এম এম মুসা
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৩, ০২:০৫ পিএম
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৩, ১২:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ এ আরাফাত

সমস্যা সমাধানে সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগে পিছপা হব না

মোহাম্মদ এ আরাফাত। ছবি: সৌজন্য
মোহাম্মদ এ আরাফাত। ছবি: সৌজন্য

মোহাম্মদ এ আরাফাত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য ও ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। আসন্ন উপনির্বাচনে তার প্রার্থিতা ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা

কালবেলা: নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। একাডেমিক জায়গা থেকে মাঠে—অভিজ্ঞতা কেমন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত : আমার জন্য নতুন নয় বিষয়টি। এর আগেও মানুষের কাছে গেছি নৌকার জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য। আর শেখ হাসিনার জন্য যাওয়া মানেই সেটা দেশের জন্য যাওয়া। কারণ বাংলাদেশকে ঘিরে আমাদের যা চাওয়া তা পূরণ করবে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। এখন যে বিষয়টা আলাদা তা হলো আমি এখন নৌকার প্রার্থী। আমি যদি প্রার্থী নাও হতাম তবুও আমি কাজ করতাম। আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। কাজেই আমাকে নৌকার জন্য কাজ করতে হতো এবং আমি সেটা করতাম। বিশেষত, আমি যখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে যুক্ত হয়নি তখনো আমি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার জন্য কাজ করেছি। অনেক ক্ষেত্রে কাজগুলো করা হয়েছে নীরবে-নিভৃতে। গণমাধ্যমের সামনে করা হতো না বলে তা হয়তো প্রকাশ হয়নি।

সুচিন্তা একটি ফাউন্ডেশন হলেও এটা মূলত একটি সংগঠন। সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের শাখা ছিল। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে তরুণদের সঙ্গে কাজ করেছি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্র রক্ষায় সংগ্রাম করেছে। আমাদের সংগঠনের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করে এমন তরুণ, যারা সরাসরি দলে কাজ করতে পারছে না তাদের সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের ব্যানারে একত্রিত করা। আমি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। কাজেই মানুষের কাছে যাওয়া আমার জন্য একদমই নতুন না। যারা আমাকে নতুন করে দেখছেন তারা অনেকেই ভাবছেন হয়তো এটা নতুন। কিন্তু মানুষের সঙ্গে মেশা, মানুষের কাছে যাওয়া বা জনসংযোগ আমি সব সময় করেছি।

যেখানে কাজ করার দরকার আছে সেখানে কাজ করার সুযোগ থাকলে সেটা করা উচিত। আমি সারা দুনিয়ায় কাজ করতে পারব না। বাংলাদেশের সব ঠিক করতে পারব না। তাই যেখানে যতটুকু করতে পারি ততটুকুই করা উচিত। আমার যদি কিছু নেটওয়ার্ক থাকে, কিছু মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে, এমনকি যারা অথরিটিতে রয়েছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের উদ্বুদ্ধ করে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে কাজ করা। এগুলোও আমি করেছি। এগুলোর কোনো কিছুই আমার কাছে নতুন না। এজন্য মাঝে মাঝে আমি ভুলে যাই যে আমি প্রার্থী।

কালবেলা: রাজনীতিতে কেন এবং কীভাবে এলেন?

আরাফাত: রাজনীতিতে আমি সবসময়ই ছিলাম। কিন্তু রাজনীতিতে আমার সংশ্লিষ্টতার প্রচার কখনো সেভাবে করিনি। হয়তো আমি ট্রাডিশনাল রাজনীতিতে ছিলাম না অর্থাৎ কোথাও পদ নিইনি। রাজনীতির একটি ধরন হলো ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড পলিটিক্স। যেখানে ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু হয়। তারপর একটি ছোট পদ—এরপর প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি। সেখান থেকে যুবলীগ এবং এরপর আওয়ামী লীগ। এরপর আওয়ামী লীগ থেকে এমপি, প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হওয়া। এই ধাপগুলোর কথা আমি কখনো ভাবিনি। আমার চিন্তা ছিল কাজ দিয়ে সমাজে পরিবর্তন আনা। আমি এটাও বলছি না, প্রচলিত ধারায় যারা রাজনীতিতে এসেছেন সেটা ভুল ছিল। বরং সেটারও প্রয়োজন আছে।

কালবেলা: ঢাকা ১৭ আসনের মানুষের প্রতিনিধি হয়ে সংসদে যাওয়ার সুযোগ পেলে কী করবেন?

আরাফাত: আমি আগেও গণমাধ্যমে বলেছি—এখনো বলছি, কী করব সেটা বিষয় নয় বরং আমি ইতোমধ্যে কী করা শুরু করেছি সেটাই বিষয়। এখানে যেসব এলাকাগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস সেসব এলাকায় কী কী সমস্যা রয়েছে আমি তার খোঁজ নিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো জনপ্রতিনিধি ছিলেন না। যিনি জনপ্রতিনিধি ছিলেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তাই এমন অনেক কাজ যা আগে করা দরকার ছিল কিন্তু তা হয়নি। মানুষ ভোট দিয়েছেন কিন্তু যে উন্নয়নগুলো হওয়ার কথা ছিল সেগুলো হয়নি। আমি এসব সমস্যার তালিকা তৈরি করেছি। এগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, আমি তা নিয়ে জানার চেষ্টা করছি। আমি এই পাঁচ মাসের জন্য এ ধরনের কোনো মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছি না এবং দিতেও চাই না যা পূরণ করা সম্ভব না। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আগে বা নির্বাচিত হওয়ার আগে যতটুকু সম্ভব হোমওয়ার্ক করে রাখছি। আমি নির্বাচিত হই বা না হই আমি যে সমস্যাগুলো দেখে এসেছি সেগুলো নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করব। আগে এসব এলাকায় আমার এমন গভীর মনোযোগ ছিল না। আর আমি নির্বাচিত হয়ে গেলে তো আমার ওপর দায়িত্ব বর্তাবে। তখন কাজগুলো আমাকে করতেই হবে।

কালবেলা: ঢাকা-১৭ আসনের কী কী সমস্যা চিহ্নিত করেছেন?

আরাফাত: রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ, বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যায়। ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক করতে হবে, পানির সাপ্লাইয়ের সমস্যা রয়েছে, বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। এ ধরনের বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে অনেকে বঞ্চিত। বিভিন্ন ধরনের সমাধান হতে পারে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা রয়েছে বস্তিবাসীদের ফ্ল্যাট তৈরি করে দিয়ে একটা মানসম্পন্ন জীবনযাপনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। এগুলোর ক্ষেত্রে অনেক সময় অনেক ধরনের বাধা সামনে আসে। বস্তিবাসীরা অনেকেই চান যেখানে আছেন সেখানেই থাকবেন কিন্তু সবকিছু সেখানেই চান। অনেক সময় আইনগত প্রক্রিয়ার সমস্যা থাকে। সিটি করপোরেশন চাইলেই সব জায়গায় কাজ করতে পারে না।

আগামী পাঁচ মাসে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব আমি এমন দাবি করছি না। সমস্যাগুলোর মধ্যে থেকে কোনগুলো সমাধান করা সম্ভব সেটি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শুরু করব। যতটুকু করা সম্ভব আমি চেষ্টা করব। সমাধান খোঁজা শুরু করেছি।

কালবেলা: ভোটে আপনার আরও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। আপনি কি নিজেকে এগিয়ে রাখছেন?

আরাফাত: বিএনপি আছে। ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তে বিএনপি আছে। তবে নির্বাচনে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেহেতু এত অল্প সময়ের জন্য তাই ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ কম থাকতে পারে। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় বড় চ্যালেঞ্জ হলো—বিএনপি সব সময় নির্বাচনবিরোধী একটা অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছে। মানুষ যেন ভোট দিতে না আসে সেই চেষ্টা করছে বিএনপি। যদিও বিএনপি আগে এই চেষ্টা করে তেমন সফল হয়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়েছিল। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতমূলক নির্বাচন হয়েছে। সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। কোনোভাবেই বিএনপি ভোটারদের নির্বাচনে আসা থেকে আটকাতে পারেনি। তিনটা ফ্রন্টে আমাদের জিততে হবে। প্রথমত—নির্বাচনে বিজয়ী হতে হবে যেটা আমরা চাই। দ্বিতীয়ত—শুধু নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া নয়, আমরা যথেষ্ট ভোটারকে ভোট দিতে নিয়ে আসতে চাই। তৃতীয়ত—একটি সুন্দর নিরপেক্ষ, পরিচ্ছন্ন নির্বাচন করে গোটা বাংলাদেশ এবং বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে হবে। এই তিনটি জায়গায় আমি জিততে চাই। যে কোনো এক জায়গায় ঘাটতি হলে সেটা আমার পূর্ণাঙ্গ বিজয় হবে না।

কালবেলা: নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ততা কেমন দেখছেন?

আরাফাত: ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ততা আছে। তবে ভোটারদের আগ্রহী করতে আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মীদের অনেক বেশি খাটতে হবে। এখানে ১২৪টি কেন্দ্র রয়েছে এবং এস্টাবলিশমেন্ট আছে ৪৮টি। আমাদের একটি কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি হয়েছে। তার অধীনে ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। এর অধীনে এস্টাবলিশমেন্টভিত্তিক কমিটি এবং তার অধীনে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি হবে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিতে ১০০ জনের বেশি সদস্য থাকবে যারা সরাসরি মাঠে কাজ করবেন। এর কারণ একটাই—ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য আগ্রহী করা। আমরা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করব।

কালবেলা: ঢাকা ১৭ আসনে আওয়ামী লীগের মনোয়ন পাওয়ার জন্য ২২ জন আবেদন করেছিলেন। যে ২১ জন মনোনয়ন পাননি তাদের থেকে অসহযোগিতা পাচ্ছেন কি?

আরাফাত: না, তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অসহযোগিতা পাচ্ছি না বরং সহযোগিতা পাচ্ছি। তাদের মধ্যে অনেকে দলের জন্য অনেক পরিশ্রম করছেন এমনকি আমার চেয়েও তারা বেশি পরিশ্রম করছেন।

কালবেলা: নির্বাচনে আমার সঙ্গে কার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন। হিরো আলম নাকি জাতীয় পার্টির আনিসুর রহমান?

আরাফাত: আমার সঙ্গে অন্যান্য দলের যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের সবার সম্পর্কে আমি কমবেশি জানি। সত্যি বলতে আমার প্রতিপক্ষদের নিয়ে অতটা ভাবছি না। আমি মনোযোগ রেখেছি নৌকাতে। আমি ঢাকা ১৭ আসনের তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একাট্টা করছি যাতে সামনের জাতীয় নির্বাচনে আমরা এই ফোর্সটা নিয়ে কাজ করতে পারি।

কালবেলা: এই এলাকায় দরিদ্র মানুষের ভোট সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তারাই জয়-পরাজয়ের নির্ধারক হবে। আপনি কীভাবে দেখছেন এই বিষয়টি?

আরাফাত: গুলশান বনানী বারিধারা এই এলাকা অভিজাত এলাকা। তবে এটাই সত্যি, এই এলাকায় যিনি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন তিনি অভিজাতদের ভোটে নির্বাচিত হন না। বরং এখানে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন দরিদ্র, নিম্ন আয়ের বা মধ্যবিত্ত মানুষের ভোটে। আর আওয়ামী লীগ নিম্ন আয়ের, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, সাধারণ মানুষের দল। যে কারণে সাধারণ মানুষ বা খেটে খাওয়া মানুষ সব সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল এবং আছে। ঢাকা ১৭ আসনের মধ্যে একটি ডিপ্লোম্যাটিক জোন রয়েছে, আছে ধনীদের এলাকা। অভিজাত মানুষরা এখানে থাকেন তাই এ আসনের একটি আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তবে দিনশেষে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নিজেকে অভিজাত এলাকার সংসদ সদস্য হিসেবে দাবি করার কোনো যুক্তি আমি দেখি না।

কালবেলা: সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে যারা সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে তারাই এখানে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত কেন?

আরাফাত: আমি এটার সঙ্গে একমত। আমি নিজে এটা দেখে এসেছি এবং এর কারণটা আমি অনুমান করতে পারি। ২০০১ সালে এখানে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিল। এলাকায় কাজ হয়নি। তারপর জোটের সমন্বয়ে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ ছিল না বলে দীর্ঘদিন কোনো উন্নয়ন হয়নি। এরপর আওয়ামী লীগের আদর্শিক ফারুক সাহেব যখন নির্বাচিত হলেন অনেক কিছু হওয়ার সুযোগ ছিল কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে তিনি অসুস্থ হয়ে গেলেন এবং দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তাই তার কাজ করার কোনো সুযোগ হয়নি। এখন আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আমাকে যে দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে সেটা শুধু এমপি হওয়া না, দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য আমি কাজ করব।

কালবেলা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। আপনাদের এমপি না থাকলে কি দরিদ্রদের জন্য কোনো কাজ করা যেত না?

আরাফাত: গত ১৪ বছরে গোটা বাংলাদেশ বদলে গেছে। কেন্দ্র থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতে একজন প্রতিনিধি প্রয়োজন হয়। প্রথমত সেখানে আওয়ামী লীগের কেউ ছিলেন না দ্বিতীয়ত পরে যিনি ছিলেন তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তাই কিছুটা ঘাটতি রয়ে গেছে। কিন্তু সার্বিকভাবে উন্নতি হয়েছে।

কালবেলা: ঢাকা ১৭ আসনকে আপনি কেমন জায়গায় দেখতে চান?

আরাফাত: ঢাকা ১৭ আসনকে সারা বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা করে দেখতে হবে, বিষয়টি তেমন নয়। আমি গোটা বাংলাদেশকে একই চোখে দেখতে চাই। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা এলাকা একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি ঢাকা ১৭ আসনের যে এলাকাগুলো পিছিয়ে আছে সেগুলোকে টেনে তুলে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের যে ধারা তার সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে।

কালবেলা: ঢাকা ১৭ আসনেই রয়েছে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। তাদের একটি অবস্থান রয়েছে এখানে। নির্বাচনে তারা প্রার্থীও দিয়েছেন। সব মিলে আওয়ামী লীগের অবস্থানে কোনো ঘাটতি আপনি দেখছেন কিনা?

আরাফাত: ঢাকা ১৭ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান খুবই শক্ত এবং আওয়ামী লীগের ভোটারও বেশি। সাধারণ মানুষ সব সময় আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিল। কিন্তু এই ভোটারদের মধ্যে একটা হতাশা আছে। তারা বারবার ভোট দিয়েছেন, প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজ হয়নি। তারা বুঝতে পারেন এর আগে তারা ভোট দিয়েছেন টেলিভিশনে। তারও আগে লাঙ্গলে। পরে নৌকাতে দিয়েও কেন হয়নি সেটা তারা বুঝতে পারেন। সুতরাং তারা আশাবাদী। তারা মনে করে নৌকার প্রার্থী হিসেবে এবার আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।

কালবেলা: সংসদ সদস্যদের বিষয়ে সাধারণ মানুষের একটা আক্ষেপ থাকে। একবার নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর চাইলেও তারা আর সংসদ সদস্যদের দেখা পান না। আপনার পক্ষ থেকে সে জায়গাটায় কোনো বিশেষ দৃষ্টি থাকবে কী?

আরাফাত: নির্বাচনের আগে যে জনসংযোগ এবং প্রচারণা সেটি অল্প কিছু সময়ের জন্য হয়ে থাকে। ওই সময়ের মধ্যেই সব প্রচারণার কাজটি করতে হয়। আমেরিকার গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো-বাইডেন অল্প সময়ের মধ্যে যত জায়গায় ঘুরেছেন, যত এলাকা ঘুরেছেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তারা কি একই কাজ করেছেন? সেটা কি করা সম্ভব? কখনোই না। তাই আমাদের আরও প্র্যাকটিক্যাল হতে হবে। নির্বাচনের সময় আমার কাজটাই হলো মানুষের কাছে যাওয়া। এজন্যই আমি এ কাজটা করি। আমি নির্বাচিত হওয়ার পরে যদি ওই কাজই করতে থাকি তাহলে কাজগুলো করব কখন! আমি এখন আপনার কাছে যাচ্ছি কেন? কারণ আমি কমিউনিকেট করতে চাচ্ছি, আপনার জন্য কী করতে পারি। আপনি আমাকে বিচার করবেন। আমি আপনার কাছে গিয়ে যে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি সেটা আমাকে করতে হবে। আপনার সঙ্গে আমার কতবার দেখা হলো কি না হলো তার চেয়েও আমি আপনাকে দেওয়া প্রতিশ্রুত কাজগুলো করতে পেরেছি কিনা সেটা দিয়ে আপনি আমাকে বিচার করবেন। আপনি দেখবেন ফলটা পাচ্ছেন কিনা।

তবে এটাও সত্য, কিছু কিছু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন যারা মানুষের কাছে যাওয়ার ক্যাম্পেইনটা করে শুধু জেতার জন্য। জেতার পর নিজের সুবিধাগুলো নিয়ে তারপর আর কোনো খবর থাকে না। এটা অবশ্যই অন্যায়।

কালবেলা: আপনার এই আসনে কিছু মানুষ আছেন যারা অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং সম্পদশালী। তারা কিছু অন্যায় করলেও জনপ্রতিনিধিরা সেখানে বাধা দিতে পারে না। সেই বিষয়গুলো আপনি কীভাবে সমন্বয়ের পরিকল্পনা করেছেন?

আরাফাত: দেখুন আমি এমপি হিসেবে কতটুকু পারব বা কতটুকু পারব না সেটার একটা হিসাব আমার রয়েছে। যেটা এই এলাকার পুলিশের কাজ সেটা এমপির কাজ না। যে কাজগুলো মেয়রের তার অনেক কিছু এমপির কাজ না। কাজগুলো ভাগ করা রয়েছে। আইন এবং সংবিধান আমাকে যতটুকু কাজের অথরিটি দেয় সে অথরিটিটা আমি পূর্ণাঙ্গভাবে প্রয়োগ করব। এতটুকু আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি। তবে আপনি যদি আশা করেন আইন আমাকে যে অথরিটি দেয় না সেটাও আমি করে দেব, তবে সেটা আমি পারব না। আমি এতটুকু নিশ্চয়তা দিলাম, সাংবিধানিকভাবে যতটুকু ক্ষমতা ও কাজের অধিকার আমার রয়েছে এলাকার সমস্যা সমাধানে ততটুকু আমি প্রয়োগ করতে পিছপা হব না।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪ দিনের সফরে ঢাকায় পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাড়ল বাস ভাড়া

পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হবে ক্লিন সিটি : চসিক মেয়র

জুলাই সনদে মিত্রদের ‘কাছাকাছি মতামত’ দেওয়ার পরামর্শ বিএনপির

সন্তানকে বাঁচিয়ে প্রাণ দিলেন বাবা

সৈকতে ফের ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

১০

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

১১

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

১২

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

১৩

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

১৪

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

১৫

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

১৬

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

১৭

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

১৮

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

১৯

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

২০
X