চলতি মাসে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে রাশিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। খবর দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার ভেতর আসন্ন এ আলোচনায় দুই দেশেরই নিজেদের কাছে কিছু চাওয়া-পাওয়া রয়েছে। যখন পশ্চিমা বিশ্ব দুই দেশকেই নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত করে তুলেছে, তখন তাদের আলোচনায় বসার বিষয়টি বাইডেন প্রশাসনে ভ্রুকুঞ্চনের সৃষ্টি করছে।
রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার কাছে কী চায়?
গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সন্দেহ করে আসছেন, উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে আর্টিলারি শেল, রকেট এবং অন্যান্য অস্ত্র সরবারহ করছে। এসব অস্ত্রের বেশিরভাগই সোভিয়েত আমলের অস্ত্রের নতুন ভার্সন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাদের দাবি অনুযায়ী, রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু পিয়ংইয়াং সফরে গিয়ে কিমের কাছে রাশিয়াকে আরও অস্ত্র পাঠানোর অনুরোধ করেছেন।
সিওলের কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের সাবেক প্রধান কিম তায়েয়ূ বলেন, রাশিয়ার এখন জরুরিভিত্তিতে সামরিক সরঞ্জাম প্রয়োজন। যদি তা না-ই হতো তাহলে কীভাবে যুদ্ধকালীন সময়ে শক্তিশালী একটি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছোট একটি দেশের কাছে যান?
তিনি আরও বলেন, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে শোইগু প্রথম রুশ কোনো প্রতিরক্ষামন্ত্রী যিনি উত্তর কোরিয়া সফরে গেলেন।
সামরিক ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহার আলজাজিরাকে বলেন, উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে অস্ত্র দেওয়ার জন্য আদর্শ পরিস্থিতিতে রয়েছে। উত্তর কোরিয়া স্নায়ুযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসেনি। রুশ সামরিক বাহিনীর যুদ্ধের ময়দানে যেসব অস্ত্র প্রয়োজন, সেসব অস্ত্র তৈরির সোভিয়েত আমলের নকশা তাদের কাছে রয়েছে।
একঘরে হয়ে থাকা রাষ্ট্রের কাছ থেকে রূপান্তরিত এসব অস্ত্র কেনা জাতিসংঘের সিদ্ধান্তবিরোধী, যেখানে রুশরাও সমর্থন জানিয়েছিল। তবে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু পর যেভাবে রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়ে অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশগুলোর (যেমন- ইরান, উত্তর কোরিয়া) কাছে সাহায্য চাইছে।
উত্তর কোরিয়ার অনেক ধরনের সোভিয়েত আমলের রূপান্তরিত অস্ত্র থাকলেও এগুলো সংকীর্ণ রেলপথে রাশিয়ায় পৌঁছানো কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করেন সিওলের আসান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ চা ডু হায়গন।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ব্রিফ করেছে- শোইগু রাশিয়া, চীন এবং উত্তর কোরিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মতো যৌথ নৌ মহড়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
উদ্বেগের বিষয়, কিম জং উন পুতিনকে তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে অগ্রগতি করতে সহায়তা করার জন্য পুতিনকে উন্নত অস্ত্র প্রযুক্তি বা জ্ঞান সরবরাহ করতে বলতে পারেন।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে যে কিম এবং পুতিনের মধ্যে বৈঠকটি রাশিয়ার পূর্ব উপকূলের বন্দর শহর ভ্লাদিভোস্টকে হতে পারে।
সংবাদপত্রের কূটনৈতিক সংবাদদাতা এডওয়ার্ড ওং বিবিসিকে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল গত মাসের শেষের দিকে ভ্লাদিভোস্টক এবং মস্কো ভ্রমণ করেছে।
তিনি বলেছেন, উত্তর কোরিয়া তার স্যাটেলাইট এবং পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন কর্মসূচিতে সহায়তা করার জন্য মস্কোর কাছ থেকে ‘উন্নত প্রযুক্তি’ চাইছে।
কিম জং উন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিকারগ্রস্ত। তার গতিবিধি গোপন রাখতে অনেক চেষ্টা করেন। যদি জানাজানি হয়ে যায়, তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে ভ্লাদিভোস্টকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাহলে তিনি সম্ভবত পুরো বিষয়টি বাতিল করবেন।
মন্তব্য করুন