দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, সিন্ডিকেট ভাঙা, সারা দেশে রেশনব্যবস্থা, ন্যায্যমূল্যের দোকান চালুসহ উৎপাদক ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তোলার দাবিতে আগামী ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এ ছাড়া সমস্যার সমাধানে দলটির পক্ষ থেকে ৩টি প্রস্তাব ও ১৩টি দাবি উত্থাপন করা হয়।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্টন এলাকায় মুক্তিভবনে মৈত্রী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ। সভাপতিত্ব করেন কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড শাহিন রহমান, সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন রাজা, কেন্দ্রীয় সদস্য ডাক্তার ফজলুর রহমান প্রমুখ।
সিপিবির ৩ প্রস্তাব
সংগঠিত, অসংগঠিত শ্রমিক, ক্ষেত মজুরদের জন্য যুক্তিসঙ্গত জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও তার প্রদান নিশ্চিত করা এবং মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে মজুরির হার নির্ধারণ করা। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি এবং মঞ্জুরির হার বছর বছর এমনভাবে বৃদ্ধি করা, যেন তা বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হারের চেয়ে বেশি হয়।
অনুরূপ নিয়মে কর্মচারীদের জন্য বেতন কমিশনের ব্যবস্থা করা। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১ অনুপাত ৫ কিংবা নিদেনপক্ষে ১ অনুপাত ৬ এর মধ্যে রাখা এবং ক্রমবর্ধমান ধনবৈষম্য ও শ্রেণিবৈষম্য নিরসনের অনুকূলে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৩ প্রস্তাব
১. নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য, বিশেষত দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারের জন্য স্থায়ী রেশনব্যবস্থা চালু করা। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে ছবিসহ রেশন কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা করা। এই দরিদ্র মানুষদের জন্য রেশনে কন্ট্রোল দামে চাল, গম, তেল, ডাল, চিনি এবং প্রয়োজনমতো অন্যান্য অত্যাবশ্যক পণ্য সাপ্তাহিকভিত্তিতে প্রদান করা। পর্যায়ক্রমে পণ্যের সংখ্যা বাড়ানো।
২. রাষ্ট্রীয় সহায়তায় ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু করা এবং ক্রেতা-সমবায় সমিতি সংগঠিত করে দেশব্যাপী তার বিপণন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।
৩. মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ থেকে উৎপাদক কৃষক ও ক্রেতাসাধারণকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সহায়তায় একদিকে ‘ভোক্তা সমবায় সমিতি’ এবং অন্যদিকে ‘উৎপাদক সমবায় সমিতি’ গড়ে তোলা এবং এই দুই সংস্থার মধ্যে সরাসরিসংযোগ ও লেনদেনের ব্যবস্থা করা।
৪. বিএডিসির কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করে সারা দেশে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ যন্ত্রপাতিসহ কৃষি উপকরণ ন্যায্যমূল্যে এবং সময়মতো খোদ কৃষকের কাছে সরাসরি সরবরাহের ব্যবস্থা করা। যাতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমে আসে।
৫. পণ্য পরিবহনে দুর্নীতি, হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা। একইসঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনসহ হাটবাজারে ইজারাদারি ব্যবস্থা ও তোলা আদায়ের অত্যাচার বন্ধ করা।
৬. দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্তভাবে টিসিবির কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে অত্যাবশ্যক পণ্যসামগ্রীর আমদানি, মজুত ও সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখা।
৭. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে খাদ্যদ্রব্যসহ অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাফার স্টক গড়ে তোলা।
৮. পাইকারি ও খোলাবাজারে পণ্যমূল্য তদারকির জন্য ‘মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ (Price Regulatory Authority) প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি উপযুক্ত ক্রেতাস্বার্থ সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করা।
৯. আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ওপেন মার্কেট সেল, মার্কেটিং অপারেশন, টেস্ট রিলিফ, কাজের বিনিময় খাদ্য (কাবিখা) প্রভৃতি কর্মসূচিসহ যে কোনো আপৎকালীন দ্রুততার সঙ্গে ঝটিকা কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি রাখা।
১০. পৃথক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে গ্রাম-শহরসহ সারাদেশে সাশ্রয়ী, দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত ‘গণবণ্টন ব্যবস্থা’ চালু করা।
১১. বিলাসদ্রব্য আমদানি কিছু সময়ের জন্য নিষিদ্ধ করা।
১২. পাইকারি ও খুচরা বাজারে রাষ্ট্রের প্রভাব-সক্ষমতা সৃষ্টি করা। একইসঙ্গে এ বাজারগুলোতে প্রত্যক্ষ রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের উপযুক্ত ব্যবস্থা ও কার্যক্রম চালু করা।
১৩. বাজারের ওপর সিন্ডিকেট ও মুনাফা-শিকারি লুটেরাদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ খর্ব করা। 'অবাধ খোলাবাজার অর্থনীতির' দর্শন ও 'মার্কেট ফান্ডামেন্টালিজম'-এর নীতি থেকে বের হয়ে আসা।
মন্তব্য করুন