সিরিয়ায় গুম ইস্যুতে নিরপেক্ষ বডি গঠন করার প্রস্তাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের ভোট দানে বিরত থাকাকে মানবাধিকার নীতির পরিপন্থি বলে মনে করে বিএনপি। দলটির দাবি, ভোট দানে এই বিরত থাকা প্রমাণ করে- বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে গুরুতর অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উঠেছে, তা মিথ্যা নয়। সোমবার (৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে নেতারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।
বুধবার (৫ জুলাই) দুপুরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সিরিয়ায় গুম বা নিখোঁজ ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের চূড়ান্ত পরিণতি কী হয়েছে- তা জানতে একটি নিরপেক্ষ মেকানিজম বা বডি গঠন করার প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাবে সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকে। প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে পাস হয়। বাংলাদেশের এই ভোটদানে বিরত থাকা মানবাধিকার নীতির পরিপন্থি। জাতিসংঘে মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হলেও এই বিষয়ে ভোটদানে বিরত থাকা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে গুরুতর অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উঠেছে তা মিথ্যা নয়। স্থায়ী কমিটির সভায় এই সরকারের সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
এ ছাড়া সভায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঈদুল আজহা পালনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে এমনকি ঈদুল আজহার দিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা ও দলীয় কার্যালয় ভাংচুরের অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, গত ১৯ মে থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ২১৫টি মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে ৯ হাজার ৮শ নেতা-কর্মীকে। মোট গ্রেপ্তার হয়েছে ৮৩৬ জন। স্থায়ী কমিটির সভায় গভীর শঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি তথা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হীন উদ্দেশ্যে এই সরকারের এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, আহত ও হত্যা করা হচ্ছে।
সভা থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী লুৎফর জামান বাবর, প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, বিএনপি নেতা মিয়া নুরুদ্দিন অপু, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীন, ইউসুব বিন জলিল, আলী আকবর চুন্নু, আজিজুর রহমান মুছাব্বির ও সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ গ্রেপ্তারকৃত সব নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানানো হয়।
সভায় সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের যে সংশোধনী আনা হয়েছে- তাকে সম্পূর্ণ গণবিরোধী এবং সুশাসনবিরোধী বলে অভিহিত করা হয়। সভা মনে করে, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় নৈরাজ্য চালিয়ে ব্যাংকিং খাতকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে সরকার দুর্নীতির লক্ষ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপির জন্য কোনোরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাদের সব ধরনের সুবিধা দিয়েই চলেছে। পুনঃতপশিলকৃত ঋণ, অবলোপন করা ঋণ, অর্থঋণ আদালতে আটকে থাকা বিপুল পরিমাণ অংকের ঋণ বিশেষ বিবেচনায় নবায়ন করাসহ আরও অনেক ঋণ যেগুলো খেলাপিযোগ্য সেগুলো খেলাপি ঋণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে না। সভা অবিলম্বে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে যে আইন করা হয়েছে তা বাতিলের দাবি জানায়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।
মন্তব্য করুন