কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০১ পিএম
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যেসব সাংবাদিক মবের ভয়ে আছেন, তারা ফ্যাসিবাদের দোসর : প্রেস সচিব

বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি : কালবেলা
বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি : কালবেলা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘যেসব সাংবাদিক মবের ভয়ে আছেন, তারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন। এ সরকার তো কাউকে ডিজিএফআই বা এনএসআই দিয়ে হয়রানি করে নাই।’

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা : ইশতেহারে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রেস সচিব দাবি করেন, সত্যিকার অর্থে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সাংবাদিকরা তুলনামূলক নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পেরেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের আমলে সাংবাদিকদের ওপর ভয়াবহ পরিস্থিতি নেমে আসে, তাদের ওপর নানা ধরনের নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানো হয়। সেই জায়গা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি।

তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন মবের ভয়ে আছেন। আমি তো কোথাও সেই ভয় দেখি না। যিনি মবের ভয় করছেন, তিনি হয়তো তখন দোসর ছিলেন। এখন আপনি যদি দোসর হন, আমি তো আপনার পাপ ক্লিন আপ করব না। যারা আজকে বলছেন মবের ভয় আছেন বেশিরভাগই দেখবেন এরা দোসর ছিলেন। ভয়টা নিজে নিজে থেকেই আসছে। আমরা বলেছি কোনো গণমাধ্যমে কোনো ধরনের আক্রমণ আমরা সহ্য করব না। সে কথা আমরা রেখেছি।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘গত ১৫ মাসে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার এলে সেটি টিকে থাকবে কি না, সেই প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে।’

দেশে মিস ইনফরমেশন ছড়ালে সেটা মোকাবিলা করা খুবই কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দখল করে নিচ্ছে, এটা নিয়ে ১ হাজার ভুয়া নিউজ ছড়িয়েছে। মাইলস্টোন নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। সরকারের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের সক্ষমতা খুবই সীমিত, এই মাধ্যমে মিথ্যা খবর ধরার বা প্রতিহত করার প্রয়োজনীয় টুল ও ব্যবস্থা নেই। ফলে সুরা-কেরাত পড়ে অনেকে টিভিতে গিয়ে মিথ্যা কথা ছড়িয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে দৃঢ় রাখতে হলে এসব ফেক নিউজকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’

তার মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া যেমন বড় চ্যালেঞ্জ, তেমনি মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর বলেন, ‘এখন মিডিয়া হাউস নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মিডিয়া হাউসগুলো শুধু সংবাদ পরিবেশন করে না, তারা ভেটো ক্ষমতার মতো আচরণ করতে চায়, যেন তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই ঘটতে না পারে। বড় ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন মিডিয়া খুলে ফেলছেন। সাংবাদিকদের সংগঠন থাকতে পারে, তবে সেটি দলীয় প্রভাবমুক্ত হতে হবে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন বলেন, ‘গণমাধ্যমের পুরো ইকোসিস্টেম এখন সাংবাদিকদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। পোশাকশ্রমিকের মতো বেতনে সাংবাদিক নিয়োগ হয়। ৫ আগস্টের পর বহু গণমাধ্যমের মালিকানা ও শীর্ষপদে পরিবর্তন এসেছে। দলীয় মদতপুষ্ট লোকেরা সেখানে গেছেন। তারা আগে এক দলের ন্যারেটিভ প্রচার করতেন, এখন অন্য দলেরটা করছেন।’

এসময় তিনি গণমাধ্যমে ক্রস ওনারশিপ বন্ধের আহ্বান জানান। মুশফিক উস সালেহীন বলেন, ‘আমাদের ইশতেহারে এটা স্পষ্টভাবে থাকবে, এক মালিকের অধীনে একাধিক গণমাধ্যম থাকা উচিত নয়। এক মালিক, এক গণমাধ্যম নীতি থাকা দরকার।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, ‘গণমাধ্যমে দৃশ্যমান কোনো সংস্কার চোখে পড়েনি। শেখ হাসিনা আমলের সিস্টেমই এখনো চলছে। এর মধ্যেই দুটো টেলিভিশনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে ভালো হতো, কিন্তু তা হয়নি।’

সাবেক উপদেষ্টাদের ব্যর্থতার সমালোচনা করে রাশেদ খাঁন বলেন, ‘যারা অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ ছিলেন, যেমন নাহিদ ইসলাম বা এনসিপির নেতা তারা যদি তাদের মন্ত্রণালয়ে সংস্কার করে দেখাতে পারতেন, তাহলে তারা রোল মডেল হতে পারতেন। কিন্তু তারা পারেননি। যখন গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রশক্তি ব্যর্থ হচ্ছে, তখন আগামী প্রজন্ম কীভাবে সফল হবে?’

ফটোকার্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি দশ মিনিটের বক্তব্য দিই, কিন্তু কেউ সেটার থেকে দুই লাইন কেটে ফটোকার্ড বানিয়ে ফেসবুকে দেয়। মানুষ পুরো খবর না পড়ে ওই কার্ডই শেয়ার করে। এতে বিকৃত বার্তা ছড়ায়, অনেক সময় নেতাদের চরিত্রহনন হয়। ফটোকার্ডের নীতিমালা তৈরি করা জরুরি। ফটোকার্ড বাদ দিতে বলছি না, কিন্তু এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতে ভোট দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান মডেল, বিস্ফোরক তথ্য রাহুলের

চাকরিচ্যুত মা-বাবার সঙ্গে থালা হাতে রাস্তায় সন্তানরা

চলে আসুন আমাদের কাছে, সম্মান দেব : হাসনাত আব্দুল্লাহ

জকসু নির্বাচন : বিধিমালায় নেই তহবিলের খাত

সিলেট-৪ আসনে নতুন চ্যালেঞ্জে আরিফুল

পদ্মার দুই ইলিশ বিক্রি ২০ হাজারে

মশার ওষুধ প্রয়োগ তদারকিতে নামছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি

অনুমোদন ছাড়াই স্কুলের সভাপতি : উপসচিব মামুন মিয়াকে তিরস্কার

জানা গেল এনসিপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশের তারিখ

সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী কাজী আলাউদ্দিনকে বিজয়ী করতে গণমিছিল

১০

২৯৮ বোতল ফেনসিডিলসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

১১

ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিতে প্রতিহিংসার রাজনীতি চলবে না : মাহবুবুর রহমান

১২

সাতক্ষীরায় তৃতীয় দিনের মতো শহিদুলকে মনোনয়নের দাবিতে বিক্ষোভ

১৩

কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে সাংবাদিককে জনপ্রিয় অভিনেত্রীর লিগ্যাল নোটিশ

১৪

আগামী নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হবে : শামা ওবায়েদ

১৫

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হবে নতুন নিয়মে

১৬

বিএনপি ভেসে আসা দল নয় : মির্জা ফখরুল

১৭

ইউক্রেন সফরে গিয়ে বিপাকে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

১৮

প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের দ্বিতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কবে

১৯

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক : ব্যারিস্টার অসীম

২০
X