ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এখানে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজেরই সুনির্দিষ্ট শিক্ষা ও নির্দেশনা রয়েছে। পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলা ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এ জন্যই নবী করিম (সা.) আমাদের দেহ-মনকে পরিচ্ছন্ন রাখার নানা উপায় শিখিয়ে দিয়েছেন। যেমন : দাড়ি-গোঁফ পরিপাটি রাখা, শরীরের লোম ছাঁটা, নিয়মিত গোসল করা, দাঁত মেজে পরিষ্কার রাখা এবং নখ কাটা। এর মধ্যে নখ কাটা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য দায়েমি সুন্নত হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। সপ্তাহে একদিন নখ কাটাকে সুন্নত হিসেবে মানা হয়। (শরহুস্ সুন্নাহ : ৩০৯০ ও ৩০৯১)
তবে, আমাদের সমাজে নখ কাটাকে ঘিরে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। অনেকে বলেন, নখ কাটলে নাকি অজু ভেঙে যায়। আবার কেউ কেউ মনে করেন, নখ কাটার একটি নির্দিষ্ট ক্রম আছে, যা নাকি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। অথচ বাস্তবে দেখা যায়, এসব ধারণার বেশিভাগেরই কোনো প্রামাণ্য ভিত্তি নেই। নখ কাটার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ক্রম অনুসরণের যে নিয়ম প্রচলিত আছে, তা আসলে আদব হিসেবে কিছু ফকিহ ও বুজুর্গরা উল্লেখ করেছেন। তবে এটিকে হাদিস বা সাহাবায়ে কেরামের আমল দিয়ে প্রমাণ করা যায় না।
ফকিহরা বলেন, নখ কাটার আদব হলো, হাত দুটো মুনাজাতের মতো করে ধরে ডান হাতের শাহাদাত আঙুল থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে গিয়ে শেষ করা। এরপর সর্বশেষে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কাটা (ফাতওয়ায়ে শামি ৬/৪০৬; ফাতওয়ায়ে আলমগিরি ৫/৩৫৮)। এটি একটি সুন্দর নিয়ম হলেও একে বাধ্যতামূলক বলা যাবে না।
নখ কাটলে কি অজু ভেঙে যায়?
অনেকের মনে এই প্রশ্ন জাগে, আবার কেউ কেউ অজুর পর নখ কাটতে ভয় পান। অথচ শরীয়তের আলোকে এর সুস্পষ্ট উত্তর হলো, নখ কাটলে অজু ভাঙে না।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর জামিয়া ইকরার ফাজিল মুফতি ইয়াহইয়া শহিদ বলেন, নখ কাটা বা চুল ছাঁটার মধ্যে অজু ভাঙার কোনো কারণ নেই। অজুর ভেতরে যেসব বিষয়কে অজু নষ্টের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, নখ কাটা তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।
ইয়াহইয়া শহিদ জানান, হাসান বসরিকে (রহ.) একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেউ যদি অজু করার পর চুল বা নখ কাটে, তাহলে কি তার অজু ভেঙে যাবে? উত্তরে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, এ সব কারণে অজুর কোনো ক্ষতি হয় না। নতুন করে অজু করতে হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৫৭৬)।
অতএব, নখ কাটার পর অজু ভেঙে যায়— এ কথা সঠিক নয়। অজু করার পর নখ কাটলে নতুন করে অজু করতে হবে না। ইসলাম আমাদের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে দিয়েছে, তাই এখানে কুসংস্কার বা অযথা ভয়ের কোনো স্থান নেই।
অজু ভঙ্গের প্রধান কারণগুলো
১. প্রাকৃতিক পথ দিয়ে নির্গত হওয়া : পায়খানা, প্রস্রাব, পায়ুপথ দিয়ে বায়ু বা এমন কিছু নির্গত হওয়া। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কারও নামাজ হবে না, যদি তার ‘হাদাস’ হয় আর অজু না করে।’ (সহিহ মুসলিম : ২২৫)
আরও পড়ুন : অজু শেষে যে দোয়া পড়লে জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে যায়
আরও পড়ুন : কবর জিয়ারত করলে বা সালাম দিলে মৃত ব্যক্তি কি টের পান
‘হাদাস’ মানে পায়খানা, প্রস্রাব, পায়ুপথ দিয়ে বায়ু বা এমন কিছু নির্গত হওয়া।
২. ক্ষতস্থান থেকে বের হওয়া তরল : শরীর কোথাও থেকে রক্ত, পুঁজ বা হলুদ পানি এতটুকু যদি বের হয়, যা গড়িয়ে পড়ার মতো, তাহলে তা অজু ভঙ্গ করে।
৩. গভীর ঘুম : গভীর ঘুমে পড়ে গেলে অজু ভেঙে যায়; কারণ, এ সময় শরীরের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তবে বসে বা হালকা ঘুমে অজু ভাঙে না। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘চোখ জাগ্রত থাকলে পায়ু বন্ধ থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৬,৮৯৩)
৪. সংজ্ঞা হারানো : মূর্ছা যাওয়া, মদ্যপান বা অন্য কারণে সংজ্ঞা হারালে অজু ভেঙে যায়।
৫. জননাঙ্গ স্পর্শ : পুরুষ বা নারী সরাসরি যৌনাঙ্গ দিয়ে অন্যের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করলে অজু ভাঙে। (সুনানে আবু দাউদ : ১৮১)
৬. বমি : প্রবল বেগে মুখ ভরে বমি হলে অজু ভেঙে যায়।
৭. নামাজে হাসা : নামাজে জোরে হাসলে অজু ও নামাজ দুটিই ভেঙে যায়। তবে মৃদু হাসলে শুধু নামাজ নষ্ট হয়।
মন্তব্য করুন