

দেশে নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো শঙ্কা নেই। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সম্পাদকসহ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা ২০ জনকে গানম্যান দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গানম্যান পাওয়াদের তালিকায় এনসিপির ৬ নেতাও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৮তম সভা শেষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ঘটনায় এরইমধ্যে ১০ জনকে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ফয়সাল করিমের স্ত্রী, মা, বাবা, শ্যালকসহ একাধিক সহযোগী রয়েছে। একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, ৪১ রাউন্ড গোলাবারুদ ও ১টি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।
মূল হোতা ফয়সাল করিম মাসুদকে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি। তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে মোটিভসহ বিস্তারিত প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে দালাল চক্র ফিলিপের সহযোগী পাঁচজনকে (স্ত্রী ও শ্বশুরসহ) আটক করে বিজিবি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় পুলিশের নিকট হস্তান্তর করেছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি যৌথ এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে মিডিয়াকে বিস্তারিত অবহিত করেছে।
সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এর আগে ঢাকসু, জাকসু, রাকসু ও চাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। একইভাবে জকসু নির্বাচনও নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজন করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনায় ডিএমপি ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পত্রিকা দুটির সম্পাদকদের নিরাপত্তায় গানম্যান দেওয়া হয়েছে এবং বাসভবনে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ময়মনসিংহে পোশাক শ্রমিককে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায়ও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, শরিফ ওসমান হাদি হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল হোতাকে গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে সরকার। এ ঘটনায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে গোপনীয়তার স্বার্থে সব বলা যাবে না।
মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, হাদিকে হত্যাকারীরা দেশেও থাকতে পারে, বিদেশেও থাকতে পারে। কোথায় আছে, সেটি স্পষ্ট নয়। তবে বৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার তথ্য নেই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ব্যাপারে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আগমন উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণের বড় অংশ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহারের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, সহিংসতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও উসকানিমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
সভায় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সার্বিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ এর অগ্রগতি, শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও গ্রেপ্তার পরিস্থিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন, বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
মন্তব্য করুন