বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশের জনগণের দুশমন হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। তারা আমাদের ভূ-খণ্ডকে আসামের সাথে যুক্ত করে মানচিত্র প্রকাশ করে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে। আমাদের বিজয় দিবসকে ভারতের বিজয় দিবস দাবি করে নরেন্দ্র মোদি পোস্ট করার মাধ্যমে মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনতাই করতে চেয়েছে।
ভারতকে রাষ্ট্র হিসেবে আমরা শত্রু মনে করি না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের জনগণের সাথে আমাদের আগামীতেও বন্ধুত্ব হবে। বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে প্রভু নয়।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হল রুমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত ‘ভাষা আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটা আমাদের জনগণ ঠিক করবে। কোন দেশের পররাষ্ট্র সচিব এদেশে এসে সেটি ঠিক করে দেওয়ার কোনো অধিকার নাই। ভারত যদি মনে করে আওয়ামী লীগের পতনের পর তারা অন্য কোনো দলকে সমর্থন দিয়ে সরকারে বসিয়ে এদেশে আবারও তাবেদারি করবে তবে এদেশের ছাত্র-জনতা সেই সরকারকেও উৎখাত করে ভারতে পাঠিয়ে দেবে।
তিনি বলেন, ১৯৫২, ১৯৭১, ১৯৯০ ও ২০২৪ একসূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশের জনগণের সকল আন্দোলন সংগ্রাম ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। তিনটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনটি শাসক গোষ্ঠীর পতন হয়েছে। তিনি বলেন, ’৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের আইয়ুব খান, ’৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানের এরশাদ এবং সবশেষে ২০২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার খুনি হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতন হয়। এই পতনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি লাভ করে।
২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, বিপ্লব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশকে বাধা দেওয়া যায় না। বাংলাদেশের জনগণ ২০২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে সেটি বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে। দুই হাজারের অধিক মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছে। হাজার হাজার আহত-পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। তবুও ছাত্র -জনতাকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। এই গণঅভ্যুত্থান এককভাবে কোন রাজনৈতিক দলের নয়, এদেশের ছাত্র-জনতার। অনেক সত্য ইতিহাস কেন লেখা হয় না প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাষ্টার মাইন্ড কারা?- এটাও কেউ কেউ ছিনতাই করার চেষ্টা করছে। অনেক বড় দলের নেতারা বলে, এই আন্দোলনে আমরা সম্পৃক্ত নই। আর তাদের ছাত্র সংগঠন দাবি করে তাদের নেতৃত্বে বিপ্লব হয়েছে! অথচ যারা বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছে সেই ইসলামি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, এই গণঅভ্যুত্থানের মাস্টার মাইন্ড শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ববরণকারী সকলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাক্ষী এই গণঅভ্যুত্থানের মাস্টার মাইন্ড কারা। রাম দা দলের হাত থেকে ইতিহাস বিকৃত করা বন্ধ করতে এদেশের ছাত্র-জনতা আবারো অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাঁড়াবে।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল আজিজ।
সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। কিন্তু পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এটাই বৈষম্য। মানুষ সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে। মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা ছিনিয়ে নিতে দেয়নি। সেই থেকে শুরু হয় মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। পরবর্তী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এই স্বাধীনতায় এদেশের জনগণ শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ড আর পতাকা পেয়েছে। নাগরিক হিসেবে মানুষ স্বাধীনতা পায়নি। তাই নাগরিক স্বাধীনতার জন্য ছাত্র-জনতা ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করে। ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মানুষ মুক্তি লাভ করে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। প্রতিটি আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করার ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং হচ্ছে। যতদিন এদেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ থাকবে ততদিন বাংলাদেশ নিয়ে কোন চক্রান্ত সফল হবে না।
আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের ড. হেলাল উদ্দিন, ড. আব্দুল মান্নান বলেছেন, আব্দুস সালাম, কামরুল আহসান হাসান, শাহিন আহাম্মদ খান, আবদুস সাত্তার সুমন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন