বাংলাদেশি পরিবারব্যবস্থায় বিয়ের সঙ্গে শুধু একজন নারী নয়, যেন পুরো দায়িত্বের পাহাড় এসে পড়ে তার কাঁধে। শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা, ননদ-দেবরের দেখভাল, স্বামীর ঘরের যাবতীয় কাজ—সবই যেন তার স্বাভাবিক ও অপরিহার্য দায়িত্ব। বিশেষ করে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবাযত্নকে অনেক পরিবারে এতটাই অনিবার্য করে তোলা হয়, অনেক জায়গায় কেবল এ কারণেই গৃহবধূ নির্যাতনের অভিযোগ শোনা যায়। প্রশ্ন হলো, ইসলাম কি আসলেই এভাবে দেখে এই দায়িত্বকে?
ইসলামের দৃষ্টিতে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা পুত্রবধূর জন্য একটি নৈতিক দায়িত্ব, কিন্তু সেটা কখনোই বাধ্যতামূলক নয়। বরং এটি স্বামীর নিজ দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। পুত্রবধূ যদি নিজের সদিচ্ছা ও ভালোবাসা থেকে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করেন, তাহলে তা প্রশংসনীয়, এতে রয়েছে সওয়াবও। তবে তাকে এ কাজ করতে বাধ্য করা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। কারণ, হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মা-বাবার সেবা-শুশ্রূষা করা সন্তানের দায়িত্ব—কোনোভাবেই পুত্রবধূর নয়।’ (আল-বাহরুর রায়েক : ৪/১৯৩; কিফায়াতুল মুফতি : ৫/২৩০)
শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমতের প্রয়োজন দেখা দিলে, স্বামী নিজ কর্তব্যে তাদের সেবা-যত্ন করবেন। পুত্রবধূর কর্তব্য হলো নৈতিকতাবোধ ও দায়বদ্ধতা রক্ষা করা। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের কাছেই পরিষ্কার থাকতে হবে, কার দায়িত্ব কতটুকু এবং নৈতিকতার চাহিদা কী? নৈতিকতার ভিত্তিতে পুত্রবধূ যা করবে— তা মর্যাদার চোখে দেখতে হবে। তার আন্তরিকতা ও সহযোগিতাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে নিতে হবে।
ইসলাম ও নৈতিকতাবোধের দাবি হচ্ছে যে, স্ত্রী স্বামীর বাবা-মাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান দেবেন। তাদের প্রতি সমীহের চোখে দেখবেন। মনেপ্রাণে তাদের ভালোবাসবেন। তাদের সেবা-যত্নকে নিজের জন্য পরম সৌভাগ্য মনে করবেন। অনুরূপ শ্বশুর-শাশুড়িরও কর্তব্য হলো, পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদর ও মমতায় আবদ্ধ করা। তার সুখ, আনন্দ ও সুবিধার প্রতি সবিশেষ মনোযোগ দেওয়া।
প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, একজন মুসলিমের বিবাহের উদ্দেশ্য হবে চরিত্রের হেফাজত। তার ভাষ্য, যারা কেবল মা-বাবার সেবার উদ্দেশ্যে বিয়ে করেন, তাদের উদ্দেশ্য বৈধ নয়। সুতরাং শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা স্ত্রীর জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে যেসব স্বামী কাজের জন্য বাহিরে থাকেন এবং বাবা-মায়ের সেবাযত্ন করতে পারেন না, তাদের পক্ষ থেকে স্ত্রীর জন্য তার শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করা ইমানি দায়িত্ব। মুমিনের পরিচয়।
মন্তব্য করুন