কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১৪ এএম
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

সেই দিন রায় ঘোষণার আগে যা বলেছিলেন দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। পুরোনো ছবি
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। পুরোনো ছবি

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। সেইদিন রায় ঘোষণার আগে বিচারকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন তিনি।

সে সময় আবেগাপ্লুত কণ্ঠে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বলেছিলেন, ‘আল্লাহর নামে শপথ করে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বলেছিলেন, ‘মাননীয় আদালত। আমি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার আপামর জনগণের অতি পরিচিত। আল্লাহ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীনের রচিত দেলাওয়ার শিকদার আমি নই।’

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রের লেবাসধারী বর্তমান আওয়ামী সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত যুদ্ধাপরাধের দায় চাপানোর মিশন নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। মিথ্যাচার প্রতিষ্ঠায় স্বনাম খ্যাত হেলাল উদ্দীন আমার বিরুদ্ধে ২০টি জঘন্য মিথ্যা অভিযোগ এনে সরকারি ও দলীয় আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে গিয়ে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য, আমার নাম বিকৃত করেছে।’

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আরও বলেছিলেন, ‘কোনো মুসলমানের কলিজায় সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাস থাকলে, মৃত্যুর ভয় থাকলে, পরকালে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয় থাকলে, জাহান্নামের কঠিন শাস্তির ভয় থাকলে অন্য কোনো মুসলমানের বিরুদ্ধে শুধু আদর্শিক ও রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে এতো জঘন্য মিথ্যাচার করা আদৌ সম্ভব হতো না।’

তিনি বলেছিলেন, ‘আজকের এই বিচার প্রক্রিয়া নিঃসন্দেহে দুটি পর্বে শেষ হবে। তার একটি এই জাগতিক আদালতে আর অপরটি আখেরাতের আদালতে। তবে আখেরাতের আদালতের আগেই আল্লাহ যদি চান তাহলে আমার উপর করা মিথ্যাচার ও জুলুমের বিচার এই দুনিয়াতে এ আদালতেই হতে পারে।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আজ আমি এই আদালতের অসহায় এক নির্দোষ আসামি, আর আপনারা বিচারক। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পূরণে, ক্ষমতার জোরে আমার প্রতি যদি জুলুম করা হয়, তাহলে আজকের দুর্দান্ত প্রতাপশালী ব্যক্তিরা, যারা একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে আদর্শিক কারণে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমার প্রতি জুলুমের প্রয়াস পাচ্ছেন, তারা দ্বিতীয় পর্বের বিচারের দিন, কিয়ামতের দিন তারা নিঃসন্দেহে আসামি হবে।’

‘ইনশাআল্লাহ সেদিন আমি হবো বাদী আর সর্বশক্তিমান, রাজাধিরাজ, সম্রাটের সম্রাট, আকাশ ও জমিনের সার্বভৌমত্বের একচ্ছত্রঅধিপতি, সকল বিচারের মহাবিচারপতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, তিনিই হবেন সেদিনের আমার দায়ের করা মামলার বিচার প্রক্রিয়ার বিচারক।’

আল্লামা সাঈদী উল্লেখ করেন, ‘সুরা আত ত্বীনের ৮নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা কি সকল বিচারকের তুলনায় শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?’

সূরা দোখানের ১৬নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘একদিন আমি এদেরকে অবশ্যই কঠোরভাবে পাকড়াও করবো এবং নিশ্চয়ই প্রতিশোধ নেবই।’

আল্লামা সাঈদী বলেন, ‘যার হাতের মুঠোয় আমাদের সকলের জীবন, সেই মহাশক্তিধর আল্লাহ তায়ালার নামে আপনাদের এই আদালতে বসে শপথ করছি, তার পবিত্র কোরআন স্পর্শ করে কসম করে বলছি - আমার নামে আপনাদের এ আদালতে যতগুলো অভিযোগ আনা হয়েছে তার হাজার কোটি মাইলের মধ্যে আমার অবস্থান ছিল না। উত্থাপিত অভিযোগের একটি বর্ণনাও সত্য নয়।’

‘আল্লাহর কসম! সব ঘটনা বা দুর্ঘটনার সঙ্গে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম যোগ করা হয়েছে। এ সব অভিযোগের সাথে আমার দূরতম সম্পর্ক নেই।’

তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি সব প্রকার রাগ-অনুরাগ ও সকল প্রকারের চাপ ও আদেশ-নির্দেশের ঊর্ধ্বে উঠে সত্য ও মিথ্যা সার্বিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে সব প্রকার প্রভাব মুক্ত হয়ে শুধুমাত্র মহান আল্লাহকে ভয় করে আমার প্রতি জুলুম না করে ন্যায়বিচার করবেন। মহান আল্লাহ আপনাদের সে তওফিক দান করুন। আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পূরণে যিনি যতটা ষড়যন্ত্র করে, জঘন্য থেকে জঘন্যতর মিথ্যা মামলা দিয়ে, মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে, মিথ্যা সাক্ষীর প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছেন, দেশ-বিদেশে অসংখ্য অগণিত মানুষের কাছে কোরআনের বাণী পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমাকে বঞ্চিত করেছেন, আমার প্রিয়জনদের কাঁদাচ্ছেন, কলঙ্কের তিলক পরিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন, আমি দোয়া করি আল্লাহ তাদের হেদায়াত করুন।’

‘আর হেদায়াত যদি তাদের নসিবে না থাকে তাহলে আমার এবং আমার প্রিয়জন, আমার কলিজার টুকরা সন্তান, বিশ্বব্যাপী আমার ভক্ত- অনুরক্তদের যত চোখের পানি পড়েছে, তাদের সবার প্রতিফোঁটা চোখের পানি অভিশাপের বহ্নিশিখা হয়ে আমার থেকে শতগুণ যন্ত্রণা ভোগের আগে, কষ্ট ভোগের আগে আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের মৃত্যু না দেন।’

‘মিথ্যাবাদী ও জালিমদের উপর আল্লাহর অভিশাপ অযুত ধারায় বর্ষিত হোক। আর জাহান্নাম যেন হয় এদের চিরস্থায়ী ঠিকানা।’

উল্লেখ্য, বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন, খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএসএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। দুই দফা নামাযে জানাজা শেষে ছেলের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান মাওলানা সাঈদী ফাউন্ডেশনের বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে দাফন করা হয় তাকে।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৪০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সুবহে সাদিকের সময় পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলার সাঈদখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

মাওলানা সাঈদীর পিতা ইউসুফ সাঈদী স্বনামধন্য ইসলামী পণ্ডিত বা আলেম ছিলেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মায়ের নাম গুলনাহার বেগম। তার চার ছেলে হলেন মরহুম রফিক সাঈদী, শামীম সাঈদী, মাসুদ সাঈদী ও নাসিম সাঈদী।

১৯৭৯ সালে সাধারণ সমর্থক হিসেবে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালে দলটির মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কটাক্ষের শিকার অনন্যা

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা

রাজনীতিতে হাসিনার উত্থান-পতন যেভাবে

সাগরপথে পাচারের সময় ৮ রোহিঙ্গা উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪

কারও সঙ্গে ৩ দিনের বেশি কথা না বললে কী হয়? যা বলছে ইসলাম

দাম কমেছে বলছেন ট্রাম্প, কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয়ে ক্ষুব্ধ মার্কিনিরা

হঠাৎ মিষ্টি খেতে মন চায়, এটা কীসের ইঙ্গিত

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

শেখ হাসিনার যত ভুল

কন্যার নাম ‘কুর্দিস্তান’ রেখে ফিলিস্তিনি বাবার বার্তা

১০

সেই দিন রায় ঘোষণার আগে যা বলেছিলেন দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী

১১

মনোমুগ্ধকর জয়া

১২

ওসির সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ, ৩৩ বছর পর ফিরলেন মোবারক

১৩

রাশিয়ার ড্রোন হামলা ঠেকানোর মতো সক্ষমতা ইউরোপের নেই : ইইউ

১৪

বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার খবর কী

১৫

ফ্যান চালালে মাসে কত টাকা বিদ্যুৎ খরচ হয় জেনে নিন

১৬

রামপুরায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে আগুন

১৭

ওএসবি চক্ষু হাসপাতালে কাজের সুযোগ, দ্রুত আবেদন করুন

১৮

গাজায় নিরাপত্তা বাহিনী গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুমোদন করল জাতিসংঘ

১৯

সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়িতে ভাঙচুর

২০
X