বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। প্রায় এক মাস ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে বিএনপির পক্ষ থেকে জোর দাবি জানানো হচ্ছে। আবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেক নেতাও খালেদা জিয়ার বিষয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। দৈনিক কালবেলার অনলাইন সংস্করণে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে বিএনপির হুঁশিয়ারি’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। প্রকাশিত এ খবরের বিষয়ে (Kalbela Online) এর ফেসবুক পেজে পাঠকের মতামত চাওয়া হয়। সেখান থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে পাঠকদের অনেকেই সমর্থন করেছেন। অপরদিকে একটি অংশ ভিন্ন মতামত দিয়েছেন, বিএনপি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করছে। পাঠকরা মনে করেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া উচিত।
হেলাল লিটন লিখেছেন, ‘রাজনীতির বাহিরেও একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার সকল নাগরিকের রয়েছে। আর বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছেন বাংলাদেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। সরকার তার চিকিৎসার বিষয়টি এভাবে তালবাহানা না করে চিকিৎসার জন্য সুযোগ দেওয়া অবশ্যই দরকার ছিল। সকল মানুষকেই এক দিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু তিনি যদি এভাবে মারা যান তাহলে সরকার কোনোভাবেই এই মৃত্যুর দায় এড়াতে পারবে না। বরং তার প্রতি সরকারের প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ সাধারণ মানুষ জেনে গেল। তার চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে, অন্যথায় আজকের প্রধানমন্ত্রীর কোনোদিন এমন অবস্থা হলে সেই দিন আর কথা বলার সুযোগ থাকবে না তাদের।’
খালেদা জিয়া সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে ইসমাইল হোসাইন লিখেছেন, ‘খালেদা জিয়ার বয়স হয়েছে, সরকার কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতি না করে তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া উচিত, কারণ আজকে যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি যখন ক্ষমতায় থাকবেন না, তখন এমন পরিস্থিতিতে পড়লে যেন চিকিৎসা বঞ্চিত না হন।’
মোস্তফা মিটন লিখেছেন, ‘জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ফরমায়েসি রায়ে বন্দি করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে সরকার। বাংলাদেশের জনগণ, এমনকি আ.লীগেরও কিছু নেতার মানবিক দাবি এই বয়ঃবৃদ্ধ নেত্রীকে তার মৌলিক অধিকার বিদেশে চিকিৎসা সেবার জন্য অনুমতি দেওয়া। অন্যথায় যে কোনো দুর্ঘটনার জন্য সরকারকে সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব নিতে হবে।’
ফরহাদ আহমেদ লিখেছেন, ‘এটা তো গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকার মুখে যতই গণতন্ত্রের কথা বলুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে সরকার যে একনায়কতন্ত্র চালিয়ে দেশ চালাচ্ছে তার প্রমাণ কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার জেলে থাকা। আইনে কোথায় বাধা আছে যে সরকারের মতে কোনো অপরাধী উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে যেতে পারবে না?’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে মো. রাকিব আহমেদ লিখেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। এমতাবস্থায় তার উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন। সরকারের অবহেলার কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোনো কিছু হলে সরকারকেই তার দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে।’
মোহাম্মদ আর আরিফ লিখেছেন, ‘সরকার হীন উদ্দেশে আইনের দোহাই দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
মো. রাজু লিখেছেন, ‘দেশের জনগণ চায় বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা হোক, উনাকে বিদেশে নেওয়া হোক, কারণ বাংলাদেশের চিকিৎসা এতটা ভালো মানের না। এখন সরকার যদি না চায় তাহলে বুঝতে হবে বেগম জিয়া প্রতিহিংসার শিকার। আমরা সাধারণ জনগণ মানবতার কথা বললেও লাভ হবে না, যদি সরকার মানবতার দৃষ্টিতে না তাকায়।’
নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘দেশের নাগরিকদের সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রাখে। এ ক্ষেত্রে সব নাগরিকদের ক্ষেত্রেই আইন সমান হওয়া চায়। মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া সাহেব এবং হাজী সেলিম সাহেবের বেলায় ব্যতিক্রম কেন?’
আরজু খান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটা নাগরিকই সুচিকিৎসার অধিকার রাখে বিধায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিদার। বেগম খালেদা জিয়াকে পরিবারের পছন্দ মোতাবেক চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
মো. শাহিন লিখেছেন, ‘চিকিৎসা পাওয়া দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার অধিকার। অতীতে এ রকম অনেক নজির আছে যে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরেও জামিনে বের হয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিতে পেরেছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে টোটালটাই রাজনীতিকরণ হচ্ছে। এটা শেখ হাসিনার পতিহিংসার কারণে হচ্ছে।’
এদিকে, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে পাঠকদের কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তারা বিএনপির শাসনামল উল্লেখ করে কিছু ঘটনা তুলে ধরেছেন। মো. ফরিদুল ইসলাম রিপন লিখেছেন, ‘মনে আছে ২০০৪ সাল...? মনে আছে শাহ এস এম কিবরিয়া হত্যা...? মনে আছে আহসানুল্লাহ মাস্টারকে দিনে প্রকাশ্য গুলি করে হত্যা করা...? এভাবে অসংখ্য মানুষকে ও শিশুকে হত্যা করেছে, তাদের অনেককে হাসপাতালে নিতে দেয়নি। অ্যাম্বুলেন্স আটকে রেখেছে রাস্তায় যেন মারা যায়। এগুলো কী খালেদা জিয়া ভুলে গেছে...? ওই মানুষগুলো কী অপরাধ করেছিল...? আইভি রহমানের মতো অসংখ্য মেয়েদের জীবন শেষ করেছে, কী অপরাধ ছিল উনাদের...? ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কী হয়েছিল এ দেশে তা তো ভুলেই গেছে জনগণ। মায়া তো আমাদেরও হয়, বিবেক তো আমাদেরও আছে। সবশেষ কর্মফল খুব খারাপ। দোয়া করি উনার জন্য। আমিন।’
সারমিন সুমা লিখেছেন, ‘বিএনপির একটা রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা। তারা খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না কারণ, খালেদা জিয়ার মৃত্যুর ইস্যুতেই সরকার পতন আন্দোলন সফল হবে মনে করছে অধিকাংশ মানুষ। বিএনপির আন্দোলন সক্ষমতা নিয়েও যথেষ্ট পরিমাণে সন্দেহ আছে। কারণ তারা অকার্যকর আল্টিমেটাম দিয়ে সেই গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করেছে।’
বি.এম হানিফ হোসাইন লিখেছেন, ‘বিএনপির হুঁশিয়ারিতে বেগম জিয়া বিদেশ যেতে পারবেন না। বেগম জিয়ার বিচার শুরু থেকে আজ অবদি তারা তার জন্য এমন কোনো আন্দোলন করতে পারেনি যাতে সরকার তাকে ছেড়ে দিবে। যারা এতোদিন আন্দোলন করে ওনাকে জেল থেকে মুক্ত বা স্থায়ী জামিনের ব্যবস্থা করতে পারেননি। তারা কীভাবে ভাবেন যে তাদের এই নড়বড়ে আন্দোলনে সরকার তাকে ছেড়ে দিবে। যারা তাদের নেত্রীর জন্য একটা বালুর ট্রাক সরাতে পারেনি তারা কী করে এসব করবেন?’
মীর কাসেম লিখেছেন, ‘দুর্নীতির মামলায় (জিয়া আরফানাজ ট্রাস্টের এতিমের টাকা আত্মসাৎ) আইনি লড়াইয়ে হেরেই বেগম জিয়া সাজাভোগ করছেন। পরিবারের আবেদনে সারা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার তাকে ঘরে থেকে সাজাভোগ করার সুযোগ দিচ্ছেন। দেশে সর্বোন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন। এ জন্য বিএনপির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। অথচ তা না করে তারা মরণাপন্ন বেগম জিয়ার চিকিৎসা ইস্যু নিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দিচ্ছে।’
গ্রন্থনা : উজ্জ্বল হোসেন
মন্তব্য করুন