২০১০ সালের ডিসেম্বরে এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন এমভি জাহান মনি জাহাজ ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ান জলদস্যুরা। ওই জাহাজের ২৫ ক্রু এবং প্রধান কর্মকর্তার স্ত্রী জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়েছিলেন। প্রায় ১০০ দিন জিম্মি থাকার পর তাদের উদ্ধার করা হয়। ভারতীয় উপকূল থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরের লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ থেকে সুয়েজখাল হয়ে সিঙ্গাপুর থেকে ইউরোপগামী জাহাজটি হামলার শিকার হয়।
ইন্দোনেশিয়া থেকে সবে মাত্র যাত্রা করেছিল এমভি জাহান মনি। ২৭ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে জাহাজটি সিঙ্গাপুর বন্দরে যাত্রাবিরতি করে। গন্তব্যস্থল ছিল গ্রিস। এক মাসেরও বেশি সময়ের এ যাত্রায় ২৫ নাবিক ও প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীসহ মোট ২৬ জন মানুষ সমুদ্রে ছিলেন। ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে ছিনতাই হয় জাহাজটি।
১৫০ টন নিকেল আকরিক নিয়ে যাত্রা করেছিল এমভি জাহান মনি। হঠাৎই ডাকাত দলেল কবলে পড়েন তারা। এমভি জাহান মনির কর্মকর্তারা জানতে পারেন, ভারতের লাক্ষা দ্বীপ থেকে প্রায় ১৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে আরব সাগরে থাকা জাহাজটি জলদস্যুদের হামলার শিকার হয়েছে।
সর্বজনীন সমন্বিত সময় ০৯:৪২ মিনিটে ন্যাটো একটি সতর্ক বার্তা প্রচার করে। যেখানে বলা হয়-
০৮° ১১ উত্তর ০৭১° ৪৩ পূর্ব অবস্থানে জলদস্যু / ১ স্কিফের হাতে একটি বাণিজ্য জাহাজে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।’ ঘটনার কয়েক মিনিট পর ন্যাটো বার্তা দেয়, ‘জাহাজটি ছিনতাই করা হয়েছে।
অল্প সময় পরেই চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা জাহাজের নাবিক ফোন করেন। তিনি জানান, সোমালি জলদস্যুরা তাদের জাহাজ দখল করে নিয়েছে।
২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর জলদস্যুরা জাহাজটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সোমালিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দেয়। পরে জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলে নোঙর করে। দস্যুদের নিয়ন্ত্রণের আসার দীর্ঘ সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে যোগাযোগ করাকালে দস্যুদের পক্ষে কথা বলেন লিওন নামের একজন। এ সময় তারা ৯ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে। ২৪ ডিসেম্বর জাহাজের ক্যাপ্টেন ফরিদ আহমেদ জাহাজের ব্যবস্থাপক মেহেরুল করিমকে ফোন করেন।
তিনি জানান, পরিস্থিতি ভয়াবহ। জাহাজের বিশুদ্ধ খাবার পানি ও জ্বালানি শেষ হয়ে যাচ্ছে। দুই মাস ধরে আলোচনা চলে। চূড়ান্ত মুক্তিপণ নির্ধারণ করা হয় ২২ ফেব্রুয়ারি। ১২ মার্চ এমভি জাহান মনিতে দুটি বিশেষভাবে জলরোধী স্যুটকেস পাঠানো হয়। স্যুটকেস দুটি একশ ডলারের নোটের বান্ডিলে পূর্ণ ছিল। তাদের মুক্তিপণের জন্য ৪.৬২ মিলিয়ন ডলার এবং জ্বালানির খরচ বাবদ ১ লাখ ডলার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
যদিও এসআর শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এমভি জাহান মনির মালিক মুক্তিপণ পরিশোধের বিষয়টি অস্বীকার করেন। অবশেষে ১৩ মার্চ ভোরে প্রায় ১০০ দিন জলদস্যুদের আস্তানায় বন্দি থাকার পর জাহাজের নাবিকেরা মুক্তি পায়।
মন্তব্য করুন