ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশি সামরিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী, লেখক ও বাংলাদেশের সাবেক নির্বাচন কমিশনার। তিনি ২০০৭-২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসর প্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। তিনি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পত্রিকায় কলাম লেখেন। তাছাডা তিনি ২০টির অধিক বই লিখেছেন। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন ও দলের নিবন্ধন নিয়ে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা
কালবেলা : ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে কী পরিমাণ ভোট পড়েছে বলে মনে করেন?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন : ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ৬ থেকে ৭ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে আমার পর্যবেক্ষণ। আমি যে কেন্দ্রে ভোট দিয়েছি সেখানের চিত্র এমনই। আমি আরও কিছু কেন্দ্রে খবর নিয়েছি সেখানের অবস্থাও এমন। কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে। তার পরও আমার মনে হয় না ছয়-সাত শতাংশের বেশি ভোট কোথাও পড়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।
কালবেলা : কেন এমন হলো?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন : প্রথম কারণ হলো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। মানুষ একেবারেই ভোটদানে আগ্রহী নয়। ভোটাররা এমন নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নয়। দ্বিতীয় কারণ হলো—আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যাকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে, তাদের সমর্থকরাই তাকে ভোট দেয়নি। কারণ তিনি রাজনৈতিকভাবে পরিচিত নন। তিনি রাজনীতিবিদ নন। শাসক দলের অনেক রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তারা বেশিরভাগই জনগণের কাছে পরিচিত। কিন্তু শাসক দলের মনোনীত প্রার্থী রাজনৈতিকভাবে জনগণের কাছে অচেনা। ভোটারদের কাছে পরিচিত কেউ নন তিনি। মানুষ এখন ভোট দিতে কোনো আগ্রহ পাচ্ছে না। ভোটের যে একটা আমেজ থাকে এ উপনির্বাচনে সেটি ছিল না—পাঁচ মাসের জন্য লোকে কেন ভোট দেবে? ভোটাররা অত বোকা না—তারা ক্যালকুলেট করতে পারে—তিন চার মাসে কে কতটুকু—কী করতে পারে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো—এটি খুবই খারাপ বার্তা, ভোটাররা ভোট দিতে আসছেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত ভোটাররা প্রশ্নের উত্তর পাবে না—আমি কী পাব ভোট দিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত ভোটাররা আসবে না। যখন তারা দেখবে তাদের যাকে সমর্থন করা দরকার সে আছে, তখন তারা ভোট দিতে আগ্রহী হবে। আমরা ভেবে নেই যে দলের নমিনেশন পেলেই লোকে ভোট দেবে। কিন্তু ঘটনা তা না। এখন জনগণ নিজস্ব লোক চায়।
কালবেলা : এতে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের অনাস্থা প্রকাশ পেল কী?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা আছেই। যারা ভোট অর্গানাইজ করছে তাদের প্রতিও অনাস্থা আছে। এর আগে গ্রামে-গঞ্জেও সবাই এমন উদাহরণ দেখেছে। বাংলাদেশে যতগুলো নির্বাচনী আসন আছে তার মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে এই আসনটিকে। যদিও এখানে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা নির্বাচনে আসেনি।
কালবেলা : দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তির বাইরের মানুষকে এমপি ইলেকশনে প্রার্থী দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন : এ প্রবণতা আমরা দেখছি, যাদের জনসমর্থন আছে তাদের সঙ্গে পার্টির এ বিষয়ে একটা দ্বন্দ্ব আছে। যিনি এখানে প্রার্থী হয়েছেন তিনি সবদিক থেকে ফিট নিশ্চয়ই। লেখাপড়া জানা মানুষ। সবকিছুই ঠিক আছে। কিন্তু তিনি পলিটিক্যাল লোক না। তিনি পার্টির রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন না। ৩০০ আসনে যখন নির্বাচন হয়, তখন দুই বা পাঁচজন ব্যবসায়ী বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু যখন গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে ফোকাস করা হচ্ছে, সেখানে এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার কারণে ভোটাররা আসেনি বলে আমার ধারণা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটাররা এসেছিলেন। এই নির্বাচনে আসেনি।
কালবেলা : ঢাকা-১৭ আসনে উচ্চবিত্তদের বসবাস। তারা অনেকেই ভোট দিতে আসেননি বলা হচ্ছে...
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন : উচ্চবিত্তের কথা বাদ দিলাম, ওই এলাকার নিম্নআয়ের মানুষরা এলেও ছয় শতাংশের বেশি ভোট পড়ার কথা ছিল। এ ছাড়া আমি নিজে ক্যান্টনমেন্ট-ডিওএইচএস এলাকায় থাকি। আমাদের এখানেও ভোটারদের উপস্থিতি খুবই কম ছিল। উচ্চবিত্ত বলেই যে ভোট দিতে যায় না তা নয়। কড়াইল বস্তিতে কত শতাংশ ভোট পড়েছে? মানিকদীতে কত ভাগ ভোট পড়েছে? উচ্চবিত্তদের ভোট বাদ দিলেও বাকিদের ব্যাপারে কী বলা হবে? তারাও ভোট দিতে যায়নি।
কালবেলা : প্রার্থীকে চেনেনি বলে কি ভোটাররা যায়নি?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন : অবশ্যই। ওখানে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিল তাদের পেছনেও অনেক লোক ঘোরার কথা। খালি ক্যান্ডিডেড দিলে হয় না। ক্যান্ডিডেডের পলিটিক্যাল ভ্যালুয়েশনও দরকার আছে।
কালবেলা : গতকাল নির্বাচন কমিশন দুটো দলকে নিবন্ধন দিয়েছে এবং অনেক দলকে দেয়নি—এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন : আমি বুঝতে পারছি না তারা এটা কীভাবে করল। তারা কী ক্রাইটেরিয়াতে এমন রায় দিচ্ছে বা কোর্টে যাচ্ছে এবং কোর্ট এ বিষয়ে কী বলছে—এগুলো নিয়ে তারা বলতে পারবে। এখন কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া বোঝা যাচ্ছে না। যারা অনেক পুরোনো দল তারাও নিবন্ধন পায়নি। অথচ যাদের নাম শুনিনি কোনো দিন তারা কীভাবে কোন ক্রাইটেরিয়া পূরণ করে নিবন্ধন পেল বুঝলাম না।
কালবেলা : নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আরও স্পষ্ট ও স্বচ্ছ হওয়া উচিত নয় কী?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন : আমি জানি না তারা কীভাবে কাজ করছে। কীসের ভিত্তিতে নিবন্ধন দিচ্ছে। তবে অবশ্যই, এ বিষয়ে তাদের কার্যক্রম আরও সুস্পষ্ট হওয়া উচিত এবং একটি পাবলিক স্ক্রুটিনি (জনগণের কাছে জবাবদিহিতা) তাদের করা উচিত।
মন্তব্য করুন