অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
রোববার (২৫ মে) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঞ্চের এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
এ সময় গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে আরও তিন দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো- গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর ঐক্য বজায় রাখতে ও পারস্পরিক দূরত্ব কমাতে জাতীয় রাজনৈতিক পরিষদ গঠন করা। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আগামী জুলাই মাসের ভেতরেই জুলাই সনদ তৈরি করা এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতে এই মুহূর্তে যেসব সংস্কার করা সম্ভব, সেগুলো যথাসম্ভব দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাড. হাসনাত কাইয়ূম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এবং নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার।
তারা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের উপরে চেপে বসা এক চরম অগণতান্ত্রিক সরকারকে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ভেতর দিয়ে পরাজিত করেছে। এ দেশের ছাত্র-শ্রমিক-শ্রমজীবী জনগণ, মধ্যবিত্ত, নানা বয়সের, শ্রেণি, লিঙ্গ ও জাতি পরিচয়ের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে এই লড়াই গড়ে তোলেন। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন দিয়ে শুরু হলেও ২৪-এর অভ্যুত্থান দ্রুতই হয়ে ওঠে এ দেশের গণতন্ত্রকামী, মুক্তিকামী সব রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর এক সম্মিলিত লড়াই। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান দেশের মানুষকে নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছে এক নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের।
তারা আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে সব দলের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সময়ের জন্য জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। এই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতেই এখানে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের দায়িত্ব এই সরকারের উপরে অর্পিত হয়েছে। যে ধরনের আস্থার সংকট, বিরোধ কিংবা দূরত্ব তৈরি হয়েছে- তা কাটাতে এসব বিষয়ের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। এসব বিষয়ে একটি রোডম্যাপ সবার সম্মতির ভিত্তিতে গ্রহণ করে সেটিকে বাস্তবায়ন করার পূর্ণ কর্তৃত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রয়েছে।
জাতীয় স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরনের জাতীয় সম্মতি প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। এই মুহূর্তে পারস্পরিক দোষারোপ, দায় চাপিয়ে দেওয়া কিংবা বিভাজনের মাধ্যমে দেশকে সংকটের মুখে ঠেলে দেওয়ার যে কোনো প্রচেষ্টাকে সচেতনভাবে প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে আমরা সব দল ও নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানাই।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি- গণঅভ্যুত্থানের হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমে লড়াই করে যাচ্ছেন, সে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, ভাসানী জনশক্তি পার্টির মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিম, মুখপাত্র মো. আবদুল কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিকদার হারুন মাহমুদ, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহফুজুর রহমান, খলিলুর রহমান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন