বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং লেখক হায়দার আকবর খান রনোর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
শনিবার (১১ মে) এক শোক বিবৃতিতে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এর আগে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
উল্লেখ্য, হায়দার আকবর খান রনো শুক্রবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি পরিবার-পরিজনসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
হায়দার আকবর খান রনো যশোর জিলা স্কুল, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও ঢাকার সেন্টগ্রেগরী স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৫৮ সালে সেন্টগ্রেগরী স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ম্যাট্রিকের মেধাতালিকায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে তিনি ১২তম স্থান লাভ করেছিলেন। রনো ১৯৬০ সালে ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু কোর্স সম্পন্ন করতে পারেননি, তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে ডিগ্রি পাসকোর্সের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। হায়দার আকবর খান রনো কারাগারে অবস্থানকালে আইনশাস্ত্রে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি হাইকোর্টের সনদও লাভ করেছিলেন। কিন্তু ওকালতি পেশা তিনি গ্রহণ করেননি। রনো ছোটবেলাতেই বাংলা ও বিদেশি ক্ল্যাসিক্যাল সাহিত্য পাঠ করেছিলেন। কিশোর বয়সেই বাবার কাছ থেকে রবীন্দ্রনাথ, মাইকেল, নজরুল, শেকসপিয়রের বিভিন্ন কাব্য শুনে শুনে তার মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। আবৃত্তির পাশাপাশি তিনি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিতর্ক ও সাহিত্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বহু পুরস্কার জিতেছেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভালো বক্তা হিসাবে পরিচিতিও লাভ করেছিলেন। তাকে বলা হতো অনলবর্ষী বক্তা।
১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার ছাত্র থাকাকালে তিনি গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের মধ্য দিয়ে তার সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ। ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সেসময়কার প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় ছাত্রসংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে ডা. আহমদ জামানকে সভাপতি, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদকে সাধারণ সম্পাদক ও হায়দার আকবর খান রনোকে যুগ্ম সম্পাদক করে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ১৯৬২ সালে রনো দুইবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ৬২-এর মার্চ মাসে তাকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে রাখা হয়েছিল। পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। যেখানে ছাব্বিশ সেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তিনি একত্রে ছিলেন।
মন্তব্য করুন