আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে সংলাপ নিয়ে গণফোরামের দুই পক্ষে দুই মত রয়েছে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে সংলাপ চাইলেও মন্টু-সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন দলটির অপর অংশ সংলাপের বিরোধিতা করেছে। গণফোরামের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীতে পৃথক অনুষ্ঠানে সংলাপ নিয়ে এই ভিন্ন অবস্থান তুলে ধরেন নেতারা।
নেতৃত্বের মতপার্থক্যে ২০২১ সালে পৃথক জাতীয় কাউন্সিল করে গণফোরাম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কামাল হোসেন; অন্যভাগে রয়েছেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু। মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সামনে ছিলেন কামাল হোসেন। সেই ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছিল বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপি অভিযোগ আনে, সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ ‘কথা রাখেনি’।
এদিন দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভায় আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে ভোট সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে সরকারকে অবিলম্বে সংলাপে বসাসহ ছয় প্রস্তাব দেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। লিখিত বক্তব্যে কামাল হোসেনের পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান এই প্রস্তাব তুলে ধরেন।
প্রস্তাবসমূহ হলো- ১. একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা। ২. গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা। ৩. নির্বাচনকে সামনে রেখে বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা–সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে বাধা না দেওয়া। ৪. নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন সরকার বাধ্য থাকবে। ৫. বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং ৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, নির্বাচনী সংঘাত থেকে বের হওয়ার জন্য এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
গণফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইয়াসিনের সঞ্চালনায় এতে দলের নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল, এসএম আলতাফ হোসেন, মোকাব্বির খান, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, মোশতাক আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অন্যদিকে বিকেলে আরামবাগের দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভায় গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিএনপিসহ ৩৬ দলের যুগপৎ আন্দোলনে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাতে এই সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী। এদের সাথে জনগণের পক্ষে আন্দোলনরত গণতন্ত্রকামী কোনো রাজনৈতিক দলের সংলাপ সম্ভব নয়। বিরোধী মতের ওপর দমন-পীড়ন, গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যা, মামলা-হামলা, গায়েবি মামলা এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে নিবর্তনমূলক আইনসহ নানা ধরনের মিথ্যা মামলায় জনগণের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছে। সুতরাং এই সরকারের সাথে কোনো সংলাপ হতে পারে না।
গণফোরাম ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এমএ কাদের মার্শালের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন- দলটির এই অংশের নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, আব্দুল হাসিব চৌধুরী, আইয়ুব খান ফারুক, লতিফুল বারী হামিম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মন্তব্য করুন