কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:২২ পিএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
কাদের-চুন্নুকে জাপার পরাজিত নেতারা

আমাদের জন্য যে টাকা এলো সেটা কোথায় গেল?

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে উদ্দেশ্য করে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন হলে এক মতবিনিময় সভায় বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা। ছবি : কালবেলা
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে উদ্দেশ্য করে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন হলে এক মতবিনিময় সভায় বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা। ছবি : কালবেলা

জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে বাটপার ও ষড়যন্ত্রকারী উল্লেখ দলের পরাজিত প্রার্থীরা বলেছেন, নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে করে সমঝোতা করেছেন। সেখানে নিজের আসন ঠিক রেখে দলের সিনিয়র নেতাদের বাদ দিয়েছেন। নির্বাচনের সময় তিনি পার্টির প্রার্থীদের ফোন ধরেন না।

এই ষড়যন্ত্রকারীকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ‘নির্বাচন এলে আমাদের মাথা বিক্রি করেন, আর মাথা বিক্রি করবেন না। সংসার, দোকানপাট বিক্রি করে নির্বাচন করেছি, নিঃস্ব হয়ে গেছি। নৌকা-স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হামলার মুখে নির্বাচনী মাঠে ছিলাম। কথা দিয়েও আমাদের একটা টাকা দিলেন না। চেয়ারম্যান মহাসচিব একটিবার ফোন ধরলেন না। আপনাদের সহযোগিতা তো চাইনি, কিন্তু আমাদের জন্য যে টাকা এলো সেটা কোথায় গেল, আপনাদের জবাব দিতে হবে।’

রোববার (১৪ জানুয়ারি) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে উদ্দেশ্য করে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন হলে এক মতবিনিময় সভায় বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা এসব কথা বলেন।

নির্বাচনে ভরাডুবি, দলীয় ও নির্বাচনী ফান্ড কুক্ষিগত করে রাখা, শেরিফা কাদের এর আসনের বিনিময়ে সিনিয়র নেতাদের বাদ দেওয়া, নির্বাচনে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন। এ ধারাবাহিকতায় প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। চিঠি ও প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ কর্মসূচি ভেস্তে দিতে দলীয় চেয়ারম্যান ও মহাসচিব চেষ্টা করলেও প্রার্থী ও তৃণমূলের নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে দুপুরের মধ্যে কাকরাইলের সভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৭০ এর বেশি প্রার্থী উপস্থিত হন। সভাপতিত্ব করেন দলের কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা-৪ থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তর সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাবেক এমপি ইয়াহয়া চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, আমানত হোসেন খান, যুগ্ম মহাসচিব আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, ফখরুল আহসান শাহজাদা, আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, হাসান ইফতেখার, মিজানুর রহমান মিরু, সাহিন আরা চৌধুরী রিমা, সুজন দে, শাহনাজ পারভিন প্রমুখ।

তৃণমূল প্রার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুন্সীগঞ্জ-৩ এর আব্দুল বাতেন, সিরাজগঞ্জ-৫ এর ফজলুল হক নুরু, নোয়াখালী-৩ এর ফজলে এলাহী সোহাগ, সিরাজগঞ্জ-৬ এর মুখতার হোসেন, সিরাজগঞ্জ-১ এর জহিরুল ইসলাম, গাজীপুর-৪ এর শামসুদ্দিন খান, ভৈরবের নুরুল কাদের সোহেল প্রমুখ।

চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে উদ্দেশ্য করে সাবেক এমপি ও সিলেট এর প্রার্থী ইয়াহয়া চৌধুরী বলেন, আপনি গণতন্ত্র শিখিয়েছেন, আপনার মধ্যে গণতন্ত্র নেই। আপনি স্ত্রীর জন্য ফিরোজ, বাবলা, খোকা, পীর ফজলু, আতিক, ভাসানিসহ নয়টি সিট কোরবানি দিয়েছেন। সমঝোতার আসনের জন্য চেয়ারম্যান নিজের স্ত্রী, নাতি আর মেয়ের ভাসুরের জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছেন।

তিনি বলেন, আপনার স্ত্রী শুধু আপনাকে রান্না করে ভাত খাওয়ান, দলে তার কী অবদান বলেন। আমাদের টাকা আপনারা ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন। আপনাদের জবাব দিতে হবে।

নোয়াখালীর ফজলে এলাহী সোহাগ বলেন, চেয়ারম্যান আপনি হাজির নাজির করে ওয়াদা দিয়েছিলেন, এককভাবে নির্বাচন করবেন, নির্বাচনে আমাদের পাশে থাকবেন, কিন্তু আপনি কোনো কথা রাখেননি। আমাদের পথে নামিয়ে দিয়েছেন। আপনি চেয়ারম্যান হওয়ার আগে নীতিকথা বলতেন, চেয়ারম্যান হওয়ার পর পরিবর্তন হয়ে গেছেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য কেরানির মতো ফাইল নিয়ে আপনার পেছনে ঘুরেন। তিনি দলের প্রেসিডিয়াম কী করে হয়।

সিরাজগঞ্জের প্রার্থী ফজলুল হক নুরু বলেছেন, আমাকে আজকের মিটিংয়ে আসতে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি এসেছি, দুঃখ কষ্টের কথা বলতে। আমাকে বহিষ্কার করবেন, করেন। আগে বাবলা, খোকাদের করেন। তিনি অভিযোগ করেন, আগেও দুই লাখ টাকার বিনিময়ে আ.লীগের প্রার্থীকে এনে লাঙল দেওয়া হয়। মনোনয়ন বাণিজ্য করলেন। দলকে এভাবে শেষ করে দেবেন না।

সিরাজগঞ্জের মুখতার হোসেন বলেন, রক্ত মাংস দোকানপাট বিক্রি করে নির্বাচন করেছি। স্বতন্ত্র ও নৌকার লোকদের হামলার মুখে জীবন যায়, কিন্তু দলের কোনো সহযোগিতা পাইলাম না। একটু দেখা পর্যন্ত দিলেন না। তারা আমাদের বরাদ্দকৃত টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। তারা ফোন ধরেনি কারণ তারা টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ভৈরবের নুরুল কাদের সোহেল বলেন, আমরা সবকিছু দিয়ে নির্বাচন করেছি। একটু খবর নেয়নি, দশটা টাকা দেননি। আর কত মাথা বিক্রি করবেন। নির্বাচন আসলে আর মাথা বিক্রি করবেন না।

মুন্সীগঞ্জের আব্দুল হামিদ খান ভাসানি বলেন, আমার সমঝোতার আসন বহিরাগতকে দিয়েছেন। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব চার আন্ডা (ডিম) বেষ্ঠিত হয়ে পড়েছেন। এই আন্ডামুক্ত না হলে দল ধ্বংস হয়ে যাবে।

শেরিফা কাদেরের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাপার নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহিনা সুলতানা লিমা বলেন, দলে শেরিফা কাদেরের ভূমিকা কি? নির্বাচনের আগে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়েছে। নির্বাচনে তার আসন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করা হলো।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভুয়া সনদপত্রে নিয়োগ, স্ত্রীসহ সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত ছাড়া বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার : বিএনপি

ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে অর্থনীতি স্থবির হবে না : অর্থ উপদেষ্টা

ইকবাল খন্দকারের উপস্থাপনায় ‘ঈদের ছবি’

জাতীয় চার নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির বিভ্রান্তি নিয়ে প্রেস সচিবের স্ট্যাটাস 

এবার অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার কামাল মজুমদার 

শিশুকে ধর্ষণ-হত্যা, আ.লীগ নেত্রীর বাড়িতে মিলল মরদেহ 

শাকিব-নিশোর কাঁধে কাঁধ, বিস্ফোরক মন্তব্য জয়ের

মিডফিল্ড সংকটে যেমন হতে পারে আর্জেন্টিনা একাদশ

‘প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপই ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা’

১০

মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের ভুয়া খবরে বিভ্রান্তি

১১

পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি, আরও এক ইউটিউবার গ্রেপ্তার

১২

যোনেক্সের ‘হয়তো’

১৩

ঘরে বঁটির কোপ খেয়ে রাস্তায় গিয়ে বললেন, ‘আমাকে বাঁচাও’

১৪

১৮ দিন এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

১৫

ঢাকা ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ

১৬

বাজপাখির দখলে স্কুলমাঠ

১৭

৫ লাখ টাকা ঘুষ চেয়ে বরখাস্ত সেই এসআই

১৮

উয়েফার শাস্তির মুখে বার্সা, কাটা হতে পারে পয়েন্ট!

১৯

শেখ মুজিবসহ জাতীয় ৪ নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের খবর সঠিক নয় : ফারুক-ই-আজম

২০
X