১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত যুদ্ধবিধ্বস্ত এই বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতিতে উন্নত দেশে পরিণত হবে। আর ২০২৬ সালেই বাংলাদেশ ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ এবং ২০৪১ সালেই ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তার বড় প্রমাণ হলো গত কয়েক বছর ধরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি দেশের একটি আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু উদ্বোধন দুটিই উন্নয়নের মাইলফলক। সফলভাবে করোনা মহামারি মোকাবিলা, শিক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নারীশিক্ষা, চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তালাকপ্রাপ্ত নারীদের সহায়তা, অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। আজ ২২ জুলাই ২০২৩ রোজঃ শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুরুল হক অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত গবেষণাভিত্তিক সংগঠন 'এডুকেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি)’ ওই সেমিনারের আয়োজন করে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ও ইআরডিএফবির সম্মানিত সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে ওই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এবং প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদদীন আহমেদ। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন এবং রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সেলিনা হোসেন। সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘ইআরডিএফবি’ এর সম্মানিত সিনিয়র সভাপতি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খান। প্রধান অতিথি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, একটা মানুষ বাংলাদেশের মানুষকে কতটা নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারে তা বঙ্গবন্ধুকে দেখে জানতে পেরেছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে হয়তো বাংলাদেশের জন্ম হতো না। বঙ্গবন্ধু, ৬ দফা, পাকিস্তানি গণহত্যা এসব বিষয়ে পিএইচডির ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানো উচিত। সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মপ্রাণ একজন মানুষ ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার ছিল সততা, নিষ্ঠা, বাঙালি জনগণ তথা গরিব জনগণের প্রতি গভীর প্রেম, যার ফলে বাংলাদেশ এবং এ দেশের মানুষের কল্যাণে জীবন দিতেও ভয় করেনি। বাঙালি জনগণের সব অধিকার নিশ্চিতকরণে তিনি সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। অসাধারণ সাহসী এবং পিতার চেয়েও জেদি জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলাদেশের রিজার্ভ আজ কম হলেও ২৫০০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে যা ১৯৭৩ এ ছিল মাত্র ১৮০০ ডলার। কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, জিডিপির আকার বৃদ্ধি, করোনাকালে বাংলাদেশের কম মৃত্যু- এসব সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বে ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠবে বলে বিশ্বাস রাখি। ‘উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সেমিনার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রধান আলোচক অধ্যাপক ড. কামাল উদদীন তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ায় ইতিহাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন জাতি এ দেশে শাসন ও শোষণ চালিয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত এ দেশকে মুক্তি করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । স্বাধীনতার পর দেশের উন্নয়নের যে যাত্রা করেছেন তার ধারা অব্যাহত রেখেছেন তার সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছে। জাতীয় সংসদকে সচল করা, সারা বাংলাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ, বাল্যবিবাহ হ্রাস, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তৈরি, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, শিক্ষাকে ফ্রী করে দেওয়া, সবাইকে শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ, ১ কোটি ৬৭ লাখ ছাত্রছাত্রীকে উপবৃত্তি প্রদান, ৫০টি সরকারিসহ প্রায় সাড়া বাংলাদেশের প্রায় ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বৃদ্ধি, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি, সাড়া বাংলাদেশে ৪২২৪ টি ডে-কেয়ার সেন্টার তৈরি, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করনে প্রায় ২১,৪৪০ জন নতুন এমবিবিএস ডাক্তার নিয়োগ ইত্যাদি এসব কিছু বর্তমান সরকারের অবদান। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য। সম্মানিত সভাপতি অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, তারুণ্যই হলো অদম্য বাংলাদেশের শক্তি। আমরাই একমাত্র জাতি যারা বঙ্গবন্ধুর মতো একজন বিশ্ব বিখ্যাত নেতা পেয়েছি, ৭ই মার্চের ভাষণ পেয়েছি। এ দেশে ৭৫ হয়েছে সেটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত এই বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার ও অপবাদ দিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না। বঙ্গবন্ধুর মতো আদর্শিক নেতা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো এমন মিরাকল লেডি থাকতে বাংলাদেশ কেন বিদেশি বন্ধুদের দ্বারা পরিচালিত হবে? বঙ্গবন্ধু যেমন বিশ্বে বিরল নেতা তেমনি শেখ হাসিনাও বিশ্বে পিতার মতো বিরল। জাতির পিতা এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার এই অদম্য বাংলাদেশকে কোনোভাবেই দমিয়ে রাখা সম্ভব না। সংগ্রামের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি আমরা সুতরাং আমাদের গণতন্ত্রের সবক দেওয়াটা ঠিক নয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও তা ধরে রাখতে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত এই অদম্য বাংলাদেশ। তরুণ সমাজের উচিত বঙ্গবন্ধুর চেতনা বুকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে অদম্য বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করা। ইআরডিএফবির এই কার্যক্রম জেলায় জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে অদম্য এই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার গল্প বাঙালি জাতির কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. সেলিনা আক্তার বলেন, বাঙালি এক ঐতিহাসিক সংগ্রামী জাতি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শোষণ থেকে মুক্তি লাভ করেছে এই বাঙালি জাতি। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই বাংলাদেশকে নতুন করে নির্মাণ ও এ দেশের গরিব ও মেহনতী মানুষের ভাগ্য বদলে জীবন দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর এখন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের ভাগ্য বদলে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিশ্বের বুকে তুলে ধরেছেন। তাকে প্রায় ২১ বার হত্যার চেষ্টা করেও দমাতে পারেনি। আমাদের অদম্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জীবনের সবটুকু সময় ব্যয় করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের এই অদম্য অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও ইআরডিএফবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপউপাচার্য ও ইআরডিএফবির সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান।
মন্তব্য করুন