মালগুলো সকালেই নেমেছিল। রাখা হয়েছিল রানওয়েতেই। বন্ধের দিন থাকায় অর্ধেক দিন কার্যক্রম চলায় সেগুলো বের করতে পারিনি। চোখের সামনে পঞ্চাশ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেল। বিকেল সারে ৫টার দিকে আট নাম্বার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই আক্ষেপ করছিলেন সিএন্ডএফ এজেন্ট আব্দুর রহিম।
দেশের বাইরে থেকে ইলেন্ট্রনিক্স পণ্যসামগ্রী আমদানি করে দেশের নানা স্থানে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, আজ সকালের ফ্লাইটেই মালগুলো আনা হয়েছিল। সেগুলো নামিয়ে রাখা হয়েছিল রানওয়েতেই। বন্ধের দিন হওয়ায় সেগুলো আর বের করা গেল না। সব পুড়ে ছাই। পঞ্চাশ কোটি টাকার মালামাল ছিল।
ফায়ার সার্ভিস আসতে দেরি করেছে এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আগুন লাগার পরে ফায়ার সার্ভিস আসতে অনেক লেইট করেছে। সময় মতো আসলে এত ক্ষতি হতো না। তিনি জানান, প্রথমে আগুনটা লেগেছিল কুরিয়ার সার্ভিসের। এরপর ধীরে ধীরে আগুন ছড়ায়।
দুপুরেই আড়াই টন আমদানি করা গার্মেন্টস পণ্য নামিয়েছে কুরিয়ার কোম্পানি তামিম এক্সপ্রেস লিমিটেড। এসব মালের সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে শঙ্কা জানালেন কোম্পানিটির পরিচালক সুলতান আহমেদ। গতকাল কার্গো কমপ্লেক্সের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শনিবার হাফ শিপটিং কার্যক্রম চলে কার্গো কমপ্লেক্সে। সকাল ৯টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত খোলা ছিল। আমাদের কোম্পানির আড়াই টন মাল নেমেছে। সব পুড়ে গেছে নিশ্চিত। কোন ধরনের মালামাল ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব গার্মেন্টস আইটেম মাল ছিল। বাটন, জিপার ফেব্রিকস ও বিভিন্ন লেভেল আইটেম।
কুরিয়ারের মাস্টার ইয়ার কোম্পানির সিএনএফ এজেন্ট মো. রোকন মিয়া বলেন, প্রতিদিন টন টন মাল কার্গো হয়ে আসে। এই ঘটনায় বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যবসায়ীরা। স্কাই লাউঞ্জে কেমিক্যাল, ফেব্রিক, মেশিনারিজসহ সব ধরনের মালামাল রাখা হয়। আমাদের ধারণা কেমিক্যাল থেকেই আগুন লেগেছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
দাঁড়িয়ে লেলিহান আগুনের দিকে ইমপোর্ট সেকশনে কাজ করা একজন কর্মী সোহেল মিয়া বলেন, আট নাম্বার গেটের সঙ্গে লাগানো কুরিয়ার সার্ভিসের গোডাউন, এরপর ফার্মাসিউটিক্যাল ও ভ্যারাইটিস পণ্যের গোডাউন। মাঝখানে কুল রুম, ডেঞ্জারাস গুডসের গোডাউন অর্থাৎ এই গোডাউনে বিস্ফোরকদ্রব্য রাখা হয়। এরপর আমদানি করা মোবাইলের গোডাউন। সর্বশেষ এবং বিজিএমই-এর গোডাউন। যেখানে পোশাক কারখানাগুলো রপ্তানি করার জন্য তাদের তৈরি করা মালামাল রাখে।
আগুনের ভয়াবহতা নিয়ে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ডেঞ্জারাস গুডসের গোডাউনে আগুন লেগেছে। সেখানে রাখা বিস্ফোরক দ্রব্যগুলো বিকট আওয়াজ করে ফুটছিল। এই আগুন সহজেই নেভানো যাবে না। কারো পক্ষে এটা নেভানো সম্ভব না, যদি নিজে থেকে না নেভে। কারণ, ডেঞ্জারাস গুডস গোডাউনে পানি দিলেও আগুন নিভবে না।
শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি কার্গো ভিলেজে আগুন আগে। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে আগুন জ্বলছিল। সরজমিন দেখা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা লেডারের সাহায্যে আগুনে পানি দিচ্ছিলেন। এদিকে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিস কে সহযোগিতা করছিলেন। আগুন কার্গো ভিলেজের পুরো ভবনে ছড়িয়ে যায়। এদিকে আগুন লাগার পর বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট ওঠানাম বন্ধ রয়েছে। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনাস্থলে ঢাকার ১৩টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সন্ধ্যার পর থেকে কার্গো ভিলেজের পাশে কুরিয়ার সার্ভিসের আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায়। বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের (হ্যাঙ্গার গেট) পাশে দাউ দাউ করে জ্বলছিল আগুন। এই আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে, বিমানবন্দরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কার্গো ভিলেজে পাশে স্কাই ক্যাপিটাল (বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ করে) ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাঝের পয়েন্টে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। সেখানে কর্মরত সদস্যরা আগুন দেখে দ্রুত বের হতে শুরু করেন। এরপর তারা বিভিন্ন জায়গাতে ফোন করে বিষয়টি জানান। এরপর কার্গো ভিলেজের সামনে যেসব উড়োজাহাজ ছিল সেগুলো দ্রুত সরিয়ে নিরাপতে নেওয়া হয়।
এদিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩৫ জনের মতো আহত হওয়ার খবর দিয়েছে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর তরফ থেকে।
মন্তব্য করুন