বদরুন নাহার রক্সী
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৪ পিএম
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বঙ্গমাতা : দেশের তরে উৎসর্গিত মহীয়সী মহাপ্রাণ

হাত নাড়ছেন বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ছবি : সংগৃহীত
হাত নাড়ছেন বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ছবি : সংগৃহীত

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠার পেছনে যে মানুষটির অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন বঙ্গবন্ধুর সব কাজের অনুপ্রেরণাদায়ী, পরামর্শদাতা, সংগ্রামের সাথী, আমরণ সহযাত্রী, জাতির পিতার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর রেণু।

৮ আগস্ট ১৯৩০ সালে জন্ম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের। উনার পিতার নাম শেখ জহুরুল হক। মায়ের নাম হোসনে আরা বেগম।

বঙ্গমাতা সম্পর্কে জানার জন্য সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজনামচা। এই বইগুলোতে বঙ্গবন্ধু তার সফলতার পেছনের কারিগর বঙ্গমাতা সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য লিখে গেছেন। এই বই লেখার পেছনেও অবদান শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের।

এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘‘আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বলল, ‘বসেই তো আছ, লিখো তোমার জীবনের কাহিনি।’ বললাম, ‘লিখতে যে পারি না; আর এমন কী করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলো জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে?’’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার স্ত্রী যার ডাক নাম রেণু, আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেণু আরও একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম।’

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বঙ্গমাতার বিয়ে সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘‘একটা ঘটনা লেখা দরকার, নিশ্চয়ই অনেকে আশ্চর্য হবেন। আমার যখন বিবাহ হয় তখন আমার বয়স বারো-তেরো বছর হতে পারে। রেণুর বাবা মারা যাবার পরে ওর দাদা আমার আব্বাকে ডেকে বললেন, ‘তোমার বড় ছেলের সাথে আমার এক নাতনির বিবাহ দিতে হবে। কারণ, আমি সব সম্পত্তি ওদের দুই বোনকে লিখে দিয়ে যাব।’’

রেণুর দাদা আমার আব্বার চাচা। মুরব্বির হুকুম মানার জন্যই রেণুর সাথে আমার বিবাহ রেজিস্ট্রি করে ফেলা হলো। আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না, রেণুর বয়স তখন বোধহয় তিন বছর হবে। রেণুর যখন পাঁচ বছর বয়স তখন তার মা মারা যান। একমাত্র রইল তার দাদা। দাদাও রেণুর সাত বছর বয়সে মারা যান। তারপর সে আমার মা'র কাছে চলে আসে। আমার ভাইবোনদের সাথেই রেণু বড় হয়। রেণুর বড় বোনেরও আমার আর এক চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিবাহ হয়। এরা আমার শ্বশুরবাড়িতে থাকল। কারণ আমার ও রেণুর বাড়ির দরকার নাই। রেণুদের ঘর আমাদের ঘর পাশাপাশি ছিল, মধ্যে মাত্র দুই হাত ব্যবধান। অন্যান্য ঘটনা আমার জীবনের ঘটনার মধ্যেই পাওয়া যাবে।

বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা যেহেতু একই পরিবার, পরিবেশে বড় হয়েছেন তাই দুজনের মানসিক অবস্থান, চিন্তা-চেতনাও একই রকম ছিল। বঙ্গবন্ধু দেশ ও জাতির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। উনার পড়াশোনা, রাজনীতি ও হাত খরচার টাকাও উনার বাবা-মা দিতেন। বঙ্গমাতাও উনার নিজের জমানো টাকা বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দিতেন। বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আব্বা ছাড়াও মায়ের কাছ থেকে আমি টাকা নিতে পারতাম। আর সময় সময় রেণুও আমাকে কিছু টাকা দিতে পারত। রেণু যা কিছু জোগাড় করত বাড়ি গেলে এবং দরকার হলে আমাকেই দিত। কোনোদিন আপত্তি করে নাই। নিজে মোটেই খরচ করত না। গ্রামের বাড়িতে থাকত, আমার জন্যই রাখত।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘রেণু জানত, আমি সিগারেট খাই। টাকা-পয়সা নাও থাকতে পারে, টাকার দরকার হলে লিখতে বলেছিল।’

বঙ্গমাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে বড় অবলম্বন ও প্রেরণা। এ সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, আমার স্ত্রীর মতো সাহসী মেয়ে খুব কমই দেখা যায়। আমাকে যখন পিন্ডির ফৌজ বা পুলিশ এসে জেলে নিয়ে যায়, আমার ওপর নানা অত্যাচার করে, আমি কবে ছাড়া পাব বা কবে ফিরে আসব ঠিক থাকে না, তখন কিন্তু সে কখনো ভেঙে পড়েনি। আমার জীবনের দুটি বৃহৎ অবলম্বন- প্রথমটি হলো আত্মবিশ্বাস, দ্বিতীয়টি হলো আমার স্ত্রী আকৈশোর গৃহিণী।

অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু এভাবেই তার অবদান লিখছেন- ‘আমার জীবনেও আমি দেখেছি যে, গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোনোদিন আমার স্ত্রী বাধা দেয় নাই। এমনও দেখেছি যে, অনেকবার, আমার জীবনের ১০-১১ বছর আমি জেল খেটেছি। জীবনে কোনোদিন মুখ কালা কিংবা আমার ওপর প্রতিবাদ করে নাই। তাহলে বোধহয় জীবনে অনেক বাধা আমার আসত। এমনও সময় আমি দেখেছি যে, আমি যখন জেলে চলে গেছি, আমি একআনা পয়সাও দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলে-মেয়ের কাছে। আমার সংগ্রামে তার দান যথেষ্ট রয়েছে।’

শৈশবে পিতা-মাতা হারানো বঙ্গমাতার একমাত্র অবলম্বন ছিল বঙ্গবন্ধু। উনার কিছু হলে বঙ্গমাতা জীবনের শেষ অবলম্বনও হারাবেন। এটা জেনেও তিনি কখনো দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা থেকে বঙ্গবন্ধুকে এগিয়ে যেতে বাধা দেননি। কারণ তিনি নিজের চাইতেও দেশ ও মানুষকে বেশি ভালোবাসতেন। ১৯৪৬ সালে যখন ভয়ংকর দাঙ্গা চলছে, সে সময় বঙ্গমাতা নিজে অসুস্থ থাকলেও স্বামীকে দাঙ্গা এলাকায় যেতে বারণ করেননি। ওই সময় স্বামীকে লেখা বেগম মুজিবের একটি চিঠি আমরা দেখতে পাই। তিনি লিখেছেন, ‘আপনি শুধু আমার স্বামী হবার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্য জন্ম নিয়েছেন। দেশের কাজই আপনার সবচাইতে বড় কাজ। আপনি নিশ্চিন্ত মনে সেই কাজে যান। আমার জন্য চিন্তা করবেন না। আল্লাহর ওপর আমার ভার ছেড়ে দিন।’

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন এবিএম মুসার ভাষ্যমতে, ‘সেই কাহিনি নেহাত কিংবদন্তি নয়, হলেও সেই কিংবদন্তি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ভেস্তে যাওয়ার ইতিহাসভিত্তিক ক্যান্টনমেন্টে বসে শেখ সাহেব কী ভাবছেন, কেউ তা জানে না। সারা দেশের মানুষও কিছুটা বিভ্রান্ত। তারা প্রাণ দিচ্ছে, রক্ত দিচ্ছে প্রিয় নেতাকে মুক্ত করে আনার জন্য, মুচলেকা দিয়ে আইয়ুবের দরবারে যাওয়ার জন্য নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন যিনি, তিনিও ছিলেন দ্বিধাগ্রস্ত। সেদিন মুচলেকা দিয়ে নাকি নিঃশর্ত মুক্তি- এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং জানিয়েছিলেন একজন নারী। মুজিবের সহধর্মিণী, যিনি রাজনীতি বুঝতেন না; কিন্তু নিজের স্বামীকে জানতেন। বুঝতে পেরেছিলেন তার স্বামীর মানসিক দ্বন্দ্ব। বন্দি স্বামীকে চিরকুট পাঠালেন। হাতে বঁটি নিয়ে বসে আছি; প্যারোলে মুচলেকা দিয়ে আইয়ুবের দরবারে যেতে পারেন; কিন্তু জীবনে ৩২ নম্বর আসবেন না।

বঙ্গমাতা যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও বঙ্গবন্ধুকে সুন্দর পরামর্শ দিয়ে কাজকে সহজ করে দিতেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও আওয়ামী লীগের নেতা আঃ রহমান লিখেছেন, ২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হতো। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের পতাকার পরিবর্তে সারা দেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগের দিন ২২ মার্চ রাতে খেতে বসে বঙ্গবন্ধুকে চিন্তাক্লিষ্ট দেখে বেগম মুজিব জানতে চেয়েছিলেন- ‘পতাকা ওড়ানোর ব্যাপারে কী কোনো সিদ্ধান্ত নিলেন?’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘না, নিতে পারিনি। আমি পতাকা ওড়াতে চাই। একটাই ভয়, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এখনো ঢাকায়। পাকিস্তানিরা বলবে, আলোচনা চলা অবস্থাতেই শেখ মুজিব নতুন পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এ অজুহাত তুলেই তারা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর সামরিক হামলা চালাবে।’

এ অবস্থায় বেগম মুজিব পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘আপনি ছাত্রনেতাদের বলুন আপনার হাতে পতাকা তুলে দিতে। আপনি সেই পতাকা বত্রিশ নম্বরে ওড়ান। কথা উঠলে আপনি বলতে পারবেন, আপনি ছাত্রজনতার দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন।’

বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে জাতির অভিভাবক হয়ে গৃহিণী থেকে একজন কৌশলী, অভিজ্ঞ, সচেতন নেতা হয়ে দিকনির্দেশনা দিতেন বঙ্গমাতা। ছয় দফার সমর্থনে লিফলেট বিতরণ করতেন, নিজের অলংকার বিক্রি করে দলের তহবিল জোগাতেন, নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিতেন, তাদের সমস্যা শুনতেন।

বঙ্গমাতার জ্যেষ্ঠ কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়গুলো কারান্তরালে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। তার অবর্তমানে মামলা পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দলকে সংগঠিত করা, আন্দোলন পরিচালনা করা- প্রতিটি কাজে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বেগম মুজিব। তিনি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের বলিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন নেপথ্যে থেকে।

বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও সংগ্রামের সব অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।’

তিনি বলেন, ‘আমার মা ৭ জুন হরতাল (ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচির সমর্থনে ১৯৬৬ সালে দেশব্যাপী হরতাল) সফল করার পেছনে অবদান রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে, কীভাবে আন্দোলন করতে হয় এবং সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হয় তা তিনি জানতেন।’

বাঙালির স্বাধীনতার ঘোষণা- ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গমাতার অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। বঙ্গকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ‘কিছু স্মৃতি কিছু কথা’ বইয়ে লিখেছেন– বাসায় গিজগিজ করছে মানুষ। বেগম মুজিব সবাইকে তাদের ঘর থেকে বাইরে যেতে বললেন। ঘরে তখন বঙ্গবন্ধু বেগম মুজিব আর হাসিনা। তিনি বললেন, তুমি দশটা মিনিট শুয়ে রেস্ট নাও। শেখ হাসিনার ভাষায়– ‘আমি মাথার কাছে, মা মোড়াটা টেনে নিয়ে আব্বার পায়ের কাছে বসলেন। মা বললেন, মনে রেখো, তোমার সামনে লক্ষ মানুষের বাঁশের লাঠি। এই মানুষগুলোর নিরাপত্তা এবং তারা যেন হতাশ হয়ে ফিরে না যায় সেটা দেখা তোমার কাজ। কাজেই তোমার মনে যা আসবে তাই তুমি বলবা। কারও কোনো পরামর্শ দরকার নেই। তুমি মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করো, কাজেই কী বলতে হবে তুমি জানো। এত কথা, এত পরামর্শ কারও কথা শুনবার তোমার দরকার নেই। এই মানুষগুলোর জন্য তোমার মনে যেটা আসবে সেটা তুমি বলবা।’

একজন পরিপূর্ণ ও সর্বগুণসম্পন্না মহীয়সী নারী ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। মাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা লিখেছেন- জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখে আসছি, আমার বাবা কারাবন্দি। মা তার মামলার জন্য উকিলদের সঙ্গে কথা বলছেন, রাজবন্দি স্বামীর জন্য রান্না করে নিয়ে যাচ্ছেন। গ্রামের শ্বশুর-শাশুড়ি ও আত্মীয়স্বজনের খবরাখবর রাখছেন। আবার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। যারা বন্দি তাদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে টাকাও পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কারাগারে দেখা করতে গিয়ে স্বামীর কাছে বাইরের সব খবর দিচ্ছেন এবং তার কথাও শুনে আসছেন। কাউকে জানানোর থাকলে ডেকে জানিয়েও দিচ্ছেন। এরপর আছে তার ঘর-সংসার। এরমধ্যে ছেলেমেয়েদের আবদার, লেখাপড়া, অসুস্থতা, আনন্দ-বেদনা সবকিছুর প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হয়। এতকিছুর পরও তার নিজের জন্য সময় খুঁজে নিয়ে তিনি নামাজ পড়ছেন, গল্পের বই পড়ছেন, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গল্প করছেন।

কী ভীষণ দায়ভার বহন করছেন! ধীরস্থির এবং প্রচণ্ডরকম সহ্যশক্তি তার মধ্যে ছিল। বিপদে, দুঃখ-বেদনায় কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। বরং সেখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে চেষ্টা করেছেন- এটাই ছিল তার চরিত্রের দৃঢ়তা, তার ব্যক্তিত্বের প্রকাশ।

শত বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও বঙ্গমাতার অতুলনীয় অবদানে বাঙালি জাতির কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা আসলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনে মনোযোগ দেন বঙ্গবন্ধু। আর তাকে সবসময় পাশে থেকে পরামর্শ দিতেন বঙ্গমাতা।রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হয়েও তিনি সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। সুতি কাপড় পরতেন। নিজেই সংসারের সব কাজ করতেন। কারণ তিনি ভোগবিলাসে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি ছিলেন ত্যাগে বিশ্বাসী।

দেশ যখন এগিয়ে চলছিল তখনই ’৭১-এর পরাজিত শক্তি চক্রান্ত করে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে জাতির পিতাকে হত্যা করতে, ১৫ই আগস্টের কালো রাতে মীরজাফরের প্রেতাত্মা, ’৭১-এর পরাজিত হায়েনাদের এ দেশীয় দোসররা সপরিবারে হত্যা করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তারই সাথে হত্যা করা হয় মহীয়সী নারী, বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী, রত্নগর্ভা, বাঙালি জাতির মা, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে।

ঘাতকরা জানত বঙ্গমাতাকে বাঁচিয়ে রাখলে তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। বঙ্গবন্ধুর জেলজীবনে যেভাবে বঙ্গমাতা দেশকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও বঙ্গমাতা তার লাখো কোটি সন্তানকে নিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করে যাবেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আর তাই বঙ্গমাতাকেও হত্যা করে অভিশপ্ত মীরজাফরের উত্তরসূরিরা।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ড. ইউনূসের কর ফাঁকি মামলার প্রথম দিনের শুনানি শেষ

ঝড়ের সঙ্গে সতর্ক সংকেত জারি

ডো‌নাল্ড লুর সফরে বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডেঙ্গু রোগীর বাড়িসহ আশপাশে সচেতনতা জোরদারের তাগিদ মেয়র আতিকুলের

নিপুন সমর্থিত শিল্পীদের মিশা-ডিপজলকে সংবর্ধনা

বাড়াবাড়ি করবেন না, বিদায় করে দেব, এমপিকে কাউন্সিলরের হুমকি

ট্রেনে কাটা পড়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ঘরে বসে নিশ্চিন্তে কোরবানি হবে বেঙ্গল মিটে

দুবাইয়ে বিদেশিদের গোপন সম্পদ, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশি

বিএনপির আরও ৪ নেতা বহিষ্কার

১০

তীব্র গরমে ক্লাসেই অসুস্থ ৩০ শিক্ষার্থী

১১

ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ দিচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ

১২

এলসভিয়ার থেকে ফ্রি ই-বুকের সুবিধা পাবে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

১৩

ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগ শনিবারেও খোলা থাকবে

১৪

লু’র কথার পরে ফখরুলের বক্তব্যের আর কোনো মূল্য নেই : কাদের

১৫

রাসেল ভাইপার আতঙ্কে মিলছে না ধানকাটার শ্রমিক!

১৬

জেলায় জেলায় ডাকাতি করাই তাদের নেশা

১৭

প্রমাণ হলো এসএমসি প্লাস অনুমোদনহীন, কর্ণধারকে জরিমানা

১৮

উন্নয়ন প্রকল্পে মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান দিয়ে সমীক্ষা করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

১৯

নিপুন অসুস্থ, তাকে মানসিক ডাক্তার দেখানো জরুরি : জায়েদ খান

২০
X