কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:২৬ পিএম
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘ফের জ্বালানির দাম বাড়ানো মানে জনগণকে বিপদে ঠেলে দেওয়া’

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন রুহুল কবির রিজভী। ছবি : কালবেলা
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন রুহুল কবির রিজভী। ছবি : কালবেলা

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আগামী মার্চে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম আবারও বৃদ্ধি করবে সরকার। জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করছে সরকার। গত ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিতেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানরি দাম বাড়ানো হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত হবে অতীব নিষ্ঠুর। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি হলে এর চেইন রিঅ্যাকশনে জনসাধারণের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। কৃষি শিল্প, কলকারখানা গভীর সংকটে পড়বে। এমনিতেই বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম হু-হু করে বাড়ছে। মানুষ তার প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। এর ওপরে এই দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ওপর চরম আঘাত আনবে।

তিনি বলেন, মধ্যম ও নিম্নআয়ের মানুষ এমনিতেই কঠিন কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছে। দেশে ৮০ শতাংশ মানুষের আয় বাড়েনি। অনাহারে-অর্ধাহারে কোনোরকম জীবন কাটাচ্ছে। তার ওপর সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে জনগণকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে।

রিজভী বলেন, সামনে রমজান মাস, তার আগেই এই দাম বৃদ্ধি হবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো’। উন্নয়নের নামে দেশ-বিদেশ থেকে ব্যাপকহারে ঋণ নিয়ে জনগণের ওপর বিপুল পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে ঋণের বোঝা। সরকারের হরিলুটের আর্থিক নীতির কারণে দেশের রাজকোষ প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছে। এখন ডলার সংকটের কারণে কয়লা উৎপাদনের খরচ বাড়ার কথা বলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি সরকারের একটি অমানবিক খেলা বলে জনগণ মনে করে।

তিনি বলেন, জনগণের প্রশ্ন, ডলারের রিজার্ভ গেল কোথায়? উন্নয়নের ফানুস দেখিয়ে ডলার কারা আত্মসাৎ করেছে, কারা বিদেশে সম্পদ পাচার করেছে? অর্থ পাচার করেছে? বিশাল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে তা জনগণ জানে। এখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দাম বৃদ্ধি করা বিভিন্ন কায়দায় জনগণের রক্ত চুষে নেওয়ার আরেকটি পৈশাচিক পন্থা। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির উদ্যোগে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

রিজভী আরও বলেন, গতকাল ছিল মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ওই দিনটি জাতির এক মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল দিন। এই দিনটি আমাদের ভাষার অধিকার তথা মানুষের সহজাত মৌলিক মানবাধিকার আদায়ের এক মহিমান্বিত দিন। আগ্রাসী আধ্যিপত্যবাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে স্বজাতির রুখে দাঁড়ানোর দিন। শেখ হাসিনা গতকাল বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধির জন্য লম্বা-চওড়া বক্তৃতা দিয়েছেন। বর্তমান দখলদার শাষকগোষ্ঠী বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য অন্তঃপ্রাণ দেখালেও বাস্তবে দেশকে পরিণত করা হচ্ছে ভিনদেশি ভাষা ও সংস্কৃতির পরিচর্যা কেন্দ্র হিসেবে।

তিনি বলেন, আত্মনির্ভরশীলতার স্থলে পরনির্ভরশীলতাকে করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় নীতি। এখন ভারত থেকে কচুরমুখীও আমদানি করতে হয়। প্রকাশনা শিল্পকে ধ্বংস করে বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক পর্যন্ত এখন ছেপে আসে ভারত থেকে। পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত অনেক প্রবন্ধ কবিতায় বানান ভুলে ভর্তি। বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বাংলা ভাষার চর্চাকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য নানা কায়দায় পার্শ্ববর্তী দেশের রাষ্ট্রভাষার চর্চাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে নিরন্তরভাবে। নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতির বদলে ব্যাপকভাবে ভিনদেশি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে তাদের গল্প, কবিতা ও কার্টুনের বইয়ের পাশাপাশি সিনেমা ও নাটকের ব্যাপক আমদানি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই সরকার বাংলাদেশের বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে অগ্রাহ্য করে পাঠ্যপুস্তকে ভিনদেশি চেতনা ঢোকানো হয়েছে। কোমলমতি শিশুদের মনে জাতীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশের কবি সাহিত্যিকদের দেশাত্মকবোধমূলক যেসব গল্প, কবিতা এবং বরেণ্য জাতীয় নেতাদের জীবনী পাঠ্যপুস্তক থেকে ক্রমান্বয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে, দলীয় এবং ভিনদেশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রভাবে। ইংরেজি ও হিন্দির মিশ্রণে বিকৃত বাংলা ভাষার চর্চায় এবং প্রযুক্তির বিকৃত ব্যবহার ও চর্চার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মৌলিক ভাষা ও সাংস্কৃতিক চেতনা।

রিজভী বলেন, শিক্ষানীতির কোনো মৌলিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। পাসের হার বাড়িয়ে দেওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। শিক্ষার্থী উত্তরপত্রে কিছু লিখুক আর না লিখুক তাকে পাস করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শিক্ষকদের। বলা হয়েছে ফেল করানো যাবে না। অথচ পড়াশোনা করেই পাস করতে হয়। শিশুশ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। একেকবার একেক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে হযবরল করা হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে স্কুলমুখী না করে কোচিং সেন্টার ও গাইড বইমুখী করা হয়েছে। সুতরাং শিক্ষাব্যবস্থায় এহেন অরাজকতায় কখনোই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি ঘটবে না। একটি মেধাহীন জাতি তৈরি করার জন্য সরকারি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সময় বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। এসব ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, আবুল খায়ের ভুইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অভিযানেও থামানো যাচ্ছে না জেলেদের

শহিদুল আলমের ফ্রিডম ফ্লোটিলা জাহাজ আটক করেছে ইসরায়েল

‘সৈনিক লীগের সভাপতি থেকে মুরগির ফার্মের মালিকও টিভির লাইসেন্স পেয়েছে’ 

মাদকসেবীসহ ৩ জনের কারাদণ্ড

নতুন দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন, বিস্ফোরক মন্তব্য নুরের 

আফগানিস্তান-বাংলাদেশ ওয়ানডে লড়াই শুরু আজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মরুর ফল চাষে সাফল্য

সালমানের ফার্ম হাউস নিয়ে যা বললেন রাঘব

ইরানের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ইসরায়েলের বিস্ফোরক দাবি

বদলে গেল আর্জেন্টিনা-পুয়ের্তো রিকো ম্যাচের ভেন্যু

১০

ভাত-ভর্তা প্রিয় বাঙালিদের জন্য ১১ পদের রেসিপি

১১

চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক অবরোধ

১২

অ্যান্টিভেনম দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি সোহেলের

১৩

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য যে উদ্যোগ নিল বিসিবি

১৪

কমলালেবু কাণ্ডে বিতর্কে অক্ষয়

১৫

৮ অক্টোবর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৬

ভারতীয় আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তেই কপাল পুড়ল বাংলাদেশের

১৭

পুকুরে মিলল ভাই-বোনের মরদেহ, মায়ের দাবি হত্যা

১৮

হার্ট ব্লকের ঝুঁকিতে যারা

১৯

দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণে বাধা, ঘুরিয়ে দেওয়া হলো ১৫ ফ্লাইট

২০
X