ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতনকে জুতাপেটা করেছেন সংরক্ষিত ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামেলী।
সোমবার (২০ মে) দুপুরে নগর ভবনে করপোরেশনের বোর্ড সভায় এ ঘটনা ঘটে। সভায় মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস উপস্থিত ছিলেন। ডিএসসিসির বোর্ড সভায় উপস্থিত একাধিক কাউন্সিলর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ২২ এপ্রিল নারী কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামেলীর একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ২৪ এপ্রিল তাকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ।
ডিএসসিসির কাউন্সিলররা ধারণা করছেন গুলিস্তান, পল্টন, আনন্দবাজার এলাকায় ফুটপাতে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই অঘোষিত দ্বন্দ্ব চলছিল। এ ছাড়া গত ২২ এপ্রিল ওই নারী কাউন্সিলরের একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়ে। এর পেছনে রতনকে সন্দেহ করে আসছিলেন রোকসানা ইসলাম চামেলী। হয়তো এসব কারণেই জুতাপেটার এমন ঘটনা ঘটেছে।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, সোমবার বেলা ১১টায় ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে দ্বিতীয় পরিষদের ২৫তম করপোরেশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। সভার শুরুতে ডিএসসিসি মেয়র তার নেতৃত্বে দ্বিতীয় পরিষদের চার বছরের বিভিন্ন অর্জন তুলে ধরেন। আগামী এক বছরের মধ্যে প্রতিশ্রুতির বাকি কাজ শেষ করতে ৭৫টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সহযোগিতা চান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক কাউন্সিলর বলেন,
আজ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তের ডানপাশে একটি চেয়ারে বসেছিলেন সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামেলী। আর বাঁ পাশে অন্য কাউন্সিলরদের সঙ্গে সামনের সারিতে বসেছিলেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন। দুপুর ১২টার দিকে নিজ আসন থেকে উঠে রতনের সামনে গিয়ে দাঁড়ান চামেলী। কোনো কথা বা তর্ক ছাড়াই হুট করে পা থেকে জুতা খুলে রতনকে পেটাতে থাকেন চামেলী। এ সময় আশপাশের কাউন্সিলররা এগিয়ে গিয়ে চামেলীকে থামান। তবে জুতাপেটার সময় রতন চুপচাপ করে নিজ আসনে বসেছিলেন।
আরেক কাউন্সিলর বলেন, ঠিক কী কারণে চামেলী রতনকে জুতাপেটা করেছে, তা জানা যায়নি। করপোরেশন সভায় তাদের তর্কও হয়নি। চামেলীর এমনকাণ্ডে সবাই হতভম্ব। ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বারবার চামেলীকে থামতে বলেন। কিন্তু তিনি থামছিলেন না। একপর্যায়ে অন্য নারী কাউন্সিলররা চামেলীকে করপোরেশন সভা থেকে বের করে দেন। পরে করপোরেশন সভা চালিয়ে নেন ডিএসসিসি মেয়র। এসময় অন্য কাউন্সিলররা চামেলীর বহিষ্কারের দাবি জানান।
এক নারী কাউন্সিলর বলেন, ডিএসসিসির ইতিহাসে করপোরেশন সভায় এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। আজকের ঘটনা ডিএসসিসিতে কলঙ্ক হয়ে থাকবে। ডিএসসিসির সব নারী কাউন্সিলর চামেলীর বহিষ্কার চান।
জানতে চাইলে কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন বলেন,
আমি বুঝে উঠতে পারিনি, পেছন থেকে এসে এভাবে মারবে। আমি হতভম্ব! তার (চামেলী) সঙ্গে আমার পূর্বে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। হুট করে আজ করপোরেশন সভায় এমন ঘটনা (জুতাপেটা) করেছেন। তখন ডিএসসিসি মেয়র তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
আপনার প্রতি এমন আক্রশের কারণ কী জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দিন রতন আরও বলেন, আমি জানি না। এটা পারিবারিক শিক্ষার অভাব। একটা বোর্ড সভায়, যেখানে মেয়র মহোদয় উপস্থিত সেখানে এরকম ঘটনা ঘটবে বুঝতে পারিনি।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামেলী বলেন, আমি তো বোর্ড সভায় ছিলাম। এরকম ঘটনা ঘটেছে কি না আমি জানি না। কেউ যদি প্রচার করে তাহলে সেই ভালো-মন্দ বলতে পারবে। আমি এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করব না।
কাউন্সিলর রতনের গায়ে আপনি হাত তুলেছেন না কি সেই আপনার গায়ে হাত তুলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।
মন্তব্য করুন