গ্রিক উপকথার পরতে পরতে লুকিয়ে আছে জ্ঞানের দেবী অ্যাথেনার উপাখ্যান। দেবরাজ জিউসের নিজের মেয়ে অ্যাথেনার সম্পর্কে এক ভবিষ্যদ্বাণী ছিল এমন—মেটিসের পেটে জিউসের যে কন্যা হবে, সে হবে বুদ্ধিমত্তায় জিউসের সমান। নিজ মেয়ের কাছে বুদ্ধিমত্তার মুকুট হারানোর চিন্তা জিউসকে ষড়যন্ত্রের দিকে ধাবিত করল। আজকে শুধু অ্যাথেনার জন্মের সেই মজার উপাখ্যানটিই সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
টাইটান ওসেনাস ও টাইটানেস টেথিসের তিন হাজার সমুদ্র কন্যার একজন মেটিস। সে ক্ষেত্রে মেটিসকে দ্বিতীয় যুগের টাইটান হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। অবশ্য জ্ঞানের দেবী মেটিসের জন্ম জিউসের অনেক আগে। আর তিনিই ছিলেন জিউসের জীবনের প্রথম ভালোবাসা। মেটিস তার জ্ঞানের সাহায্যে সহজেই বুঝতে পেরেছিলেন জিউসের প্রথম ভালোবাসা তিনি হলেও এ তালিকার শেষ নেই, তাই প্রথমে তিনি জিউসকে এড়িয়েই যাচ্ছিলেন। তবে নাছোড়বান্দা জিউসের বারবার আমন্ত্রণে তিনিও শেষমেশ সাড়া দিলেন। এদিকে পৃথিবীর আদিমাতা গাইয়ার (প্রথম যুগের টাইটানদের মা) ভবিষ্যদ্বাণী, মেটিসের গর্ভে জিউসের প্রথম সন্তান কন্যা সম্পর্কে আর দ্বিতীয় সন্তান যদি হয়, তবে সে হবে পুত্র। আর জিউস যেভাবে তার বাবাকে হটিয়ে দেবতাদের রাজা হয়েছিলেন, একইভাবে এ দ্বিতীয় সন্তানও জিউসকে হটিয়ে পরবর্তী রাজা হবে। জিউস এবার ভয় পেলেন। তিনি পরিকল্পনা করলেন, তার বাবা ক্রোনাস যেভাবে তার ভাইবোনদের গিলে ফেলেছিলেন, তিনিও সেই একইভাবে মেটিসকেও গিলে ফেলবেন। কিন্তু এ কাজটি সহজ ছিল না। তবুও জিউস দেখা করতে গেলেন মেটিসের সঙ্গে। মেটিস তখন সুতা দিয়ে পোশাক বুনছেন। আর সঙ্গে বানাচ্ছেন একটি হেলমেট। মেটিস একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়লেই সেই সুযোগে জিউস তাকে গিলে ফেললেন। তবে জিউস দেরি করে ফেলেছিলেন। মেটিস ততদিনে অন্তঃসত্ত্বা। তিনি তার গর্ভের সন্তানের জন্যই পোশাক বানাচ্ছিলেন। গিলে ফেলার পর জিউসের পেটের মধ্যেই মেটিস পোশাক বোনা শুরু করলেন। আর সেই বোনার শব্দে প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হতো জিউসের। একদিন ট্রাইটন নদীর তীরে ঘুরতে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হলো জিউসের। তার গোঙানি শুনে হাজির হন দেবদূত হার্মিস। জিউস হার্মিসকে পাঠালেন কামার দেবতা হেফাস্টাসকে ডাকার জন্য। হেফাস্টাস তার কুড়াল নিয়ে হাজির হলেন। সোজা কোপ দিয়ে মাথা খুলে ফেললেন জিউসের। জাদুর মতো জিউসের মাথা থেকে যুদ্ধপোশাক আর হেলমেট পরা অবস্থায় বের হলেন এক অপ্সরী। হার্মিস আর হেফাস্টাস যারপরনাই অবাক হলেন। জিউস বুঝতে পারলেন, এই অপ্সরী আর কেউ নন, তার মেয়ে অ্যাথেনা। মা যেহেতু জ্ঞানের দেবী ছিলেন, অ্যাথেনাও হয়ে উঠলেন জ্ঞানের দেবী। জিউস প্রথমে অ্যাথেনাকে স্বীকার করতে না চাইলেও পরবর্তীকালে তার খুব প্রিয় সন্তান হয়ে উঠলেন তিনি। ট্রোজান যুদ্ধের সময় অ্যাথেনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্যারিসের সুন্দরী দেবীর বিচার থেকে শুরু করে পুরো যুদ্ধজুড়েই যুদ্ধকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন অ্যাথেনা। এ ছাড়াও পার্সিয়াস ও হেরাক্লেসকেও (রোমান : হারকিউলিস) বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছিলেন তিনি।
গ্রন্থনা : সঞ্জয় হালদার
মন্তব্য করুন