জলবায়ুবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সালিমুল হক আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল শনিবার রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন। আইসিসিসিএডি রোববার তাদের ফেসবুক পেজে ৭১ বছর বয়সী এ বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর জানায়।
সেখানে বলা হয়, ‘অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে আমাদের পরিচালক অধ্যাপক সালিমুল হকের মৃত্যুর খবর জানাচ্ছি। তিনি এমন একজন স্বপ্নদর্শী নেতা, যিনি শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ের মশাল বহনকারী ছিলেন না, বরং সমগ্র বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য তার অতুলনীয় উত্তারাধিকার আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর অধ্যাপক ড. সালিমুল হক গত আগস্টে জাতিসংঘের নবগঠিত বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বোর্ডে বাহ্যিক সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন সালিমুল হক।
তিনি জাতিসংঘের সংস্থা ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ২০২১ সালে বিশ্বের প্রভাবশালী সহস্র জলবায়ু বিজ্ঞানীদের তালিকায় স্থান পান সালিমুল হক। ২০২২ সালে যুক্তরাজ্য সরকার তাকে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) খেতাবে ভূষিত করে।
২০০১ সাল থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (আইআইইডি) এর ‘ক্লাইমেট চেইঞ্জ প্রোগ্রাম’ এর যুক্ত ছিলেন সালিমুল হক। তিনি ছিলেন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) ও গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) এর উপদেষ্টাদের একজন। লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে স্নাতক করেন সালিমুল। ১৯৭৯ সালে একই কলেজ থেকে তিনি ‘উদ্ভিদবিজ্ঞান’ নিয়ে পিএইচডি করেন।
সালিমুল হকের জন্ম ১৯৫২ সালে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেন্ট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিসিসিএডি) পরিচালক ছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে আইসিসিসিএডি। বিশ্বের শীর্ষ জলবায়ুবিশেষজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সালিমুল হক। তিনি দীর্ঘ তিন দশক ধরে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করেছেন।
জাতিসংঘের নবগঠিত বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বোর্ডের বাহ্যিক সদস্য ছিলেন সালিমুল হক। তিনি জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ও গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে কাজ করেছেন। সালিমুল হক এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সব কটি জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট তৈরিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
বিজ্ঞানের জগতে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে যেসব ঘটনা, তার পেছনে ভূমিকা রাখা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একটি তালিকা গত বছর প্রকাশ করে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’। ১০ জনের এ তালিকায় সালিমুল হকের নাম ছিল। সালিমুল হককে ব্রিটিশ সরকার সম্মানজনক ‘অফিসার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’ উপাধিতে ভূষিত করে। তাকে সম্মানজনক উপাধি দেয় যুক্তরাজ্যের নর্থামব্রিয়া ইউনিভার্সিটি, নিউক্যাসেল।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে সালিমুল হকের শতাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। জাতিসংঘ থেকে তাকে বিশ্বের জলবায়ুবিষয়ক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
মন্তব্য করুন