পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, দেশে দুর্নীতি বেড়েছে সন্দেহ নেই। উচ্চবিত্ত পর্যায়ে দুর্নীতি বেশি হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতেও এসব প্রভাবশালীরা অর্থ লুটপাটের ঘটনায় জড়িত। তিনি বলেন, এসব দুর্নীতিবাজরা ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, দুবাইসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করছে। দুই একজনকে গ্রেপ্তার করে জেলে নেয়া হলেও টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত আরও অনেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে সামাজিক সুরক্ষায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে এক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান এসব কথা বলেন।
প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সরকার সকল শ্রেণী পেশার মানুষের বৃদ্ধ অবস্থায় সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে। হিসাব নিকাশ করে ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে জনস্বার্থে এই স্কিম শুরু করা হয়। যা বর্তমান সরকারের সাহসী উদ্যোগ। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর ভাতা অব্যহত রেখেই উপকারভোগিরা পেনশন স্কিমে অন্তর্ভূক্ত হতে পারলে আরো ভালো হতো। সরকার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
এম এ মান্নান বলেন, যারা সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে নির্বাচনী তহবিল যোগানের উদ্যোগ হিসেবে দেখছে তাদের সেই সমালোচনা যথার্থ নয়। সরকার কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা থেকে নাগরিকদের দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষে এই কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রচলিত সঞ্চয় স্কিমের মতো মনে হলেও এটি পেনশন গ্রহীতাদের দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। পেনশন খাতে জমাকৃত অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। এর জন্য সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, পেনশন স্কিম থেকে প্রাপ্ত অর্থ ঝুঁকিমুক্ত ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। আর্থিকভাবে শক্তিশালী বাণিজ্যিক ব্যাংক, ট্রেজারি বন্ড, লাভজনক অবকাঠামোতে পেনশন স্কিমের টাকা বিনিয়োগ করা যেতে পারে। সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি, লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি যাতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তাবায়নে বাধা না হয়, সরকারকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, এই পেনশন পেতে হেনস্তার শিকার হতে হয় কিনা সে ব্যাপারেও জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা রয়েছে। অনেকে মনে করেন মূল্যস্ফীতির হিসেবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম খুব একটা লাভজনক নাও হতে পারে। সমতা স্কিমের আওতায় নিম্ম আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের ৫০ শতাংশ চাঁদা প্রদানের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। বেসরকারি চাকুরিজীবিদের জন্য প্রগতি স্কিমে প্রতিষ্ঠান চাইলে চাঁদার অর্ধেক কর্মচারী এবং বাকি অর্ধেক প্রতিষ্ঠান বহন করতে পারবে। তবে চাঁদার বিষয়টি শ্রমআইনে অন্তর্ভূক্ত করে নির্দেশনা প্রদান করলে বেসরকারি চাকুজীবিরা উপকৃত হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনাকে টেকসই ও আরো জনবান্ধব করতে স্কিমে অংশগ্রহণ করতে হলে পূর্বের সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না এই শর্ত বাতিল করা , শ্রমজীবী মানুষের জন্য টানা ১০ বছর চাঁদা প্রদানের বিষয়টি শিথিল করা, জরিমানার পরিমান কমিয়ে হাজারে ১০ টাকার পরিবর্তে ২ থেকে আড়াই টাকা করাসহ ১০ দফা সুপারিশ করেন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘সর্বজনীন পেনশন স্কীম দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক সুরক্ষায় সহায়ক হবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে সরকারি তিতুমীর কলেজের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক শেখ নাজমুল হক সৈকত, সাংবাদিক জাকির হোসেন ও স্থপতি সাবরিনা ইয়াসমিন মিলি।প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
মন্তব্য করুন