স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বছরের প্রথম থেকেই মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি ও উদ্যোগের কোনো ঘাটতি ছিল না। আমাদের সমস্ত চেষ্টার পরও এ বছর ডেঙ্গুতে রেকর্ডসংখ্যক মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনা ও পীড়াদায়ক। শুধুমাত্র ওষুধ ছিটিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সমস্যাগুলো খুঁজে বের করে সমাধান করা জরুরি।’
মন্ত্রী দাবি করেন- স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও জনগণের মাঝে সমন্বয়হীনতা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।
বুধবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় স্থানীয় সরকার বিভাগ আয়োজিত ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ : তথ্য শেয়ারিং সেশন’ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু রোগে একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়। কিন্তু আমাদের আর কোনো কিছু করার বাকি রয়েছে কি না সেই বিষয়গুলো আলোচনা করার জন্যই বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আমাদের এ কর্মশালা। এডিস মশা নিধনে সরকার সারা বছরই কাজ করেছে। আগামী বছরে ডেঙ্গু যেন এবারের মতো ভয়াবহ না হয় তা নিশ্চিতে সরকারের প্রস্তুতিও আছে। কয়েক বছর ধরেই সরকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। গতবছর সব চেষ্টার পরও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এবছর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, শুধু সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে ডেঙ্গু বাড়ছে, এমন নয়।
মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিবছর মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ও ম্যালেরিয়ায় সারা পৃথিবীতে ৭ লাখ মানুষ মারা যায়। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে আমাদের মতো দেশের জন্য মশাবাহিত রোগ মোকাবিলা করতে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। যদিও ১৯৬৪ সালে প্রথম ডেঙ্গু রোগ বাংলাদেশে আসে বলে তথ্যে জানানো হয়েছে কিন্তু এ রোগের ব্যাপকতা ২০১৯ সালে প্রথম আমরা দেখতে পাই।
তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এ বছর আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, মশা প্রতিরোধে জনসচেতনতা ও জনগণের অংশগ্রহণই প্রধান বিষয়। মন্ত্রণালয় থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টিবিসি প্রচারসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে যেখানে এডিস মশার উৎসস্থল বা লার্ভা পাওয়া গেছে সেখানে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়াও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সিটি করপোরেশন এবং মন্ত্রণালয় থেকে আমি নিজে মাঠ পরিদর্শন করে জনগণের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেছি।
তাজুল ইসলাম বলেন, বছরের প্রথম থেকেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনগুলোর মশা মারার পর্যাপ্ত ওষুধ, যন্ত্রপাতি এবং লোকবল রয়েছে কি না- সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন জনসম্পৃক্ততা যতো বাড়ানো যাবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা যত শক্তিশালী হবে ততই এডিস মশার প্রজনন স্থল ও ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ হ্রাস পাবে।
মন্ত্রী বলেন, এডিস মশা তো আগে আমাদের দেশে ছিল না, থাকলেও সেটা এই মাত্রায় ছিলো না। এটা বাইরের দেশ থেকে এসেছে। প্লেনের মাধ্যমে মশা এসেছে বললে অনেক সময় সমালোচনা করা হয়, কিন্তু মশাগুলো তো কোন না কোন বাহনের মাধ্যমে আমাদের দেশে এসেছে। মশা তো আর এমনি এমনি উড়ে আসতে পারবে না।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশন অফিসার ইফাত মাহমুদ এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্ব আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল্লায়ে সেক, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী এবং যুগ্ম সচিব ফারজানা মান্নান।
মন্তব্য করুন