কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অসহায়ত্বের সুযোগে অনৈতিক বাণিজ্য

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

দৈনিক কালবেলায় ১৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) ‘হার্টের রিং সিন্ডিকেটে খোদ চিকিৎসকরা’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।

হৃদরোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই ‘রিং’ স্থাপন করতে হয়। চিকিৎসকরা যত দ্রুত সম্ভব প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে চান। ফলে রোগীর স্বজনদের স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে হয়। হার্ট বা হৃদযন্ত্রে যে স্টেন্ট বা রিং স্থাপন করা হয়, সেটির গুণ-মান সম্পর্কে রোগী বা তার স্বজনের জানার কোনো সুযোগ থাকে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর মূল্য নিয়েও মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকে না তাদের। এ অসহায়ত্বের সুযোগে দেশে হার্টের রিং নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন একশ্রেণির সরবরাহকারী ও চিকিৎসক।

এ বিষয়ে নুর হোসাইন নামের এক পাঠক লিখেন, হার্টের রিং সিন্ডিকেটে খোদ চিকিৎসকরা- লাইনটা শুনতেই হৃদয় শিউরে ওঠে। আজকাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করে। বর্তমান সময়ে যারা ডাক্তার তাদের শতকরা দুয়েকজন বাদে সবাই ব্যবসায়ী। তাই সিন্ডিকেট নিয়ে টেনশন করছি না। তবে এ দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট থাকে। শুধু এই সিন্ডিকেটবাজদের জন্য এমনটি হয়। এ দেশের চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন অহরহ। তাই তো স্বাবলম্বীরা এখন দেশের বাইরে চিকিৎসা নেয় বা চেক-আপ করায়। সরকারের উচিত সিন্ডিকেটবাজদের টুঁটি টেনে ধরা।

মো. সিরাজুল মনির নামের আরেক পাঠক আক্ষেপ করে লিখেন, সবকিছুর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট হচ্ছে। চিকিৎসকরা বাদ যাবে কেন। যেমন ওষুধ বিক্রয়ের সিন্ডিকেট, ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানির সিন্ডিকেট, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিন্ডিকেট, হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের সিন্ডিকেট, ওষুধের দোকানিদের সিন্ডিকেট; চিকিৎসা ক্ষেত্রে সব জায়গার সিন্ডিকেট করা হয়ে গেছে। তাহলে শুধু চিকিৎসকরা বাদ যাবে কেন।

এদিকে ওই প্রতিবেদনে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন কালবেলার প্রতিবেদক। সেখানে বলা হয়, রাজধানীর হাজারীবাগের বাসিন্দা শামীম হোসেন। গত ১৭ নভেম্বর তার বাবা হার্ট অ্যাটাক করেন। মুমূর্ষু অবস্থায় নিয়ে আসা হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। ইসিজি পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে ধরা পড়ে হার্টে ব্লক। তাকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে। ৭৩ বছর বয়সী এ বাবা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিক রোগী। ভর্তির পরদিন চিকিৎসক জানান, রোগীর এনজিওগ্রাম করতে হবে। রোগীকে বাঁচাতে হার্টে পরাতে হবে স্টেন্ট বা রিং। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত রোগীকে এ অবস্থায় হার্টে রিং পরানো ঠিক হবে কিনা—জানতে চাইলে চিকিৎসক উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তার সময় নষ্ট না করে রুম থেকে বেরিয়ে যেতেও বলেন। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডাও হয়।

শামীম হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘রোগী বাঁচল কি মরল, সেটা নিয়ে ডাক্তারের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। তার চিন্তা শুধু ব্যবসা। তিনি আমার বাবার ডায়াবেটিসের মাত্রা ২৩-এর ওপরে থাকার পরও হার্টে রিং বসাতে চান। এতে আমরা আস্থা হারিয়ে ফেলি। চিকিৎসক পরিবর্তনের জন্যও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাই। সেটা সম্ভব হয়নি, পরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে আমার বাবাকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসি।’

গত মার্চে ধানমন্ডির ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন খান (৫০) হৃদরোগজনিত ব্যথা নিয়ে ধানমন্ডি গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান। এরপর ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করে পরিবার। রোগীর স্ত্রী নূরুন নাহার বলেন, জাকির হোসেনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া হার্টে রিং পরানো হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে চিকিৎসক ছাড়পত্র দেননি। এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। রোগীর মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব দোষ স্বীকার করে অফিসিয়াল প্যাডে লিখিত দেন। এমনকি রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতালের পরিশোধিত বিল স্বজনদের ফেরত দেন।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র উপপরিচালক ও আইন কর্মকর্তা মো. নূরুল আলম কালবেলাকে বলেন, ‘হার্টের রিঙের (স্টেন্ট) দাম কমিয়েছে সরকার। নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত কেউ বিক্রি করতে পারবে না। অধিক মূল্যে কেউ বিক্রি করলে ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩ অনুযায়ী দুই বছরের কারাদণ্ড কিংবা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার ইক্যুইপমেন্ট অ্যান্ড ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর স্টেন্টের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ট্যাক্স সংযুক্ত করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। স্টেন্টের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে এসব ইনক্লুড করা হলে আমদানিকারকদের জন্য ভালো হতো।’

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শরীয়তপুরের উন্নয়নে কাঁধে কাঁধ মিলে কাজ করব : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

পল্লবীতে যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যায় গ্রেপ্তার ২ 

ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে বড় পরিবর্তন

লটারির মাধ্যমে ডিসি-এসপি বদলির দাবি গোলাম পরওয়ারের

গুগলের জেমিনি লাইভে এসেছে নতুন ৫ সুবিধা

প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র

কাভার্ডভ্যানে ধাক্কা দিয়ে নিজ ট্রাকেই প্রাণ গেল চালকের

ইসির আচরণবিধি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন শিশির মনির

বাংলাদেশ ফুটবল দলকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

জকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শিক্ষার্থীরা বুলিংয়ের শিকার : চন্দন কুমার

১০

নায়কদের দিন শেষ? ২০০ কোটি পারিশ্রমিক নিয়ে শীর্ষে রাজামৌলি

১১

একজন উপদেষ্টার ইশারায় আমাকে আটক করা হয়েছিল : সাংবাদিক সোহেল

১২

কেন সন্তানরা বড় হলে বাবা-মায়ের কাছে কম যায়

১৩

সাংবাদিককে ডিবি তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা বলল টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়

১৪

ময়মনসিংহে ট্রেনে আগুন

১৫

বিজয় দিবসে এবারও প্যারেড হচ্ছে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৬

ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট পেল মাত্র দেড় লাখ মানুষের দেশ

১৭

৩ উইকেট হারিয়ে লাঞ্চে বাংলাদেশ

১৮

সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ইসি ওয়াদাবদ্ধ : সিইসি

১৯

শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

২০
X