দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৭ ডিসেম্বর(২০২৩) ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’— এই স্লোগানে এবারের ইশতেহার দিয়েছে একটানা তিন মেয়াদে সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পর এবার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে বিশেষ পদক্ষেপ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক খাতের সুশাসনের ওপর জোর দিয়ে আসন্ন নির্বাচনের ইশতেহার উপস্থাপন করা হয়েছে। বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হবে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন, যা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্জিত হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে তরুণদের প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৩১ লাখ যুবকের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২০৩০ সাল নাগাদ অতিরিক্ত দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের রূপরেখা সংবলিত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের স্লোগান ছিল— ‘দিনবদলের সনদ’। সেই ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ছিল দলটির। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির ইশতেহারের শিরোনাম ছিল—‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। আর সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইশতেহারের শিরোনাম ছিল—‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’।
লেখাবাহুল্য, নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে দেখা গেছে বিএনপি-জামায়াত তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, বিশেষত জোট সরকারের মেয়াদকালে। এমনকি ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েও জনগণের জন্য কিছুই করতে পারেনি খালেদা জিয়া সরকার। পক্ষান্তরে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে শেখ হাসিনা সরকার রূপকল্প-২০২১-এর ঘোষণা দিয়েছিল। দিনবদলের সনদ হিসেবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করার পর নানা বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে ২০১৪ ও ২০১৮-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন জননেত্রী।
আসলে নেতৃত্বের অসামান্য গুণে আওয়ামী লীগ সবসময় রাজনৈতিক অঙ্গীকার পূরণে এগিয়ে থাকে। এজন্য শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা থাকা সত্ত্বেও সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে সব সময়ই যে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি, এমন দাবি করব না তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা যা বলি, তা বাস্তবায়ন করি।’ অর্থাৎ অঙ্গীকার পূরণে শেখ হাসিনা সরকার সবসময়ই আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা আন্তর্জাতিক সংকটের মধ্যে সততা ও নিষ্ঠার পরিপোষকতা প্রদর্শনই অসামান্য সব উন্নয়নের জয়রথ নির্মাণ করেছে। অথচ ‘নির্বাচন এলেই মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ এবং উন্নয়নবিরোধী একটি চক্র ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে সক্রিয় হয়ে ওঠে- বলেছেন শেখ হাসিনা।
তার মতে, ‘নির্বাচনে কূটকৌশল অবলম্বন বা কারচুপির মাধ্যমে কিংবা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে তারা আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে। সফল না হলে জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিশোধ স্পৃহায়। অগ্নিসন্ত্রাস, যানবাহন পোড়ানো, বোমাবাজি, নাশকতা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে ভীতি-সন্ত্রস্ত করে ঘরবন্দি করতে চায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২৩ সালেও অপশক্তির তৎপরতার ব্যতিক্রম হয়নি। তার ওপর এবার তারা বিদেশ থেকেও কলকাঠি নাড়ছে।’ নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সময় এসেছে। এক্ষেত্রে জনগণকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ বাংলাদেশ সকল জনগণের, শেখ হাসিনা সরকারে আস্থা সব বাঙালির।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উপস্থাপিত নির্বাচনী ইশতেহার-২০২৪ ঘোষণায় রয়েছে ১১ বিষয়ের বিশেষ অগ্রাধিকার। ইশতেহারে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতায় আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে আওয়ামী লীগ। যে ১১ বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে তা হলো—১. দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ২. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। ৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো। ৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ৭. নিম্নআয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। ৮. সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা। ৯. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা। ১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো। প্রকৃতপক্ষে ওই ১১ বিষয় নির্ভর করছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর। কারণ পাঁচ বছর মেয়াদি সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা স্থিতিশীল থাকায় আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে। বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।
১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ ধান ও দানাদার শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে। স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রবর্তন এবং বর্গাচাষিদের বিনা জামানতে কৃষিঋণ প্রদান করার মধ্য দিয়ে সেসময়কার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হয় শেখ হাসিনা সরকার।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা সরকার জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার অর্জনে সচেষ্ট হয় এবং পরপর ৩টি নির্বাচনের ইশতেহার অনুযায়ী দেশের উন্নয়নে নিবেদিত থাকে। ফলে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটেছে। আজকের বাংলাদেশ দারিদ্র্যক্লিষ্ট, অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশ নয়। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সম্ভাবনার হাতছানি দেওয়া দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা দুরন্ত বাংলাদেশ। বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস দেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে নি। করোনা মহামারিসহ নানা অভিঘাত মোকাবিলা করে সেই প্রমাণ শেখ হাসিনা সরকার রেখেছে। করোনা মহামারির মধ্যেই ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হয়। সে সময়ই জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বলাবাহুল্য, আওয়ামী লীগ সরকার গত তিন মেয়াদে যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়ন করেছে এবং এখনও কিছু কাজ অব্যাহত আছে। এজন্য আগামী নির্বাচনে আবারও বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনারা আমাদের ভোট দিন, আমরা আপনাদের শান্তি ও উন্নয়ন উপহার দিব।’ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া ২০৩১ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের কাতারে নিয়ে যাওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে নির্বাচনী ইশতেহারে। একইসঙ্গে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা এবং সমাজে ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে বলে আশাবাদী করা হয়েছে জনগণকে।
নির্বাচনী ইশতেহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঋণ-কর-বিল খেলাপি এবং দুর্নীতিবাজদের শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। খেলাপি ঋণ বারবার পুনঃতপশিল করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা ও ঋণ প্রস্তাব মূল্যায়ন যাতে বস্তুনিষ্ঠ হয়, সেজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রভাবমুক্ত রাখা হবে।
গত ১৫ বছরে গ্রামীণ জীবনে যে রূপান্তর ঘটেছে তাকে আরও গতিশীল করার জন্য প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষিতে সহায়তা ও ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা হবে। অন্যদিকে শিল্প উন্নয়ন ও বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া অব্যাহত রাখা হবে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্যাস ও এলপিজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
শিক্ষাখাতে শেখ হাসিনা সরকারের অগ্রগতি ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য ইশতেহারে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানদের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ আরও প্রসারিত করা হবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার মৌলিক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবা উন্নত ও সম্প্রসারণ করার কথা বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি নাগরিককে একটি ইউনিক হেলথ আইডি দেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে অটোমেশন ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া দেশের সব নাগরিক যেন একই রকম স্বাস্থ্যসেবা পায়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু করা হবে বলে জানা গেছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় শেখ হাসিনা সরকারের অনন্য কৃতিত্বকে ধরে রাখার জন্য নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা, দূষণমুক্ত পরিবেশ গতে তোলা এবং পানি সম্পদ রক্ষায় ইতোমধ্যেই যেসব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা হবে। অন্যদিকে জঙ্গিবাদী তৎপরতার অবসান ঘটিয়ে দেশকে যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তিতে তুলে ধরা হয়েছে সেই সাফল্য ধরে রাখার জন্য বলা হয়েছে- বাংলাদেশের পাশাপাশি এই অঞ্চল থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়া টাস্কফোর্স গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আওয়ামী লীগ।
মূলত আওয়ামী লীগের ইশতেহারের মূল বক্তব্য হলো-জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট সমাজ গঠনের মাধ্যমেই মূলত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা হবে।
আশার কথা হচ্ছে আওয়ামী ক্ষমতায় এলে, রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে সচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করা হবে। আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত হবে। এক্ষেত্রে সংবিধানকে সমুন্নত রেখে মানবাধিকার নিশ্চিত করা এবং সর্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোনো চেষ্টা প্রতিহত করার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে তা যৌক্তিক ও কার্যকর হবে এ প্রত্যাশা সকলের। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বহির্বিশ্বে যে প্রোপাগান্ডা এবং মিসরিপ্রেজেন্টেশন রয়েছে, সে বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করাও জরুরি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার ধারা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই প্রসংশনীয় সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে সাংবাদিক নির্যাতন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং মিথ্যা মামলা রোধ করার চিন্তাও ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি। পাশাপাশি ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ অনুযায়ী ব্যক্তির গোপনীয়তা ও তথ্য সংরক্ষণ করার বিষয়টি সামনে এসেছে। এই আইনের অপব্যবহার রোধেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
মানুষের হয়রানি রোধ করে সহজে সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে জনকল্যাণমুখী, জবাবদিহিতামূলক, দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে বলে অঙ্গীকার করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ, উদ্যোগী, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর, দুর্নীতিমুক্ত ও জনকল্যাণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলমান থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান ঘটানো একটি তাৎপর্যবহ কাজ।
সর্বোপরি দ্রব্যমূল্যেরে সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকার বিষয়টি মধ্যবিত্তের কাছে অতি প্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। প্রশাসনে দুর্নীতি নিরোধের লক্ষ্যে সকল ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণ করা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠ্যক্রমে দুর্নীতির কুফল এবং দুর্নীতি রোধে করণীয় বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করার প্রতিশ্রুতি সত্যিই প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়া সন্ত্রাস দমনের পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং সে লক্ষ্যে রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের প্রাধান্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম দিক। সব মিলে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি হবে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মাস এবং নতুন সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে দলটি বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করবে- এ প্রত্যাশাই নির্বাচনী ইশতেহারে অভিব্যক্ত হয়েছে।
ড. মিল্টন বিশ্বাস: বঙ্গবন্ধু গবেষক, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, [email protected])
মন্তব্য করুন