আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন দেখার, শেখার, নেতৃত্ব দেওয়ার এবং মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকারকে উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার (১১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ আহ্বান জানান তিনি।
তারেক রহমান বলেন, একজন কন্যাসন্তানের পিতা হিসেবে আমি জানি, মেয়েদের ক্ষমতায়ন শুধুই নীতির বিষয় নয়, বরং এটা একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। আমাদের বাংলাদেশের স্বপ্ন এমন এক দেশ গড়া, যেখানে প্রতিটি মেয়ে সেই একই স্বাধীনতা, সুযোগ ও নিরাপত্তা পাবে, যা প্রতিটি অভিভাবক নিজের সন্তানের জন্য কামনা করেন।
তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের জীবন বদলে দেওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে। সুযোগ পেলে আমরা আরও অনেক কিছু করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তৈরি পোশাকশিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে একে কেবল একটি শিল্প থেকে আশার প্রতীকে পরিণত করেছিলেন। লাখ লাখ নারী আনুষ্ঠানিক কর্মজীবনে প্রবেশ করেছিলেন, অর্জন করেছিলেন আয়, মর্যাদা ও স্বাধীনতা। তার নেতৃত্বেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়’; যার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের নারী ও কন্যাশিশুদের জীবনের মানোন্নয়নকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মেয়েদের শিক্ষা একটি অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, কোনো বিশেষ সুবিধা হিসেবে নয়। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মেয়েদের জন্য শিক্ষা বিনামূল্যে করা হয়, আর ‘শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য’ ও ‘শিক্ষার জন্য নগদ সহায়তা’ কর্মসূচির মাধ্যমে লাখ লাখ মেয়ে স্কুলে থাকতে পেরেছে; যা বদলে দিয়েছে পরিবারের ভাগ্য, গড়ে তুলেছে শক্তিশালী নারী সমাজ, সৃষ্টি করেছে এক ক্ষমতায়িত নারী প্রজন্ম।
তিনি আরও বলেন, তার পথপ্রদর্শিত ‘ফিমেল সেকেন্ডারি স্কুল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্টের’ মাধ্যমে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা অর্জিত হয় এবং শিশুবিবাহের হার কমে আসে। এই প্রকল্পটি পরে বিশ্বব্যাপী মেয়েদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের সফল মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয় এবং বহু উন্নয়নশীল দেশে অনুসরণ করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, এসব পদক্ষেপ দেখিয়েছে, সুশাসন যখন কন্যাশিশুর মর্যাদাকে সম্মান করে এবং তাদের ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করে, তখন কীভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।
বিএনপি’র ভবিষ্যৎ নীতিমালায় সেই সম্মান ও বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা থাকবে উল্লেখ করে তারেক রহমান কয়েক দফা পদক্ষেপের কথা জানান। এগুলো হলো:
১। পরিবারগুলোর আসল স্তম্ভের হাতে সহায়তা ও প্রণোদনা পৌঁছাতে নারী গৃহপ্রধানদের নামে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ প্রণয়ন করা হবে।
২। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ঋণ, ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। কারণ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে আপস নয়।
৩। মেয়েদের জন্য শক্তিশালী একাডেমিক ও কারিগরি শিক্ষার সুযোগ চালু করা হবে। যাতে গ্রাম বা শহর, যেখানেই হোক, প্রতিটি মেয়ে দক্ষতা অর্জন করে নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে পারে।
৪। নীতিনির্ধারণে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং রাজনীতি, প্রশাসন, নীতি প্রণয়নে নারীদের আসন নিশ্চিত করা হবে। কারণ নিরাপদ জাতি গঠনে এর বিকল্প নেই।
৫। মর্যাদা ও স্বাধীনতার সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে যাতে প্রতিটি মেয়ে নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে, নিজের কথা বলতে পারে, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে এবং ভয়মুক্ত জীবনযাপন করতে পারে।
৬। পরিবার ও সামাজিক কল্যাণকে নীতির কেন্দ্রে রাখা এবং স্বাস্থ্য, গ্রামীণ উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নারীদের ও কন্যাশিশুদের ওপর বিশেষ নজর রাখা।
মন্তব্য করুন