বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের ৪৬তম বার্ষিক সভা আজ শনিবার (২৫ নভেম্বর) বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক-প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি প্রায় সাত দশক ধরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বাতিঘর হিসেবে বিশ্ব-দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে গোটা জাতির কাছে তুলে ধরতে আমরা নিবিষ্টভাবে কাজ করে চলেছি।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ পরিষদের সভায় বাংলা একাডেমির ফেলো, জীবনসদস্য এবং সাধারণ সদস্যদের প্রদত্ত মতামত ও বক্তব্য ধারণ করে আমরা আগামী দিনের বাংলা একাডেমির রূপরেখা প্রণয়নে কাজ করে যাব।
সাধারণ সভা বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে শুরু হয়। সভাপতির বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাঙালি জাতিসত্তাকে ধারণ করে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করে চলেছে। সাধারণ পরিষদের সভায় সারা দেশ থেকে আগত ফেলো, জীবনসদস্য এবং সাধারণ সদস্যদের মতামত ধারণ করে একাডেমি তার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে।
সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে মুহম্মদ নূরুল হুদা জাতীয় পতাকা ও সেলিনা হোসেনের বাংলা একাডেমির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু হয়।
দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়াত গুণী ব্যক্তিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. মুহম্মদ শাহাদাত হোসেন। প্রয়াত ব্যক্তিদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এবং একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অবহিত করেন। একাডেমির সদস্যরা বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন।
সাধারণ সভার পরবর্তী কার্যক্রমে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির ফেলো ড. নূহ-উল-আলম লেনিন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার।
সভায় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশিপ-২০২৩ এবং পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ ২০২৩ পেয়েছেন, মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু (সাংবাদিকতা), এ কে শেরাম (আদিবাসী গবেষণা), মো. আলম দেওয়ান (ফোকলোর), তানভীর মোকাম্মেল (চলচ্চিত্র), আক্কু চৌধুরী (মুক্তিযুদ্ধ), ফালগুনী হামিদ (সংস্কৃতি) এবং ডা. হালিদা হানুম আখতার (চিকিৎসাবিজ্ঞান)।
কবি নির্মলেন্দু গুণ ‘মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার’-২০২৩, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ‘অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার’-২০২৩, অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ‘আবু রুশদ সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩’, ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ‘মেহের কবীর বিজ্ঞানসাহিত্য পুরস্কার’-২০২৩, ড. অনুপম সেন ‘সাহিত্যিক মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কার’-২০২৩, কবি ওমর কায়সার সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার’-২০২৩ এবং ‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট : বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান’ গ্রন্থ রচনার জন্য আবদুল গাফফার ‘হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কার-২০২৩’-পেয়েছেন।
পুরস্কার ও ফেলোশিপপ্রাপ্ত গুণীজণদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য, সম্মাননাপত্র, সম্মাননা স্মারক ও ফুলেল শুভেচ্ছা তুলে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। কবি নির্মলেন্দু গুণের পক্ষে তার কন্যা মৃত্তিকা গুণ এবং আক্কু চৌধুরীর পক্ষে রামেন্দু মজুমদার পুরস্কার ও ফেলোশিপ গ্রহণ করেন।
সাধারণ সভার কার্যক্রম ইসলাম সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ডা. কে এম মুজাহিদুল।
মন্তব্য করুন