বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে কথা বলেছেন সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল। সেখানে নিজের ‘গুম’ হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি।
আজ শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির ৩ সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে কাজল বলেন, এই ফ্যাসিবাদ আমার মতো বহু মানুষকে গুম করে ফেলেছে। আমার ভাগ্য ভালো ছিল। এজন্য গুম অবস্থা থেকে ফিরে আসতে পেরেছি।
গুম হওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কাজল বলেন, ‘চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাকে গুম সেন্টার থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়। হাতে ছিল হ্যান্ডকাফ। এই গুম সেন্টারকে কেউ বলছেন আয়নাঘর। কেউ আরও অনেক নাম বলছেন। আমাকে যখন গুম সেন্টার থেকে বের করে বেলা ১২টার দিকে, রোজার দিন, তার দুই দিন আগে, আমি হ্যান্ডকাফ পরে নামাজ পড়ছি। আমি শুধু বলি আল্লাহ আমাকে এ জায়গা থেকে বের করো, অথবা আমার মৃত্যুর ব্যবস্থা করে দাও। এমন সময় আমি সাংঘাতিকভাবে শ্বাস নিচ্ছি। অনেক চাপা শ্বাস। সেসময় আমার গলায় পাড়া দিয়ে ধরে, আমি তাদের বলি ভাই আমি যদি কোনো অন্যায় করি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছি, হয় আমাকে হত্যা করুন, অথবা আমাকে মুক্তি দিন।’
‘দুদিন পরই আমাকে বের করে নেয়। আমি তখন ভাবি হয়তো আমি চিরদিনের জন্য দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছি, অথবা আমার মুক্তি হবে। মাঝরাতে একটি প্রাডো গাড়িতে করে নিয়ে যায় বেনাপোলে। হাতে হাতকড়া, চোখ বাঁধা অবস্থায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। এরপর আমাকে একটি খাদের মধ্যে নামিয়ে দিল। আমি তখন ভেবে নিয়েছি আমাকে ক্রসফায়ার করবে, আমি আল্লাহর নাম ডাকতে থাকি। অবেশেষে আল্লাহ আমার ডাক শুনেছেন। আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে কাজল বলেন, ‘বর্তমান সরকার মানুষের জবান কেড়ে নিয়েছে। সেই জবান আমাদের ছিনিয়ে আনতে হবে। আমরা যারা মনে করি আপস করে সাংবাদিকতা করব, যারা মনে করছি—ফ্ল্যাট, গাড়ি-বাড়ির বিনিময়ে আজকে আমরা সুখে আছি, যারা ১৪ বছর সুখে আছেন, দিন গুনুন, আগামী দিন আপনাদের সুখের দিন নয়, আগামী দিন আপনাদের চরম দুঃসময়ের দিন।’
২০২০ সালের ১০ মার্চ নিখোঁজ হন কাজল। ৩ মে বেনাপোলে তার খোঁজ মেলে। পরে তাকে সেখানেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়। প্রায় ৮ মাস পর জামিনে মুক্তি পান তিনি।
মন্তব্য করুন