হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও বিশ্ববরেণ্য আরবি সাহিত্যিক আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী (র.)-এর অসামান্য ত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করে বিবৃতি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
সোমবার (৫ মে) হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়খ সাজিদুর রহমান এ বিবৃতি দেন ।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আল্লামা সুলতান যওক নদভী রহ. শুধু বাংলাদেশ নয় বহির্বিশ্বেও সমাদৃত বিদগ্ধ আরবি সাহিত্যিক ও প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী (র.), আল্লামা কারী তৈয়ব (র.), শায়খুল ইসলাম আল্লামা যাকারিয়া (র.) ও আল্লামা শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর মতো বিশ্ববিখ্যাত ওলামায়ে কেরামের কাছ থেকে হাদিসের সনদ লাভ করেন।
নেতৃদ্বয় বলেন, সুলতান যওক নদভী আন্তর্জাতিক ইসলামি সাহিত্য সংস্থা (রাবেতাতুল আদব আল ইসলামি) বাংলাদেশ ব্যুরো চেয়ারম্যান ও আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের সভাপতি হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসলামি শিক্ষা-দীক্ষা ও তাহজিব-তামাদ্দুনের বিকাশধারায় অনন্য অবদান রেখেছেন। তার রচিত ও অনূদিত বহু বই মাদ্রাসার শিক্ষা সিলেবাসে পাঠ্য। মাদ্রাসার মেধাবী শিক্ষার্থীদের বহির্বিশ্বে উচ্চতর পড়াশোনার দ্বার উন্মোচনে তিনি স্থাপন করেন এক অভূতপূর্ব নজির।
তারা বিবৃতি আরও বলেন, সুলতান নদভী ছিলেন ইসলামি শিক্ষা আন্দোলনের এক বিপ্লবী কিংবদন্তি। যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার তাত্ত্বিক চিন্তা ও বৈপ্লবিক দর্শন শিক্ষাঙ্গনে এক অনন্য মাইলফলক রচনা করে। তার এ অবিস্মরণীয় অবদান ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
হেফাজতের শীর্ষ দুই নেতা আরও বলেন, কেবল শিক্ষাঙ্গনে নয় আধ্যাত্মিক ময়দানেও আল্লামা সুলতান যওক নদভী ছিলেন আকাবিরে দেওবন্দের বাস্তব নমুনায় প্রবাদপ্রতিম বুযুর্গ মনীষী। তিনি কুতবে জামান আল্লামা মুফতি আজিজুল হক, শায়খুল ইসলাম আল্লামা আতহার আলী ও প্রখ্যাত আলেম হারুন বাবুনগরী, দার্শনিক আলিম খতিবে আযম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ, আল্লামা মুহাম্মদ ইউনুছ, আল্লামা আলি আহমদ বোয়ালভীর মতো ইমানদীপ্ত মনীষীদের আধ্যাত্মিক চেতনার পরশে ধন্য হন। সেই সঙ্গে বিশ্ববরেণ্য ইসলামি চিন্তাবিদ আল্লামা সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নদভীর একজন যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবেও তিনি কৃতিত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
নেতৃদ্বয় বলেন, দরস-তাদরীস, লেখালেখি, সমাজশুদ্ধির বহুমুখী কর্মব্যস্ততার মাঝেও তিনি বাতিল অপশক্তির মোকাবিলায় বীরদর্পে মাঠে নেমে আসতেন। ইসলাম ও দেশবিরোধী যেকোনো চক্রান্ত প্রতিহত করতে তার বিপ্লবী ভূমিকা অনস্বীকার্য। রাসুলে কারীম (সা.)-এর শানে কটূক্তিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তিনি আজীবন সোচ্চার ছিলেন। দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক ও দ্বীনি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নামকরণকারী, প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও আমৃত্যু প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে হযরত যওক সাহেবের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। শানে রেসালত সম্মেলনের নামকরণও তার অবিস্মরণীয় কৃতিত্ব।
গভীর প্রজ্ঞাদীপ্ত এ শীর্ষ আলেমেদ্বীন, চৌকস অভিভাবকের ইন্তেকালে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। উম্মাহর কল্যাণে তার অনন্য অবদান ও ইখলাসপূর্ণ খেদমাত আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। আমরা আল্লাহর তাআলার দরবারে মরহুমের মাগফিরাত ও দরজাত বুলন্দি কামনা করি এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।
উল্লেখ্য, আল্লামা সুলতান যওক নদভী রহ. গত শুক্রবার (২ মে) রাত ১২টায় চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। পরদিন (৩ মে) শনিবার বিকাল ৪টায় নিজের হাতে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম জামিয়া দারুল মা'আরিফ ময়দানে নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
মন্তব্য করুন