‘নারীর প্রতি সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর কর, নারী শ্রমিকদের কর্মে যুক্ত থাকার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত কর’ এই প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয়েছে বর্ণাঢ্য র্যালি ও নারীশ্রমিক জমায়েত। ‘কর্মজীবী নারী’ ও নারীশ্রমিক কণ্ঠে'র যৌথ আয়োজনে গত ০৮ মার্চ, (শুক্রবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মজীবী নারী'র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, নারীশ্রমিক কণ্ঠে'র সমন্বয়ক ও সাবেক এমপি শিরীন আখতারের সভাপতিত্বে উক্ত আয়োজনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক নইমুল আহসান জুয়েল, জাতীয় গার্হস্থ্য নারীশ্রমিক ইউনিয়ন এর উপদেষ্টা আবুল হোসাইন, বিল্স এর ডিরেক্টর কোহিনুর মাহমুদ, কর্মজীবী নারী'র সহ-সভাপতি উম্মে হাসান ঝলমল, জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও নারীশ্রমিকরা।
পোশাক শ্রমিক মাহফুজা আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, নারীশ্রমিকেরা দয়ার পাত্র নয়। আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ভালো চাই। নারী-পুরুষ সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
নইমুল আহসান জুয়েল বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ নারী হলেও নারীদের কোনো সামাজিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নেই। নারীদের সম অধিকারের জন্য আমরা লড়াই করছি। এজন্য নারীদেরও জেগে উঠতে হবে, উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি হতে হবে, স্বাবলম্বী হতে হবে। নারীরাই এ দেশের অর্থনীতির চাকাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নারীর অধিকার আদায়ে আইএলও কনভেনশন ১৮৯ এবং ১৯০ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
কোহিনুর মাহমুদ নারীদের সামাজিক সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও মাতৃত্বকালীন ছুটি ও সুরক্ষার বিষয়গুলো জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। এছাড়া ঘরে-বাইরে ও কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি অশালীন আচরণ বন্ধ করতে সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান।
শ্রমিক নেত্রী কামরুন নাহার বলেন, প্রতিদিনই নারীর প্রতি মর্যাদা ও সম্মান চাই। রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীর অবদান অনস্বীকার্য। তাই নারীর শ্রমের মর্যাদা দিতে হবে।
সভপতির বক্তব্যে শিরীন আখতার বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর যে লড়াই সেটা চালিয়ে যেতে হবে। নারীদের নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জন করতে হবে। শক্ত হাতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সারা পৃথিবীতে পুরুষের পাশাপশি নারীকে এগিয়ে নিতে নারীর প্রতি বিনিয়োগ করতে হবে, সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। নারীকে প্রশিক্ষিত করে দক্ষ করতে হবে ও উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে বিনিয়োগ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকারী সিন্ডিকেটকে ভেঙে দিতে হবে।
এই কর্মসূচি থেকে কর্মজীবী নারী'র দাবিসমূহ:
১. নারী-পুরুষ সমকাজে সমমজুরি, নিয়োগপত্র, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করাসহ নারী শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষায় শ্রম আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে ২. গৃহশ্রমিকসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা ও তাদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি প্রণোদনা, রেশনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে ৩. সকল শ্রমিকের জন্য একটি জাতীয় মজুরি নির্ধারণ করতে হবে ৪. শ্রমজীবী-কর্মজীবী নারী সকলের জন্য স্ববেতনে ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে ৫. নারীর জন্য নির্যাতনমুক্ত ও নিরাপদ পরিবার এবং কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলতে হবে ৬. নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধ করতে হবে ৭. কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে আইন প্রণয়ন করতে হবে, আইএলও কনভেনশন-১৯০ অনুসমর্থন করতে হবে ৮. যৌন হয়রানি প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার নিষ্পত্তি করা ও বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করতে হবে। ৯. নারীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সকল ক্ষেত্রে নারীর জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
মন্তব্য করুন