ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যায় ব্যবহৃত একটি গাড়ি জব্দ করেছে কলকাতা পুলিশ। বুধবার (২২ মে) সন্ধ্যায় কলকাতার নিউ টাউন থানা পুলিশ গাড়িটি জব্দ করে। দেশটির পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সুজুকি সুইফট মডেলের গাড়িটি (ডব্লিউবি১৮এএ৫৪৭৩) চলাচলের জন্য এমপি আজিমই ভাড়া করেছিলেন।
নিউটাউন থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জব্দকৃত গাড়িটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করেছে দেশটির ফরেনসিক টিম। গাড়িটি ভাড়ায় ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন মালিক। নিজে ব্যবহার করার জন্য গাড়িটি ভাড়ায় নিয়েছিলেন আনোয়ারুল আজিম। এ ঘটনায় গাড়ির মালিককেও পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের সামনে কারও অপেক্ষায় আছেন এমপি আনার ও তার এক সঙ্গী। এক পর্যায়ে তাদের সামনে সুজুকির লালরঙের ওই প্রাইভেট কারটি এসে থামে। পরে গাড়ি থেকে আরেকজন ব্যক্তি নেমে আনারের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনজনই গাড়িটিতে করে চলে যান।
ধারণা করা হচ্ছে, গত ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জীবনী গার্ডেনের অভিজাত একটি ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যা করা হয়। এরপর খুনিরা টুকরো করে লাশ গুম করে ফেলে। ওই ফ্ল্যাটটি এমপি আনারের এক সময়ের বাল্যবন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন ভাড়া নিয়েছিলেন। শাহীনের পরিকল্পনায় তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বে দেন ভাড়াটে খুনি ও চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ। তার সঙ্গে আরও চারজন হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বুধবার (২২ মে) কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে তাকে হত্যার তথ্য জানায় ভারতীয় পুলিশ। সন্ধ্যা পর্যন্ত আনোয়ারুল আজিমের মরদেহের খোঁজ মেলেনি। ঢাকার পুলিশ সূত্রে মিলেছে এসব তথ্য।
হত্যা মিশন শেষ করেই আমানুল্লাহ ও শিলাস্তি রহমান নামে এক নারী ঢাকায় এসে আত্মগোপন করেন। এই শিলাস্তি রহমান হত্যার পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামানের বান্ধবী। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ওই দুজনসহ তিনজনকে আটক করেছে। এর পরই বেরিয়ে আসে এমপি আনোয়ারুল হত্যা রহস্য।
ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে কলকাতায় স্বর্ণের ব্যবসা ছিল সংসদ সদস্য আনারের। তারা দুজন সীমান্তে স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি কারবারও নিয়ন্ত্রণ করতেন। চোরাই স্বর্ণের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে পলাতক আক্তারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা গেলে হত্যার কারণ সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে। পাঁচ কোটি টাকার চুক্তিতে এই হত্যাকাণ্ড হয় বলে জানতে পেরেছে ডিবি। ঘটনার পর শাহীন দিল্লি হয়ে নেপাল চলে যান। তিনি মার্কিন পাসপোর্টধারী। ধারণা করা হচ্ছে, এরই মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। এমপি আনারের নিখোঁজ হওয়ার নেপথ্যে কুষ্টিয়ার চরমপন্থি নেতা পলাতক মুকুল বাহিনীর প্রধান আমিনুল ইসলাম মুকুলের হাত থাকতে পারে বলে অনেকে সন্দেহ করলেও পুলিশ তার সম্পৃক্ততা পায়নি।
গত ১২ মে চিকিৎসার কথা বলে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা-গেদে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যান আনার। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি কলকাতায় তার পূর্বপরিচিত বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। গোপালের সঙ্গে তার ২৫ বছরের পারিবারিক সম্পর্ক। পরের দিন কলকাতার স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় আনার চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বের হন। তখন গোপালকে বলে যান, তিনি সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসবেন। এরপর আর বাসায় না ফেরায় ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় গোপাল বিশ্বাস একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর থেকে ঢাকা ও কলকাতা পুলিশ তার অবস্থান শনাক্তে কাজ করে আসছিল।
মন্তব্য করুন