শুক্রবার, ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১৪ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আশুরায় যেভাবে পতন ঘটেছিল ফেরাউনের

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

ফেরাউন শব্দটি সাধারণত চূড়ান্ত জালেম বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এমন কাউকে পাওয়া দুষ্কর যে এই নাম কখনো শোনেনি। তবে ফেরাউন আসলে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নয়; বরং এটি ছিল প্রাচীন মিসরের রাজা বা শাসকদের উপাধি। তাদের কেউ কেউ ‘ফারাও’ নামেও পরিচিত।

মহান আল্লাহ হজরত মুসা (আ.)-কে নবুয়ত দিয়ে তার সময়কার ফেরাউনের কাছে তাওহিদের (এক আল্লাহর উপাসনা) দাওয়াত দিতে পাঠান। কিন্তু সেই ফেরাউন ছিল চরম অহংকারী ও গোঁয়ার প্রকৃতির। সে নিজেকে মিসরবাসীর প্রভু বলে দাবি করত। পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে হজরত মুসা (আ.)-এর দাওয়াত, ফেরাউনের ঔদ্ধত্য এবং তাদের মধ্যকার সংঘাতের ঘটনা বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

মুসা (আ.)-এর যুগের ফেরাউনের প্রকৃত নাম নিয়ে নানা মত রয়েছে। কেউ বলেন তার নাম ছিল রামেসিস, আবার কেউ বলেন মারনেপতাহ। কারও মতে, তার নাম ছিল ওয়ালিদ ইবনে মাসআব ইবনে রাইয়ান, যিনি প্রায় ৪০০ বছর জীবিত ছিলেন।

পবিত্র তুয়া উপত্যকায় আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসা (আ.)-এর ওপর ওহি নাজিল হয় এবং তাকে নবুয়ত ও অলৌকিক মুজিজা দান করা হয়। তিনি আল্লাহর নির্দেশে ফেরাউনের কাছে গিয়ে সত্যের দাওয়াত দেন। কিন্তু ফেরাউন তার ঔদ্ধত্য থেকে ফিরে আসেনি। বরং নিজেকেই খোদা দাবি করতে থাকে।

মুসা (আ.) যখন বনি ইসরায়েল জাতিকে নিয়ে মিসর ত্যাগ করেন, ফেরাউন তাদের ধ্বংস করতে সেনাবাহিনীসহ তাড়া করে। তখন আল্লাহর হুকুমে লোহিত সাগর দুই ভাগ হয়ে যায় এবং বনি ইসরায়েল নিরাপদে পার হয়ে যায়। ফেরাউন সেই পথেই ধাওয়া করে কিন্তু সাগরের পানি একত্রিত হয়ে তাকে ডুবিয়ে মারে।

পবিত্র কোরআনের সুরা নাজিয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, هَلۡ اَتٰىكَ حَدِیۡثُ مُوۡسٰی - اِذۡ نَادٰىهُ رَبُّهٗ بِالۡوَادِ الۡمُقَدَّسِ طُوًی - اِذۡهَبۡ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ اِنَّهٗ طَغٰی - فَقُلۡ هَلۡ لَّكَ اِلٰۤی اَنۡ تَزَكّٰی - وَ اَهۡدِیَكَ اِلٰی رَبِّكَ فَتَخۡشٰی- فَاَرٰىهُ الۡاٰیَۃَ الۡكُبۡرٰی - فَكَذَّبَ وَ عَصٰی - ثُمَّ اَدۡبَرَ یَسۡعٰی - فَحَشَرَ فَنَادٰی - فَقَالَ اَنَا رَبُّكُمُ الۡاَعۡلٰی - فَاَخَذَهُ اللّٰهُ نَكَالَ الۡاٰخِرَۃِ وَ الۡاُوۡلٰی اِنَّ فِیۡ ذٰلِكَ لَعِبۡرَۃً لِّمَنۡ یَّخۡشٰی

অর্থ : মুসার বৃত্তান্ত আপনার কাছে পৌঁছেছে কি? যখন তার রব তাকে পবিত্র তুয়া উপত্যকায় ডেকে বলেছিলেন, ফেরাউনের কাছে যাও, নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে। তাকে বল, তুমি পবিত্র হতে আগ্রহী কি না? আমি তোমাকে তোমার রবের দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি তাকে ভয় কর। সে (মুসা) তাকে মহা-নিদর্শন দেখাল। কিন্তু সে মিথ্যারোপ করল এবং অমান্য করল এবং আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণে সচেষ্ট হলো। সে সকলকে সমবেত করল এবং সজোরে চিৎকার করে বলল, আমিই তোমাদের সেরা রব। ফলে আল্লাহ তাকে পরকালের ও ইহকালের শাস্তি দিলেন। যে ভয় করে তার জন্যে অবশ্যই এতে শিক্ষা রয়েছে। (সুরা নাজিয়াত: ১৫-২৬)

পবিত্র কোরআনের সুরা ইউনুসে ফেরাউনকে ডুবিয়ে মারার ঘটনা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন, وَ جٰوَزۡنَا بِبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ الۡبَحۡرَ فَاَتۡبَعَهُمۡ فِرۡعَوۡنُ وَ جُنُوۡدُهٗ بَغۡیًا وَّ عَدۡوًا ؕ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَدۡرَكَهُ الۡغَرَقُ ۙ قَالَ اٰمَنۡتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِیۡۤ اٰمَنَتۡ بِهٖ بَنُوۡۤا اِسۡرَآءِیۡلَ وَ اَنَا مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ - آٰلۡـٰٔنَ وَ قَدۡ عَصَیۡتَ قَبۡلُ وَ كُنۡتَ مِنَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ - فَالۡیَوۡمَ نُنَجِّیۡكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُوۡنَ لِمَنۡ خَلۡفَكَ اٰیَۃً ؕ وَ اِنَّ كَثِیۡرًا مِّنَ النَّاسِ عَنۡ اٰیٰتِنَا لَغٰفِلُوۡنَ অর্থ : আমি বনি ইসরাইল বংশকে সাগর পার করে দিলাম আর ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল। যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন (ফেরাউন) বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই যার ওপর ঈমান এনেছে বনি ইসরাইল; আমিও তারই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। (আল্লাহ বললেন) এখন এ কথা বলছ! অথচ তুমি (ডুবতে শুরু করার) পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত নাফরমানি করছিলে এবং পথভ্রষ্টদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলে। আজকের দিনে আমি শুধু তোমার দেহ রক্ষা করব যেন তা পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। নিঃসন্দেহে বহু মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে উদাসীন। (সুরা ইউনুস : ৮৮-৯২)

এই ঘটনাটি ঘটে ১০ মহররম, পবিত্র আশুরার দিনে। হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন দেখেন ইহুদিরা আশুরায় রোজা রাখে। জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, এই দিনে আল্লাহ মুসা (আ.) ও তার জাতিকে ফেরাউন থেকে মুক্ত করেছেন এবং ফেরাউনকে সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছেন। মুসা (আ.) এই উপলক্ষে রোজা রাখতেন।

এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুসার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাদের চেয়ে ঘনিষ্ঠ। তিনি নিজেও আশুরার রোজা পালন করেন এবং মুসলমানদেরও তা রাখতে বলেন। (বুখারি : ৩৩৯৭)

সুন্নাহ অনুযায়ী, আশুরার রোজা একটি আগে বা পরে আরেকটি রোজার সঙ্গে পালন করা উত্তম।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাবেক এমপি বুলবুলের পিএস সিকদার লিটন গ্রেপ্তার

টাকা না পেয়ে ফুপুকে গলাকেটে হত্যা করল ভাতিজা

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে নারীদের জন্য বিশেষ কোটা বাতিল 

আন্তর্জাতিক ফেলোশিপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ছাত্রদলের ঊর্মি

স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের মায়ের মৃত্যুতে প্রেস ক্লাবের শোক

প্রকৌশলীদের মর্যাদা রক্ষায় আইইবি’র ৫ দফা দাবি

পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাই

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের লিগপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত, রিয়াল-বার্সার প্রতিপক্ষ কারা?

সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিওটি ভুয়া

১০

আজীবন থাকা, কাজ ও ব্যবসার সুযোগ দেবে সৌদি, কত টাকা লাগবে

১১

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

১২

এবার যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের 

১৩

ফিফা কোয়ালিফায়ারে শেষবারের মতো নামছেন মেসি, জানালেন নিজেই

১৪

অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে রেখে স্বাস্থ্যকর্মীর টিকটক, অতঃপর...

১৫

গকসু নির্বাচন : রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়ন বিতরণ 

১৬

চট্টগ্রামে হবে আইইসিসি মাল্টিডেস্টিনেশন এডুকেশন এক্সপো 

১৭

চব্বিশের বিজয়ীদের কার্যকলাপে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ : কাদের সিদ্দিকী

১৮

ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে হামলার আশঙ্কা নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৯

প্যানেলে তন্বির জন্য পদ শূন্য রাখলেও একই পদে লড়ছেন বাগছাসের এক নেতা

২০
X