ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সম্প্রতি চারটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতারণা এবং মার্কিন নাগরিকদের তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ। সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফ্লোরিডার ফেডারেল আদালতে গুপ্তচরবৃত্তির আইন লঙ্ঘনসহ ৪০টি অভিযোগ এবং নিউইয়র্কে একটি যৌন কেলেঙ্কারির সাথে সম্পর্কিত ৩৪টি অপরাধমূলক কর্মের অভিযোগ করা হয়েছে।
এতকিছুর পরেও, যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হওয়ার জন্য রিপাবলিকান দলের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় হিসাবে ট্রাম্পের অবস্থান অপ্রতিরোধ্য বলে মনে হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিসের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি সমর্থন পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারাগারে যাওয়ার সম্ভাবনাও তার সমর্থকদের মোটেই বিচলিত করছে বলে মনে হচ্ছে না। তার হার্ডকোর সমর্থকদের ১ শতাংশ মানুষও মনে করেন না যে, তিনি কোনো ভুল করেছেন। যা খুবই অদ্ভুত বেপার। আশ্চর্যের বিষয় হলো, শতকরা ৪৩ শতাংশ রিপাবলিকান ট্রাম্পকে আবারও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান।
ট্রাম্পের সমর্থকদের এই দৃঢ়তার কী ব্যাখ্যা রয়েছে? তারা কোনো যুক্তি মেনে ট্রাম্পকে সমর্থন করেন সেই সম্ভাবনা খুবই কম। ডোনাল্ড ট্রাম্প কি ভাবেন বা তার চিন্তাগুলো আদৌ কিছুর সাথে মেলে কিনা সেটা কারো জানা নেই। কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তাতে তিনি খুব একটা পাত্তা দেন না। কিন্তু তিনি যত বেশি মিথ্যা বলেন, তার সমর্থকরা তাকে তত বেশি পছন্দ করে।
সন্দেহ নেই, মানুষের তথ্য গ্রহণ করার নিয়মে পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তিত নিয়মের সাথে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্ক রয়েছে ট্রাম্পকে মানুষের সমর্থনের। শুধু ট্রাম্পের সমর্থকই নন, অনেক মানুষই ইন্টারনেটে ছড়ানো ভুল তথ্যের মধ্যে নিজের একটি বিশ্বাসের জায়গা খুঁজে পান।
ট্রাম্পবাদী প্রচারগুলো গভীরভাবে হতাশাবাদে নিমজ্জিত। ট্রাম্পের শতকরা ৮৯ শতাংশ সমর্থক মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক পতনের মধ্যে রয়েছে। যদিও রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের অধীনে মার্কিন অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে স্থিতিশীল ছিল। ট্রাম্প বেশ সফলভাবে এই ষড়যন্ত্রমূলক উদ্বেগগুলোকে পরিচালনা করেছেন এবং নিজেকে ত্রাণকর্তা হিসেবে প্রচার করেছেন।
ট্রাম্পের ছড়ানো বেশ কিছু বিষয় খুব সহজে মানুষ পছন্দ করেছে। তিনি প্রচার করেছেন–অভিবাসীরা আমেরিকানদের ক্ষতি করছে, আমেরিকা পিছিয়ে পড়ছে। তিনি ধর্ম এবং জাতিগত শ্রেণিবিন্যাসকে উসকে দিয়েছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘আমেরিকানদের তাদের দেশ ফিরিয়ে দেবেন।’
ট্রাম্পের সবচেয়ে সফল এবং সবচেয়ে উদ্বেগজনক কাজটি হলো–তিনি তার নিজের ওপর আইনি অভিযোগগুলোকে তার সব অনুসারীর ওপর আক্রমণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তার প্রচারকে স্তালিনের সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং জার্মানিতে নাৎসি নিপীড়নের সাথে তুলনা করেছেন অনেকে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালতের সমন জারি হওয়ার পর তিনি তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তারা আমার পিছনে আসছে না। তারা আপনাদের পিছনে আসছে এবং আমি তাদের পথে দাঁড়িয়ে আছি যাতে তারা আপনাদের পর্যন্ত যেতে না পারে।’
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ট্রাম্প ধর্মীয় উগ্রবাদীদের উস্কে দিয়েছেন এবং নিজেকে তাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি ডানপন্থিদের নিজের কট্টোর সমর্থক বানিয়েছেন। তবে আমেরিকার অভিজাত শ্রেণি এবং তরুণ ছাত্রদের সমর্থন ট্রাম্প পাননি।
যদি রিপাবলিকান দল থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন, তবে সম্ভবত তার জন্য রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারানোর চেয়ে সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী বাইডেনকে পরাজিত করা কঠিন হবে। তবে আমরা দেখতে পাব- কারাগারে যাওয়া এড়াতে হোয়াইট হাউসে ফিরে যেতে আগ্রহী এমন একজন প্রার্থীর বিপরীতে ৮১ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধকে ভোট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট লোককে রাজি করানো যায় কিনা। (প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে সংক্ষেপিত)
মূল – ইয়ান বুরুমা (IAN BURUMA), ভাষান্তর – মুজাহিদুল ইসলাম
মন্তব্য করুন