মা হারানো মালয়েশিয়ান মেয়েকে নিয়ে বিপাকে এক প্রবাসী বাংলাদেশি। মোহাম্মদ আলাউদ্দিন (৩৯) নামে ঐ প্রবাসী সম্প্রতি তার স্ত্রী'কে হারিয়েছেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর ৭ বছরের একমাত্র অসুস্থ কন্যাকে নিয়ে বিপাকেই পড়েছেন। একই সঙ্গে ২৭ মে শেষ হতে যাচ্ছে তার ভিসার মেয়াদ। চিন্তার ভাঁজ তাই কপালে। মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় পত্রিকা সিনার হারিয়ানে উঠে এসেছে ঐ বাংলাদেশী তরুনের করুন কাহিনি।
স্ত্রীর মৃত্যু, একমাত্র কন্যার জটিল রোগ এবং ভিসা জটিলতা দুর্বিষহ করে তুলেছে আলাউদ্দিন নামে ঐ বাংলাদেশীর। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ার নাগরিক নূর শাইল্লাহ রিভাথি আবদুল্লাহকে বিয়ে করেন আলাউদ্দিন। তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় একমাত্র মেয়ে মালয়েশিয়ান রিতি অনুযায়ি যার নাম রাখেন সিতি আমিনা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন (৭)। কন্যা সন্তান রেখে সম্প্রতি মারা যান রিভাথি আবদুল্লাহ। মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়ের দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে বাবা আলাউদ্দিনের কাঁধে । ফলে তিনি এখন আর কাজে যেতে পারেন না। মেয়ে আমিনা মালয়েশিয়ার নাগরিক হওয়ায় তার নামে সামাজিক কল্যাণ বিভাগ (জেভিএম) থেকে মাসে ৩০০ রিঙ্গিত সহায়তা আসে। সেটা দিয়েই অনেক কষ্টে সংসারের ব্যয়ভার চালিয়ে নিতে হচ্ছে। আলাউদ্দিন জানান, মেয়ে আমিনারও অনেক শারীরিক সমস্যা রয়েছে। সে জরায়ু ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছে। রয়েছে শ্রবণ সমস্যা। এছাড়া তার একটি কিডনিতে সমস্যা এবং ডান হাতে একটু বিকৃতি রয়েছে। এজন্য তার অতিরিক্ত যত্ন নিতে হয়। এর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে আরও বড় একটা সমস্যা যা আলাউদ্দিনের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। আলাউদ্দিন বর্তমানে শুধুমাত্র একটি অস্থায়ী ভিজিট পাস (পিএলএস) নিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন যা আগামী ২৭ মে মেয়াদ শেষ। এরপর তিনি হয়ে যাবেন অবৈধ। আলাউদ্দিন জানান, স্ত্রী মালয়েশিয়ার নাগরিক হওয়ায় তিনি আগেই দীর্ঘমেয়াদী ভিসার জন্য আবেদনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রতারণার শিকার হন। তিনি জানান, ভিসার জন্য এক ব্যক্তির কাছে সাড়ে সাত হাজার রিঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি প্রতারণা করে। ফলে অর্থের অভাবে তিনি আর নতুন করে ভিসার আবেদন করতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে এক চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন আলাউদ্দিন। তার এখন একটাই ভয়, যদি তাকে শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়া ছাড়তে হয়, তাহলে তার ছোট্ট মেয়েটির কী হবে? এখানে তাদের আত্মীয়-স্বজন বলতে তেমন কেউ নেই। স্থানীয় প্রতিবেশী ও কিছু সমাজসেবী অসহায় পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তারা আইনি পরামর্শ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করছেন। স্থানীয় প্রতিবেশীদের পাশাপাশি আলাউদ্দিন মালয়েশিয়া সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তার পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেন ভিসার জটিলতা নিরসন করা হয় এবং মেয়েটিকে তার বাবার কাছে নিরাপদে থাকার সুযোগ দেয়া হয়। একজন প্রতিবেশী বলেন, ‘এই মানুষটি অনেক কষ্টের মধ্যদিয়ে যাচ্ছেন। তার উপর ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে এই ভিসা সংকট। এটা সত্যিই হৃদয়বিদারক। আমরা আশা করছি, কর্তৃপক্ষ মানবিক দিক বিবেচনা করে দ্রুত এর সমাধান করবেন।
মন্তব্য করুন