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মহত্যা প্রতিরোধ ক্লিনিক-এর সমন্বয়ক অধ্যাপক মোঃ মহসিন আলী শাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ কামরুজ্জামান মজুমদার, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সরোয়ার হোসেন প্রমূখ। এছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্ত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন বইয়ের আরেক সম্পাদক ও ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন’-এর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মুরাদ এম খান, ভারতের ডাঃ সুজিতা কুমার কর, নেপালের ডাঃ পবন শর্মা, ইংল্যান্ডের ডাঃ রাসেল কবির, ইন্দোনেশিয়ার ডাঃ মারথেওনিস প্রমূখ।

‘আত্মহত্যা বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক বই সম্পর্কে তথ্য

সম্পাদক- এস এম ইয়াসির আরাফাত, মুরাদ এম খান, অনুবাদক- এস এম ইয়াসির আরাফাত, মুনতাসীর মারুফ, তনিমা তাসনিম মৌলী। প্রকাশক- বাঙ্গালা গবেষণা, প্রকাশকাল- ২০২৩, পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৭৮, মূল্য ৪৫০ টাকা,

প্রাপ্তিস্থান বাঙ্গালা গবেষণা ফেইসবুক পেইজ, 01716127010, 01755518791. এছাড়া পাওয়া যাবে রকমারী, পাঠক সমাবেশ, বাতিঘর, সন্ধিপাঠ (আজিজ সুপার মার্কেট, কনকর্ড এম্পারিয়াম ঢাকা, রাজশাহী সিলেট চিটাগাং)

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তারের পর এবার চুরি হলো সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট

‘এবার আমাদের পালা’ স্বরূপ আচরণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে : টিআইবি

ভূমি অধিগ্রহণে আটকে আছে ইউলুপ, ইউটার্নে মরছে মানুষ!

কনে দেখতে যাওয়ার পথে নৌকাডুবি : নিখোঁজ দুজনের মরদেহ উদ্ধার

থাইল্যান্ডের ক্লাবে আবার ভাইরাল ‘কাঁচা বাদাম গার্ল’ অঞ্জলি

চাকসুতে সমকামিতা সমর্থক ও মাদকাসক্তদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি

ঠাকুরগাঁওয়ের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১০ শয্যার এইচডিইউ উদ্বোধন

এবার তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেপ্তার

রাকসুতে প্রথম দিনে ৫ জনের মনোনয়ন সংগ্রহ 

১০

ফিলিস্তিনিদের ৩০০০ জলপাই গাছ উপড়ে ফেলল ইসরায়েলি বাহিনী

১১

দেশে ১ কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে : টুকু

১২

ভারতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা ১৪ দিনের জেল হেফাজতে

১৩

বিয়ের আসরেই ১৫ লাখ টাকা খোয়ালেন বর

১৪

ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে লাগবে কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা

১৫

ইউল্যাবে অনুষ্ঠিত হলো বৃহত্তম মার্কেটিং সামিট 

১৬

থানার ব্যারাকে ধর্ষণের শিকার সেই নারী সতীনের সংসার করতে চান

১৭

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ইসহাক দারের সাক্ষাতে রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি : ডা. জাহিদ

১৮

‘পরিবেশ সংরক্ষণ করেই মাছ উৎপাদন করতে হবে’

১৯

সমাজের বরণীয়দের সব সময় স্মরণে রাখতে হবে : অপর্ণা রায়

২০
X