বাংলা একাডেমির সভাপতি বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় তৎপরতা ছাড়া শ্রমিকের ভাগ্যোন্নয়ন সম্ভব নয়। শ্রমিকের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে খোঁজ-খবর রাখতে হবে। ট্রেড ইউনিয়নগুলো সরকার এবং মালিক দ্বারা প্রভাবিত। তিনি দুঃখ করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো আর রাজনীতিতে নেই। হারিয়ে ফেলেছে রাজনীতি। সে কারণেই শ্রমিকদের স্বার্থের কথা কেউ ভাবছে না।
মহান মে দিবস উপলক্ষে শনিবার (৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জনতা পার্টি বাংলাদেশ (জেপিবি) আয়োজিত আলোচনা সভায় ফজলুল হক এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জেপিবির মহাসচিব শওকত মাহমুদ দলের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। লিখিত বক্তব্যে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমি বিশেষ প্রয়োজন ও শারীরিক চেক আপের জন্য বর্তমানে লন্ডন অবস্থান করছি। আজকের এই মহতি আয়োজনে উপস্থিত না থাকতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করছি। প্রথমে আমি দেশবাসীকে জানাই মহান মে দিবসের শুভেচ্ছা। শ্রমিকের অধিকার আদায়ে (বিশেষ করে পরিবহন শ্রমিকদের) আমি আগেও যেমন আমার ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের মাধ্যমে সোচ্চার ছিলাম, তেমনি আজ রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমি দেশের সকল শ্রেণি-পেশার শ্রমিকের অধিকার আদায়ে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সরোয়ার মিলন বলেন, আমাদের নেতা ইলিয়াস কাঞ্চন তার প্রতিষ্ঠিত নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ৩২ বছরের সংগ্রামের অভিজ্ঞতার আলোকে আজ রাজনীতির মাঠে এসেছেন। আমরা তার নেতৃত্বে শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা এবং অধিকার আদায়ে মাঠে-ময়দানে লড়াই চালিয়ে যাবো। আমরা মনে করি, শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা এবং অধিকার না দিলে বাংলাদেশ এগোবে না। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমরা যে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেছি, সমাজে-দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাব।
বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা ও সাবেক এমপি জনতা পার্টি বাংলাদেশের উপদেষ্টা শাহ মো. আবু জাফর বলেন, এতো আন্দোলন-বিপ্লবের পরও শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের কোনো ইউনিয়ন করার অধিকার নেই। তাদের অধিকার আদায়ে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যেতে হবে। শ্রমিক নেতৃত্বে দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় আমি জেপিবির মাধ্যমে সকলের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় এককাতারে থেকে কাজ করে যাবো।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জনতা পার্টি বাংলাদেশের মহাসচিব শওকত মাহমুদ। তিনি বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থের কথা জেপিবি সব সময় বলবে। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে মহান মে দিবসে জেপিবির লক্ষ্য হচ্ছে ন্যায্যতার বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
নতুন রাজনৈতিক দল জেপিবি প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে দলটির মহাসচিব বলেন, আমরা নতুন বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই অভূতপূর্ব কর্মযজ্ঞে। এ জন্য শুধু চাই ঈমানি অঙ্গীকার ও পরিকল্পনা। অন্যান্য দলের তুলনায় আমাদের পার্থক্য হবে নিখাদ দেশপ্রেম, চিন্তা-চেতনায় স্বচ্ছতা ও সাহসিকতা, দলের ভেতরে-বাইরে গণতন্ত্রের অব্যাহত চর্চা, উচ্চারণে-কর্মে-জনসেবায় অভিন্ন লক্ষ্যাভিসারী হওয়া। জনগণকে রাষ্ট্রের মালিকানা ও নীতিনির্ধারণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। প্রবীণদের পরামর্শে, প্রবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে এবং তরুণদের সঙ্গে নিয়ে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে ও উন্নয়নে আমরা জাতিকে তুলে দিতে চাই প্রত্যাশার নব সোপানে। সত্যিকার অর্থে ইনসাফসমৃদ্ধ দৃঢ় সার্বভৌমত্বে বলীয়ান নতুন শক্তি হিসেবে এক নিরাপদ বাংলাদেশকে দেখতে চাই।
জেপিবির সমন্বয়ক নুরুল কাদের সোহেলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- বিশিষ্ট সাংবাদিক ও শ্রম বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কাজী আবদুল হান্নান, দলের উপদেষ্টা ফরহাত হোসেন মাহবুব, উপদেষ্টা মেজর (অব.) মুজিব, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল হক হাফিজ, নির্মল চক্রবর্তী, অ্যাডভকেট ওয়ালিউর রহমান, সৈয়দ আজিজুল নাহার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এম আসাদুজ্জামান, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রাজা জাকির হোসেন, নাজমুল আহসান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন