বিয়ে মানুষকে শালীন, পবিত্র ও পরিপূর্ণ জীবনযাপনের পথে নিয়ে যায়। মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই বিয়ের বিধান চলে আসছে। ইসলামে বিয়েকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় একটি ইবাদত হিসেবে বলা হয়েছে। যে ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে এবং বিয়ের সামর্থ্য রাখে, তার জন্য দেরি না করে বিয়ে করা ইমানি দায়িত্ব।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘হে যুবসমাজ, তোমাদের মধ্যে যার বিয়ের সামর্থ্য আছে, তার বিয়ে করা উচিত। কেননা বিয়ে চোখকে নিচু রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা যৌবনের খায়েশ কমিয়ে দেয়।’(বোখারি : ৫০৬৫, মুসলিম : ১৪০০)
এই হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, বিয়ে করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো তারিখ, দিন বা মাস ঠিক করে দেওয়া হয়নি; বরং সামর্থ্য হলে দেরি না করে বিয়ে করে নেওয়াই উত্তম।
তবে, বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলামের কিছু শর্ত ও নীতিমালা রয়েছে, যা মানা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের সমাজে অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়ের অনুমতি ছাড়াই জোরপূর্বক তাদের বিয়ে দিয়ে দেন। অথচ বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতামত বা সম্মতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।
চলুন, জেনে নিই সন্তানকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া জায়েজ কি না—
শরিয়তের ভাষ্য
ইসলামে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য শর্ত হলো, পাত্র ও পাত্রী উভয়ের প্রস্তাব (ইজাব) এবং গ্রহণ (কবুল) প্রকাশ করা। যদি পাত্র বা পাত্রী মন থেকে বিয়ে করতে রাজি না থাকেন, কিন্তু বাহ্যিকভাবে ইজাব-কবুল প্রকাশ করেন, তাহলে সেটি বিয়ের বৈধতা প্রদান করে। ইসলামে বিধান প্রযোজ্য হয় বাহ্যিক অবস্থার ওপর। সুতরাং, বিয়ের মজলিসে সমস্ত শর্ত পূরণ করে ইজাব-কবুল হলে বিয়ে বৈধ বলে গণ্য হবে। এমন অবস্থায় যৌক্তিক কারণ ছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক প্রদানকে ইসলাম নিরুৎসাহিত করে। তবে ইসলামে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নারীর মতামত ছাড়া তাকে বিয়ে দেওয়া বৈধ নয়। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা। যে নারীকে বিয়ে দেওয়া হবে, সে কুমারী হোক বা তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা, তার মতামত নেওয়া অবশ্যই জরুরি। অভিভাবক বা পরিবারের কেউ নারীর মতামত ছাড়া তাকে জোরপূর্বক বিয়ে দিতে পারে না। কারণ, নবীজি (সা.) এটি কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন।
হাদিসের ভাষ্য
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, আগে বিয়ে হয়েছে এমন নারীর মতামত ছাড়া তার বিয়ে দেওয়া যাবে না। আর কুমারী নারীর অনুমতি ব্যতীতও তাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না। সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, কুমারীর অনুমতি কীভাবে বোঝা যাবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিলেন, তার নীরবতাই তার অনুমতির প্রকাশ। (বোখারি : ৫১৩৬)
ফুক্বাহায়ে কেরামে ভাষ্য
যদি কোনো নারীকে তার মতামত বা সম্মতি ছাড়াই বিয়ে দেওয়া হয়, তবে সে নারী চাইলেই বিয়ের আকদ বা চুক্তি বাতিল করার অধিকার রাখেন। ইসলামে এ বিষয়ে নারীদের এই অধিকার স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। নারীর ইচ্ছা ও অধিকারকে মর্যাদা দেওয়া ইসলামের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
শায়খ আহমাদুল্লাহর ভাষ্য
প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ছেলে বা মেয়ের সম্মতি ছাড়া জোরপূর্বক তাদের বিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ ইসলাম দেয়নি। অবশ্যই তাদের মতামত নিতে হবে।
পাত্র-পাত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি যদি মনে করেন আপনার বাবা-মা পয়সা দেখে লোভী হচ্ছেন, তারা দ্বীনদার বুঝে না—তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনি খুঁটি ধরতে পারেন যে, আব্বা-আম্মা আপনারা যাকে চাচ্ছেন আমি তার সঙ্গে বিয়ে করতে রাজি নই। এই অধিকার আপনাকে ইসলাম দিয়েছে। কিন্তু বাবা-মায়ের সঙ্গে বেয়াদবি করা যাবে না।
মন্তব্য করুন