নির্বাচনের আগে মাঠ শূন্য করতে সরকার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ছাত্রদলসহ নেতাদের গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে বিভিন্ন অস্ত্র মামলা দায়েরের প্রসঙ্গ টেনে রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এগুলো হচ্ছে একই কাজ। অর্থাৎ এই সমস্ত ছুতা খাড়া করে যেন তারা আরও বেশি করে এসব করতে পারে এবং পরিস্থিতি নিজেরাই সৃষ্টি করবে, সৃষ্টি করে বিএনপির ওপরে আবার দোষ চাপাবে- এটা আজকে নতুন কথা নয়। পুরোনোভাবে একই কায়দায় তারা করছে, এখন তারা বেশি করবে।
তিনি বলেন, এ কথাগুলো বলে বলে তারা গ্রাউন্ডটা তৈরি করে। প্রথমে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বললেন যে- সন্ত্রাস হবে। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, সন্ত্রাস করতে দেব না। সন্ত্রাসটা হলো কোথায়? আমরা কোথায় সন্ত্রাস করলাম। যা কিছু সন্ত্রাস তো করছ তোমরা (সরকার)। রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস করছ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিদিন পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক যে প্রেক্ষিত- এই প্রেক্ষিতে এ ঘটনাগুলো একটাই ইঙ্গিত দেয়, তারা (সরকার) যেভাবেই হোক, যে করেই হোক- সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধীদলকে মাঠ থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজেরা আবার সেই ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করছে। এদের মূল উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে, বিরোধীদলকে মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া। এটাই হচ্ছে তাদের একমাত্র লক্ষ্য, সেই লক্ষ্যে তারা যাচ্ছে।
ডিবির অভিযোগ বানোয়াট দাবি করে তিনি বলেন, ডিবির সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য একদম বানোয়াট। ডাহা মিথ্যা শুধু নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। পুলিশের ভাষ্য থেকে বুঝা যায়, তাদের বক্তব্য পলিটিক্যাল। তাহলে বুঝতেই পারছেন দেশের অবস্থা কী।
ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা সন্ত্রাসী পার্টি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে, তারা নিজেরোই সন্ত্রাস করে। আর পুলিশ এই অবৈধ সরকারের হুকুম-নির্দেশে সন্ত্রাসী কাজ করছে- যেটাকে আমরা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বলি, আজকে সেই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস পর্যন্ত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারি সবগুলো সংস্থা একইভাবে কাজ করছে। আমাদের কাছে কিছু কিছু ডকুমেন্ট আছে- যেগুলো আমরা প্রয়োজন হলে দেখাব। যেখানে বিচারকদের বলা হচ্ছে, তাড়াতাড়ি মামলা শেষ করো, এত তারিখের মধ্যে মামলা শেষ করতে হবে, সাক্ষী না আসলে তাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে এসে সাক্ষী দেও- এই একটা ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে পুলিশি নির্যাতন, অন্যদিকে বিচারে দ্রুত সাজা দেওয়ার ভয়াবহ কর্মসূচি তারা নিয়েছে। লক্ষ্য একটাই, তারা পুরো মাঠ খালি করে দিতে চায়।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে পদযাত্রার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলি, হামলা এবং নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় গত রাতে সাদা পোশাকে পুলিশ ঘেরাও করে রাখা ও সেখান থেকে বেরুনোর পর দলের মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনসহ কয়েকজনকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার, গত ১৮ আগস্ট ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানসহ সংগঠনটির ছয়জনকে সাদা পোশাকে তুলে দিয়ে পরে অস্ত্র মামলায় আসামি করার ঘটনাগুলো তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দিয়েছে। একটা প্রেস ব্রিফিং করেছে ডিবি। সেই ব্রিফিংয়ে অস্ত্রগুলো দেখিয়েছে। এগুলো কোনো প্রাগৈতিহাসিক যুগের অস্ত্র ছিল- তা দেখলেই বুঝা যায়। একেবারেই পুরোনো। ডিবি বলছে, বিএনপি এখন নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য অস্ত্র জোগাড় করছে। এটা ইন্টারেস্টিং পার্ট। অর্থাৎ পুলিশ এখন এইভাবে পুরোপুরি পলিটিক্যাল একটা পার্টির পক্ষে কথা বলছে।
মন্তব্য করুন