দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় একাধিক পণ্যের দাম বেড়েছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও আটকানো যাচ্ছে না দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এতে দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও সে তুলনায় খুব কমই বেড়েছে সিগারেটের দাম।
বিশেষ করে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম সে অর্থে বাড়েনি। তুলনামূলক কম আয়ের ধূমপায়ী মানুষ নিম্নস্তরের সিগারেটে অভ্যস্ত। এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে অন্যান্য পণ্য দামি হলেও সিগারেট তাদের হাতের নাগালে।
গত ৫ অর্থবছরে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ১০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি অর্থবছরে বেড়েছে মাত্র দুই টাকা। এ ছাড়া গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম এক টাকা বাড়ালেও গত চার বছরে এর দাম এক টাকাও বাড়েনি।
ফলে দাম কম থাকার কারণে নিম্নআয়ের মানুষও এর ব্যয় বহন করতে পারছে আর অভ্যাস থেকেও বেরিয়ে আসতে পারছে না। দেশের সিগারেটের বাজারের ৮০ শতাংশ নিম্নস্তরের সিগারেটের দখলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধূমপায়ীর সংখ্যা কমাতে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো প্রয়োজন। যা রাজস্ব খাতেও ভূমিকা রাখতে পারে।
বিষয়টিকে তুলে ধরে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম ১০-১৫ টাকা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে দেশের একাধিক তামাক বিরোধী সংগঠন। বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) ও উন্নয়ন সমন্বয়ের মতো তামাক বিরোধী সংগঠন। এবারের বাজেটে সিগারেটের তিন স্তরেই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এরমধ্যে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম ৪৫ থেকে ৬০ টাকা করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ও নিম্নআয়ের ধূমপায়ীদের ধূমপানের আসক্ত কমাতে অবশ্যই নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো উচিত। নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম ১০-১৫ টাকা বাড়ানো গেলে নিম্নআয়ের ধূমপায়ীদের মধ্যে এর প্রভাব পড়বে। এতে সর্বোপরি ধূমপানের অভ্যাস কমে আসবে এবং সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব আয়ও বেড়ে যাবে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী দেশের রাজস্ব বাড়লে পরবর্তী ঋণ প্রাপ্তিতেও সহায়ক হবে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। তাই যথাযথ সংস্কার পদক্ষেপ না নিলে অর্থনৈতিক দুর্বলতা আরও প্রকট হতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তবে গত অর্থবছরে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছিল পাঁচ টাকা। ফলে এই স্তরে রাজস্ব বেড়েছে প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার সমান। তাই রাজস্ব বাড়াতে ও দরিদ্র মানুষকে ধূমপানের কবল থেকে বের করে আনতে এই স্তরের সিগারেটের দাম ১০-১৫ টাকা বাড়ানো উচিত। এবারের বাজেটে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম না বাড়ালে দেশকে ধূমপানমুক্ত করার লক্ষ্যের পাশাপাশি রাজস্বখাতও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
মন্তব্য করুন