সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের সঙ্গে এক নারীর কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই অডিওতে নারী কণ্ঠটি এনসিপির এক নেত্রীর বলে জানা যায়। এ পরিচয় মিলল সেই নেত্রী।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া দীর্ঘ এক পোস্টে তুষারের সঙ্গে ওই কথোপকথনের কথা নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি। ওই এনসিপি নেত্রীর নাম নীলা ইসরাফিল।
দীর্ঘ পোস্টে এক অংশে তিনি লেখেন, নেপালে যাওয়ার পর থেকে তুষার প্রায়ই ফোন করত ও তার আলাপের ধরন পাল্টাতে থাকে। সে আমাকে বিভিন্নভাবে অ্যাপ্রোচ করতে থাকে— ‘তোমার ছবি দাও’, ‘তোমার ঠোঁট সুন্দর’, ‘তোমার স্লোগান, তোমার প্রতিবাদী কণ্ঠ আমাকে আকৃষ্ট করে।’ আমি তুষারের এই ধরনের আলাপে সব সময়েই বিব্রত বোধ করেছি এবং তাকে আমাদের সম্পর্ক সাংগঠনিক ও ফর্মাল রাখতে অনুরোধ রেখেছি। যেহেতু বাংলাদেশের নতুন রাজনীতি, এনসিপি আমার জীবনের প্রধান অবলম্বন, আমি তুষারকে তার আগ্রাসী আচরণ সংযত রেখে, ফর্মালভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখি। বাংলাদেশের অসংখ্য নারীকে ক্ষমতাবান পুরুষের সাথে এই ধরনের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়।
নীলা ইসরাফিল লেখেন, রোজার সময় একদিন তুষার আমাকে অত্যন্ত আপত্তিকর একটি কথা বলে। ইতিপূর্বে সকল আলাপের সীমা ছাড়ানো এই আলাপে আমি বিব্রত বোধ করি এবং ওকে জানাই যে আমি আর কথা বলতে চাই না। কিন্তু তুষার আমাকে আলাপের জন্য বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তুষার আমাকে জানায় ডিটেকটিভ পুলিশ বা ডিবি ওর সাথে কথা বলেছে, সেই বিষয়ে সে আমার সাথে আলাপ করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমি তখন উপদেষ্টা হাসান আরিফের মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি এবং তুষার আমাকে ডিবির কথা বলেছে, তাই আমার কাছে মনে হয়েছে বিষয়টি নিশ্চয়ই আইনি, ডিবি ও পুলিশসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলাপ হতে পারে এবং আমার নিরাপত্তার জন্য হুমকির কোনো বিষয় থাকতে পারে—এই বিবেচনায় আমি আলাপটি রেকর্ড করি। প্রায় দেড় ঘণ্টার আলাপে ৪৭ মিনিট আমি রেকর্ড রাখি। তুষার আমাকে জানায়, ডিবি তাকে নীলা ইসরাফিল সম্পর্কে জানতে চেয়েছে এবং সে ডিবিকে জানিয়েছে যে নীলা তার গার্লফ্রেন্ড যা নিয়ে আমি তুষারকে প্রশ্ন করি। তাছাড়া খারাপ প্রস্তাব নিয়েও আলাপ করি।
সম্প্রতি বিষয়টি তিনি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জানান নীলা। তিনি বলেন, কোরবানির দিন রাতে একটি অনুষ্ঠানে নাহিদের সঙ্গে দেখা হয় এবং নাহিদকে বিষয়টি জানাই। নাহিদ আমাকে বিষয়টি দলীয় শৃঙ্খলার দিক থেকে ডিল করতে ও মহানগরে দায়িত্বে থাকা শাহরিয়ার ও নিজামকে বিষয়টি অবগত করতে বলে। যে দিন সন্ধ্যায় শাহরিয়ার ও নিজামকে আমি জানাই, তার পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারি যে, অডিওটি কেটে সামাজিক মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে এবং ভাইরাল হয়েছে। এরপর আমাকে নিয়ে যে মিডিয়া ট্রায়াল হয়, তাতে আমি দেখতে পেয়েছি, আমার নারী সহকর্মীরাও আমার পক্ষে দাঁড়ায় নাই।
তিনি একাংশে লেখেন, আমার সহকর্মীরা বুঝতে পারছেন না, তুষার যদি আমার মতো একজন সাহসী নারীকে এইভাবে যৌন নিপীড়ন ও সাংগঠনিক প্রভাব খাটিয়ে দমন করার সুযোগ পায়, তবে আগামী দিনে তারাও নিরাপদ থাকবে না। তাদের আমার চেয়ে কঠিন নিপীড়নের শিকার হতে হবে। সবাই নীলা ইসরাফিল নয়।
মন্তব্য করুন