ফাইনালের মঞ্চ, গাদ্দাফি স্টেডিয়াম ভরা দর্শক, আর দুই দলের লড়াই—শেষ পর্যন্ত পিএসএল ইতিহাসের পাতায় আবারও সোনালি অক্ষরে লেখা হলো লাহোর কালান্দার্সের নাম। তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তান সুপার লিগের শিরোপা জিতে ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের পাশে জায়গা করে নিলো তারা।
দলীয় পারফরম্যান্সের পাশাপাশি জ্বলজ্বল করেছে কুসল পেরেরা ও সিকান্দার রাজার ব্যাট। আর বাংলাদেশের তরুণ স্পিনার রিশাদ হোসেন তুলে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট, জয়ের পথে রেখে গেছেন মূল্যবান ছাপ।
২০২ তাড়া করে শেষ বলে জয়—কুসল-রাজার মহাকাব্যিক চিত্রনাট্য
শুরুটা করেছিলেন মোহাম্মদ নাঈম ও ফখর জামান, ৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে। ফখর দ্রুত ফিরলেও (১১), ক্রিজে এসেই ঝড় তোলেন আবদুল্লাহ শফিক ও নাঈম।
নাঈম মাত্র ২৭ বলে ৪৭ রান করে ফেরেন, শফিক খেলেন ৪১ রানের ইনিংস। তবে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন শ্রীলঙ্কান তারকা কুসল পেরেরা, যিনি মাত্র ২৮ বলে তুলে নেন অর্ধশতক, আর পঞ্চম উইকেটে সিকান্দার রাজার সঙ্গে গড়ে তোলেন ম্যাচজয়ী পার্টনারশিপ।
শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৩ রান—রাজার ব্যাট থেকে এক চার ও এক ছক্কায়, এক বল বাকি থাকতেই শিরোপা নিশ্চিত করে লাহোর।
রিশাদ স্পর্শ, সাকিব-মিরাজের নীরব উপস্থিতি
বাংলাদেশের তরুণ লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন তুলে নেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট—ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে কোয়েটার মাঝের ব্যাটিং ভাঙনে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি।
তবে অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ ফাইনালের একাদশে জায়গা পাননি। এরপরও তাদের উপস্থিতি লাহোর শিবিরে অভিজ্ঞতার ভারসাম্য রেখেছে।
এই জয়ের মাধ্যমে তারা তিনজনই হয়ে গেলেন পিএসএল চ্যাম্পিয়ন, যা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত।
এদিকে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে কোয়েটার শুরুটা ভালো ছিল না। তবে হাসান নবাজ দুর্দান্ত ৭৬ রান করে দলকে টেনে তুলেন। শেষ দিকে ফাহিম আশরাফ মাত্র ৮ বলে ২৮ রান করে স্কোর পৌঁছে দেন ২০১-এ।
তবে লাহোরের বোলিং ইউনিট—শাহীন আফ্রিদি, রিশাদ হোসেন ও সিকান্দার রাজা যথাযথ সময়েই আঘাত হানেন।
ইনিংস বিরতিতে আয়োজন করা হয় পাকিস্তান নৌবাহিনীকে উৎসর্গ করা এক বিশেষ অনুষ্ঠানের। উপস্থিত ছিলেন নৌবাহিনী প্রধান, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিদেশি কূটনীতিকরা।
লিগের শুরুতে বাজে ফর্ম, মাঝপথে দল গোছানো, আর শেষে রাজকীয় ফিনিশ—লাহোর কালান্দার্স যেন একটা সিনেমার মতো সফর পেরিয়ে শিরোপা জিতলো। কুসল পেরেরা, সিকান্দার রাজার ব্যাটে লেখা হলো ফাইনালের মহাকাব্য। সঙ্গে যুক্ত হলো বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটারের গর্বময় নাম—যাদের হাত ধরে লাল-সবুজও শামিল হলো এই সাফল্যের আনন্দে।
মন্তব্য করুন