বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য অনেক বেশি অবদান রাখতে রাজনীতির ময়দানে আরও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনপিসি) পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘অত্যন্ত সতর্ক পদক্ষেপের সঙ্গে বাক্য চয়ন এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।’
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের এক বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের নির্লিপ্ততায় সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করিনি, ফ্যাসিবাদী পতিত শক্তি গোপালগঞ্জে হোক আর যেখানে হোক গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ওপর হামলা করার সুযোগ ও সাহস পাবে। কিন্তু হামলা হয়েছে।’
এনসিপিকে পরামর্শ দিয়ে বিএনপি এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘বাবারা, রাজনীতির ময়দানে আরও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার জন্য আমরা সবসময় পরামর্শ দিয়েছিলাম, আজকেও দিচ্ছি, নসিহত করছি। আমরা আপনাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য আপনারা ভবিষ্যতে অনেক বেশি অবদান রাখবেন। আপনারা জাতীয় নেতৃত্বে পরিণত হবেন, সেই আশাবাদ ব্যক্ত করি। কিন্তু যেভাবে আপনারা যাচ্ছেন, আপনাদের কর্মসূচির ধরন যেভাবে দেখছি। তাতে আমরা একটা মেসেজ পাচ্ছি, কোনো না কোনো বাহানায় এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি করা যেন বলতে পারেন, সরকার কোনোকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এই সরকার নির্বাচন কীভাবে দেবে? আর কিছু কিছু প্রশ্ন তো আপনারা ইতোমধ্যেই তুলেছেন, এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়, কেন শাপলা প্রতীক দিল না? শাপলা প্রতীক না দিলে কি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধাচারণ করে চলা যায়?’
প্রশ্ন রেখে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় প্রতীকের মার্কা ছাড়া কি বাংলাদেশে আর কোনো মার্কা ছিল না, এই প্রশ্ন তো আমরাও করতে পারি। যারা বলছে, ধানের শীষও তো জাতীয় প্রতীকে আছে। কিন্তু ধানের শীষের মার্কাটা যেটা আছে, সেটা নির্বাচন কমিশনের তপশিলে আছে; সেই তপশিল অনুযায়ী, ১৯৭৮ সালের আগে সেই মার্কা বিদ্যমান ছিল। এই মার্কা নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ প্রশ্ন তোলেনি। সুতরাং রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদানকালে রাজনৈতিক ইতিহাসটা আগে চর্চা করে বক্তব্য দেওয়া উচিত।’
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘আপনারা (এনসিপি) বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কিন্তু সরকারের তো আপনারাই অংশ। তাহলে কাদের উদ্দেশ্য করে বলছেন? দেশের মানুষ সবই জানে। আপনাদের দুই উপদেষ্টা বসে আছেন, দুই দিন পর তারা আপনাদের সঙ্গে জয়েন করবেন। তারপর আপনাদের সঙ্গে নির্বাচন করবেন। এই দৃশ্য তো দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ সবই বুঝে, সবই জানে। সুতরাং অত্যন্ত সতর্ক পদক্ষেপের সঙ্গে বাক্য চয়ন করা দরকার, রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়ন দরকার।’
এসময় ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখতে সকল রাজনৈতিক দলকে এক থাকার আহ্বান জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ। সারা দেশে মবক্রেসির রাজত্ব চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করেছিলাম ডেমোক্রেসির জন্য। আমরা এখন দেখছি, সারা দেশে মবক্রেসির রাজত্ব হচ্ছে। চেয়েছিলাম ডেমোক্রেসি, হয়ে যাচ্ছে মবক্রেসি। কিন্তু কেন? যারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস পাচ্ছে, তারা কারা এবং কেন? এই দুই কেন-এর জবাব হচ্ছে, সরকারের নির্লিপ্ততা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের ব্যর্থতা।’
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপির সহযোগিতা প্রদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে গণঅভ্যুত্থানের সব দিকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে পরিকল্পিতভাবে ইস্যু সৃষ্টি করে সেই ইস্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঐহিত্যবাহী সংগঠন বিএনপিকে কলঙ্কিত করার একটি অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারা এগুলো করছে? যারা ফ্যাসিবাদের আগমন চায়, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবাসন-পুনর্বাসন চায়, যারা বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার এবং বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে কলঙ্কিত করছে তারা।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, লন্ডন বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুতির জন্য ম্যাসেজ দেবেন। আমরা দেখলাম, তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলছেন, প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলছেন; কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এখনো অফিসিয়ালি যথাযথ প্রক্রিয়ায় ইনস্ট্রাকশন দেননি। আশা করব, এই জাতি ও জনগণকে আশ্বস্ত করতে আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) অতি শিগগিরই যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সেই ম্যাসেজ ইসিতে প্রদান করবেন।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘আমরা চাই, এই সরকারের অধীনে দেশে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেটা যেন পৃথিবীর মধ্যে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে; এটা অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষতায় যেন একটি জলন্ত প্রমাণ হয়, সারা পৃথিবীর কাছে প্রশংসিত হয়, এর স্বচ্ছতা নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না উঠে। বিভিন্ন কায়দায় যারা ইস্যু সৃষ্টি করে সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে বিলম্বিত ও বানচাল করার জন্য চেষ্টা করছে, তারাও যেন আশ্রয়-প্রশ্রয় না পায়। জনগণের মনে যেন প্রশ্নের উদ্বেগ না হয় যে, সরকার একটি নির্দিষ্ট দলকে বোধহয় সুবিধা দেওয়ার জন্য যেনতেনভাবে চেষ্টা করছে।’
সমাবেশে যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল কবির পল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন