বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকাস্থ কানাডার হাইকমিশনার অজিত শিং।
সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান কানাডার হাইকমিশনার। তিনি আমিরে জামায়াতের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেন। বৈঠকটি অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ও কানাডার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
বৈঠকে মান্যবর হাইকমিশনারের সঙ্গে সিনিয়র পলিটিক্যাল অফিসার সিওভান কের ও পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকনোমিক এডভাইজার নিসার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। আমিরে জামায়াতের সঙ্গে ছিলেন নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং আমিরে জামায়াতের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মাহমুদুল হাসান।
বৈঠক শেষে আমিরে জামায়াতের পক্ষে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের সাংবাদিকদের জানান, কানাডিয়ান হাইকমিশনার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। তাদেরকে জানিয়েছি, আমরা জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের প্রায় উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলগুলো যৌথভাবে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে একাধিকবার সংলাপে বসেছি। যেমন একই ব্যক্তির প্রধান মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দুইবারের বেশি না রাখা, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে তাতে প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্তকরণ, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বেশ কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। তবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আমরা হাইকমশনারকে জানিয়েছি, দুঃখজনকভাবে যদি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দিয়েছি। আমরা সরকারকে বলেছি, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা দরকার। আর কেউ যাতে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের কনসার্ন অন্তর্বর্তী সরকারকে জানিয়েছি।
সিসি ক্যামেরাসহ নির্বাচনের আনুসঙ্গিক খরচ মেটাতে মোটা অঙ্কের বাজেট দরকার। এ ব্যাপারে আমরা কানাডাসহ উন্নয়ন অংশীদার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর নিকট আর্থিক অনুদানের আহ্বান জানিয়েছি। হাইকমিশনার আর্থিক অনুদানের বিষয়টি জাতিসংঘের মাধ্যমে সমন্বয় করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন।
ডা. তাহের বলেন, কানাডা বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারিগরিসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে দিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার হবে বলে বৈঠকে আশাবাদ করা হয়।
কানাডাকে বলেছি বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য। তারা আগামী সংসদ নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ৩০টি রাজনৈতিক দল বেশকিছু বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সমগ্র নির্বাচন, নারী প্রার্থী, ৭০নং অনুচ্ছেদসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হচ্ছে। আমরা বলেছি যে, দেশের মৌলিক পরিবর্তন দরকার। যা ক্ষমতাকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখবে এবং কোনো একক ব্যক্তিকে স্বৈরাচার হওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করবে না। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দশ বছর হওয়ার কথা বলেছি। তারা তাদের দলের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের জানাবেন বলেছে।
আজকে দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী ভোটারবিহীন ও জবরদখলের নির্বাচন। সব কটি নির্বাচনই ছিল এমন। সঙ্কট এমন পর্যায়ে গেছে যে, সরকার পরিবর্তন নয়, সরকারকে পালিয়ে যেতে হয়েছে।
মন্তব্য করুন