কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ছাত্রশিবির ডাকসু নির্বাচনে জয় পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম নগরের দি কিং অব চিটাগাংয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল্লাহ আল নোমানের শোক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতে ইসলামীর এত ভোট কোথা থেকে এলো। আমার তো হিসাব মেলে না ভাই। এটাকে কারচুপি না, বরং দেশে ‘গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস’ হিসেবে দেখছি।
কারণ হিসেবে মির্জা আব্বাস ব্যাখ্যা করেন, যখনই তারা বিভিন্ন দল একসঙ্গে বসেন তখন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বারবার উল্লেখ করেন যে, ‘ভাই খেয়াল রাইখেন আওয়ামী লীগ যেন আর কোনো দিন আসতে না পারে।’
আমরা সেভাবেই চললাম, আর তলে তলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ছাত্রলীগের সব ভোট জামায়াত নিয়ে নিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাস বলেন, ডাকসু নির্বাচন থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। এটি ডাকসু ইঞ্জিনিয়ারিং নির্বাচন, যেটি ২০০৮ সালের মতো হয়েছে, আবারও সেই ছাত্রলীগের কর্মী। এরা কত বড় মুনাফিকের দল, এদের কারণে ২০০৮ সালে নির্বাচন হয়েছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে যেতে চাননি। জোর করে মুজাহিদ, ব্যারিস্টার শিপন নির্বাচনে নিয়ে গেলেন। তার ফল কী হলো, জামায়াতে ইসলামের চার থেকে পাঁচজনের ফাঁসি হয়ে গেল। আর আমাদের কাছ থেকে চলে গেলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
মরহুম আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, নোমান ভাই শ্রমিক দলের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ওনার সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। ওনার মতো একজন ভালো রাজনৈতিক সহকর্মী পাওয়া খুব ডিফিকাল্ট। এখন যারা রাজনৈতিক নেতারা আছেন, তারা আমার কথা বুঝতে পারবেন, কী বলতে চাচ্ছি। আবার অনেকে বুঝতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, এ অনুষ্ঠানে যারা বসে আছেন তারা তিলে তিলে অনুভব করবেন, নোমান ভাইয়ের মতো একজন সহকর্মী পাওয়া রাজনীতিতে কতটা দুষ্কর। কিন্তু আল্লাহর রহমত হয়েছিল তাই আমরা পেয়েছিলাম নোমান ভাইকে। একসঙ্গে কারাগারে ছিলাম। একসঙ্গে মিছিল, রাজপথে আন্দোলন করেছি, হাসিনাকে উৎখাত করেছি, বহু স্মৃতি নোমান ভাইয়ের সঙ্গে। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি, নোমান ভাইয়ের মতো বিএনপিতে আরও নতুন নতুন মানুষের জন্ম হবে।
বিএনপি, দেশ ও দেশের বিরুদ্ধে দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিএনপিই একটি মাত্র দল, যাদের হাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, দেশের মানুষের জান-মাল নিরাপদ। আপনি বলতে পারেন, ৫ আগস্টের পর বিএনপির লোকজন অনেক অত্যাচার করছে ইত্যাদি। কথাটা সঠিক নয়, বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ অপকর্ম করেছে। আবার জামায়াতের সঙ্গে মিলেও আওয়ামী লীগ অপকর্ম করছে। তাই সব দোষ বিএনপির উপর আসছে। আর বিএনপির ছেলেরা কিছুই বুঝে না আমি বলবো না, তারা সবই বুঝে। তবে এই লোভ সামলাতে পারেনি হয়তো।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম আকবর খোন্দকারের সভাপতিত্বে পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সাঈদ আল নোমান। উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমীন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন-ি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, সুশীল বড়ুয়া, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, উত্তর জেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. সিদ্দিক আহমদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাভোকেট বদরুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নসরুল কুদির, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জমির উদ্দিন নাহিদ, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মহসিন কবির আপেল ও উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাহেদুল আবছার জুয়েল।
মন্তব্য করুন