ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য ঐক্যবদ্ধ গণঅভ্যুত্থান জরুরি বলে মনে করে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক ও চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেন, বিজয়ী গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়াদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।
আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির উদ্যোগে এক গণসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা জানান তিনি।
ইনসাফ কায়েম কমিটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকলে নির্ধারিত সময়ের বেশ আগে থেকেই দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দিতে থাকে। সমাবেশের জন্য আনা মাইক, ট্রাক, স্টেজ, লাইট পুলিশ নিয়ে গিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। পরে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়।
সমাবেশে পুলিশি এই বাধার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির সদস্য সচিব জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শওকত মাহমুদ বলেন, সমাবেশের স্বাধীনতায় যারা বাধা দিয়েছে, তাদের একদিন জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘এই সরকারের আমলে পাচার করা সব অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া পাচারকৃতদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে হকার্স নেতা সিদ্দিকুর রহমান, জিয়া গবেষণা পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান, গণআজাদী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি রেহানা সালাম, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আব্দুল আউয়াল ঠাকুর, ড. ফারহাত হোসেন, ড. রেজাউর রহমান, ভিপি আজাদ বক্তব্য দেন। এর আগে গত ১৬ মার্চ রাজধানী বনানীর একটি হোটেলে ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির উদ্যোগে সুধী সমাবেশ ও নৈশভোজ হয়। সেখানে বিএনপির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান ও ইনসাফ কায়েম কমিটির সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ তার প্রস্তাবনায় অন্তর্বর্তীকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানান।
শুধু তাই নয়, প্রস্তাবনায় জাতীয় সরকার গঠনের পর সেই সরকারকে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং তার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিজয়ী হলে রাজপথে আন্দোলনে থাকা দলগুলো নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে থেকে শওকত মাহমুদের অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবনায় বিএনপিতে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বিএনপির হাইকমান্ড বা সিনিয়র পর্যায়ের কোনো নেতাকে না জানিয়েই নৈশভোজ ও আলোচনার ওই আয়োজনটি করেন তিনি।
তাই বিএনপির হাইকমান্ড মনে করে, শওকত মাহমুদের ওই উদ্যোগের পেছনে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। সে কারণে দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের ২১ মার্চ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর থেকেই ইনসাফ কায়েম কমিটির উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত ও কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে স্ব স্ব দল ও সংগঠনে সন্দেহ-অবিশ্বাসের সৃষ্টি হতে থাকে। সে কারণে প্রেস ক্লাবের সামনের সমাবেশে রেজা কিবরিয়ার অংশগ্রহণ নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে গণঅধিকার পরিষদ।
দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইনসাফ কায়েম কমিটির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের দলের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া দলের প্রোগ্রামে উপস্থিত না থাকলেও বিভিন্ন সময়ে ইনসাফ কায়েম কমিটির প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকায় এই নিয়ে দলের ভিতরে এক রকম অস্বস্তি বিরাজ করছে। এই বিষয়ে দলের পরবর্তী মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
মন্তব্য করুন